জয়ের খোঁজে ইডেনের ২২ গজে
ইয়াসিন হাসান, কলকাতা থেকে || রাইজিংবিডি.কম
ইডেনের গেটে প্রবেশের আগেই জটলা। এ যেন নিয়মিত দৃশ্য। সিএবির সদস্যরা কম্প্লিমেন্টারি টিকিটের জন্য ধর্না দিয়েও সাড়া পাচ্ছেন না। অগত্যা তাই মূল গেটের পাশের গেট দিয়ে ক্রিকেটের নন্দনকাননে পা রাখা।
কিন্তু মিনিট দশেকের পর ওই গেটের পাশেই এক দল কিশোর-যুবকের উপস্থিতি। কণ্ঠে ‘পাকিস্তান-পাকিস্তান’ স্লোগান। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের এক নজর দেখতে তাদের সেই বাঁধভাঙা উল্লাস। সেই উল্লাসের দেখা মেলে মাঠের ভেতরেও। দশ-পনের জন সমর্থক গ্যালারিতে ঢুকেছিল তাদের অনুশীলন দেখতে। বাবর-রিজওয়ান-আফ্রিদি-ইফতেখাররা ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছেন। হাত মিলিয়ে, সেলফি তুলে, অটোগ্রাফ দিয়ে।
সাত বছর পর কলকাতায় পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ভারতের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ থাকায় আইসিসি ইভেন্টেই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখা মেলে ভারতে। তাদের ভক্ত-সমর্থক যে কম নেই সেটা বারবারই প্রমাণ মেলে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মুখোমুখিতে ইডেনে লাল-সবুজের চেয়ে চাঁদ-তারার সংখ্যাই বেশি ছিল। গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ স্লোগানের চেয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বেশি শোনা গেছে।
পাকিস্তানের তিন ঘণ্টার অনুশীলনের পর বাংলাদেশ ঠিক একই মাঠে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের নিয়ে তেমন কিছুই ইডেনের প্রবেশপথ কিংবা গ্যালারিতে চোখে পড়েনি। ঐচ্ছিক অনুশীলনে বাংলাদেশের বহরও ছিল সামান্য। তবে অধিনায়ক সাকিবের অনুশীলন ছিল অজস্র ঘামবিন্দু ঝরানো। ইডেনের একাধিক নেটে ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছেন। উত্তর খোঁজার চেষ্টায় ছিলেন কেন ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। সাকিব নিজেও তা বলেছেন, ‘আমিও চাই পারফর্ম করতে। আমি নিজেও সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় আছি।’
পাকিস্তান-বাংলাদেশ জয়ের খোঁজে ইডেনের ২২ গজে নামার অপেক্ষায়। দুই দলের অবস্থাই এখন করুণ। বাংলাদেশ পাঁচ ম্যাচ হেরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সপ্তম ম্যাচ খেলার অপেক্ষায়। পাকিস্তান চার ম্যাচ হেরে পা রেখেছে ইডেনে। দুই দলের অবস্থানই একই মেরুতে। তাই কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে, কার সম্ভাবনা বেশি, কার কম সেসব আলোচনাতেই আসছে না।
জয়ে খাতায় একটি সাফল্য পাতা যুক্ত করতেই মুখিয়ে দুই দল। পাকিস্তানের প্রধান কোচ গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন বলেছেন, ‘বাংলাদেশও অন্যান্য দশটি ভালোমানের দলের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। আমাদের তাদেরকে হারানোর মতো যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে। আয়নায় নিজেদেরকে দাঁড় করিয়ে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারি।’
সাকিব কয়েক ঘণ্টা পর একই মঞ্চে বসে বলেছেন, ‘আমরা জিততে চাই। একই চাওয়া নিশ্চয় পাকিস্তানেরও। সুতরাং যারা বেশি ভালো খেলবে তারা জিতবে। আমরা চেষ্টা করবো বেশি ভালো খেলে পাকিস্তানকে হারাতে। নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবো ২ পয়েন্ট নিশ্চিত করতে।’
বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ ভারতে এসেছিল। পাকিস্তান বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠায় তাদের ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু এখন কেবল পাকিস্তানের সুযোগ আছে সেখানে পৌঁছানোর। সবকটি ম্যাচ জিতলে তাদের সুযোগ থাকবে সেরা চারে খেলার। আর বাংলাদেশ নতুন লক্ষ্য তৈরি করেছে।
২০২৫ চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলতে হলে বাংলাদেশকে সেরা আটে থাকতে হবে। সাকিবরা সেই লক্ষ্যই স্থির করেছে, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফি একটা লক্ষ্য। সঙ্গে কত উপরে শেষ (বিশ্বকাপ) করতে পারি সেটাও একটা লক্ষ্য। আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবে করতে পারিনি। এখান থেকেও যে কয়েকটি ম্যাচ আছে সেগুলো যদি ভালোভাবে করতে পারি এবং ফল আমাদের পক্ষে আসে তাহলেও আমরা স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারব।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই মুখোমুখির একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর গত সেপ্টেম্বরে লাহোরে তাদের অতিথেয়তা নিয়েছিল। কিন্তু ৭ উইকেটে জিতেছিল বাবর আজমরা। এবার ইডেনে বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার।
কলকাতা/ইয়াসিন/আমিনুল