কেউ পাশে না থাকলেও আমরা আছি, সাকিবদের নাজমুল হাসান
ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলকাতা থেকে || রাইজিংবিডি.কম
সাকিব আল হাসানের ব্যাট ইডেনেও হাসলো না। হাসেনি মুম্বাইতেও। টানা ব্যর্থতা জেঁকে বসেছে তার কাঁধে। দলের সঙ্গে সাকিবের নিজের পারফরম্যান্সও মলিন। তাইতো দর্শকদের ‘ভুয়া-ভুয়া’ দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ককে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধ্রুবতারার জন্য বিরাট কিছু।
ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নাম লিখে কত অর্জনে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন সাকিব। কিন্তু এখন পারফর্ম করতে না পারায় দুয়োধ্বনিও শুনতে হচ্ছে তাকে। শুধু সাকিব নয়, গোটা দলকেই এখন এই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে মাত্র এক জয়। পাঁচটাই বাজেভাবে হার। মাঠের ক্রিকেটে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতাই করতে পারছে না। যার কারণে গোটা দলকেই মনে হচ্ছে খাপছাড়া।
কোনো রসায়ন নেই ব্যাটসম্যানদের ভেতরে। বোলারদের নেই তেজ। ফিল্ডিংয়ে নড়বড়ে। এমন গা-ছাড়া মনোভাবে অন্তত বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতা যায় না তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সবাই। তাইতো শেষ তিন ম্যাচকে ঘিরে বেশ সিরিয়াস তারা। ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ভালো কিছুর আশায় আছেন। টিম হোটেল তাজ বেঙ্গলে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নাজমুল হাসান এ কথা বলেছেন।
‘আমার কাছে একটা সময় মনে হয়েছে, ওরা হয়তো মানসিকভাবে অনেক ডাউন। এখানটায় খুব একটা কিছু বলার বা করার আমাদের নেই। যেহেতু একটা বিশ্বকাপ চলছে। এখানে এসে আমরা ইচ্ছা করলেও কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলেও পারবো না। এটা হয়তো আপনারা সবাই বোঝেন। তাই আমাদের কিছু করার নেই।’
‘আমাদের সামনে তিনটা ম্যাচ আছে। এই তিনটা ম্যাচ কিভাবে আমরা ভালো খেলতে পারি এটা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই এবং এটা করতে গেলে দুটা জিনিস লাগবে। ওদেরকে সাহস ফিরিয়ে দেওয়া। ওদের মধ্যে সাহসটা জাগানো। ওদের মধ্যে বিশ্বাসটা জাগানো যে ওরা পারবে এবং ওরা পারে। এই সাহসটা যদি ওদের নিজেদের মধ্যে না আসে তাহলে কিন্তু ওরা সব সময় একটু দ্বিধায় থাকবে, বিভ্রান্তিতে থাকবে। শট নির্বাচন কিংবা মারতে গিয়ে… এটা হতে পারে। কাজেই ওটাই করার চেষ্টা করছি।’
‘ওরা সকলে বলছে, ওরা ইউনাইটেড। তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। রান পাচ্ছে না ওরা নিজেরাও অবাক। আমাদের সারাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে এতো ভালোবাসে, ক্রিকেটের প্রতি তাদের যে প্যাশন…তারা যে কতটা কষ্ট পেয়েছে এটা চিন্তা করে ক্রিকেটারদের আরও বেশি খারাপ লাগছে। ওরাই তো সুপারস্টার ছিল সব সময়। এক-দুই দিনের না, এতো বছরের ক্যারিয়ার ওদের। ওরা রান পাচ্ছে না, ওরা নিজেরাও তা মেনে নিতে পারছে না।’
‘এটাই ওদের বললাম। মানুষ এখন খারাপ বলবে। না বলার কোনো কারণই নেই। মানুষ ক্রিকেটকে ভালোভাসে বলেই তো এ ধরণের খেলা খেললে বা হারলে খারাপ বলবেই। মানুষজন বোর্ডকে বলবে, কোচিং স্টাফদের বলবে, খেলোয়াড়দের বলবে। এটা স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আমরা একমত।’
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, যেহেতু টুর্নামেন্ট চলছে। আমরা যে তিনটা ম্যাচে আহামরি কিছু করে ফেলব সেটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। এটা রিয়েলিটি। এটা বুঝতে হবে। তবে আমরা সক্ষম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এখনও সম্ভব। তাদের ভালো ক্রিকেট খেলা। হার-জিত বড় কথা না। ভালো ক্রিকেট খেলা।’
‘আমাদের ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না। ওদের এটা বলছি, তোমাদের ফাইট ব্যাক করা উচিত। ওরা কি চায় বলুক। যখন যা লাগে আমরা আছি। ওদের যেটা প্রয়োজন আমরা করতে রাজি আছি। ওদের কোনো সাজেশন থাকলে আমরা নিতে রাজি আছি। ওরা কথা দিয়েছে ওরা বসবে। ওরা বলেছে তেমন কিছু চাওয়া বা পাওয়ার কিছু নেই। কেবলমাত্র পারফর্ম করা ছাড়া। এখন পারফর্ম মানে তো ওদের নিজেদের মধ্যে সেই সাহসটা আসতে হবে। ওদের নিজেদেরই খেলতে হবে। আমার কথা বলে মনে হয়েছে, ওরা এখন অনেক বেশি সিরিয়াস। এই ব্যাপারটা চিন্তা করছে। কিভাবে আরও ভালো করা যায়। এবং আশা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’
‘আমি ওদের একটা কথা বলেছি, খারাপ সময়ে মানুষজন খারাপ বলবেই। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ভালো সময়ে তো মানুষ মাথায় নিয়ে নাচে। তাহলে খারাপ সময়ে বলবে না কেন। এটা তাদের অধিকার। কিন্তু এই খারাপ সময়ে কেউ না থাকলেও আমরা আছি। কিসের জন্য আছি…সামনে ওরা যেন ভালো খেলে সেজন্য। এই বিশ্বাসটুকু ওদের ওপর আমার আছে। আমাদের যেই শক্তি সামর্থ্য আছে সেটা দিয়েই আমাদের লড়তে হবে। আমরা ইচ্ছা করলেই এখন কোনো পরিবর্তন আনতে পারব না। খেলোয়াড় নয় শুধু, কোনো জায়গাতেই পরিবর্তন আনতে পারবো না। কাজেই এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সামনের ম্যাচগুলো ভালো খেলুক এই প্রত্যাশা তাদের কাছে।’
কলকাতা/ইয়াসিন/আমিনুল