মাহমুদউল্লাহ যেন এক ‘নিঃসঙ্গ নাবিক’
আরিফুল হক বিজয় || রাইজিংবিডি.কম
বিশ্বকাপে যাত্রার আগে বাংলাদেশী সমর্থকদের প্রত্যাশার সিকিভাগ জুড়ে ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বিশ্বকাপের আগে রান ফোয়ারা ছুটিয়ে প্রত্যাশার পারদ আরেকটু চড়িয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি। সেই সঙ্গে আশার পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু আসর শুরু হতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। শান্ত প্রত্যাশার পারদ চুপসে দিয়েছেন তো লিটন ফুটো করে দিয়েছেন পাল।
আসরজুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনের দুর্দশার গল্পে ভিন্ন পথে ছিলেন একজন, তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লাল-সবুজের দীর্ঘ দিনের সারথী। অথচ তার বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই ছিল সংশয়। সুযোগ ছিল আকাশের চাঁদ। সেই সুযোগ হাতে পেয়ে মাহমুদউল্লাহ প্রতিবারের ন্যায় হয়ে উঠলেন ‘বিপদের বন্ধু’। উত্তাল সমুদ্রে লাল-সবুজের তরীর এক নিঃসঙ্গ নাবিক।
অবশ্য মাহমুদউল্লাহর নাবিক হয়ে ওঠার গল্প নতুন নয়। বিশ্বকাপের মহাসমুদ্রে বারবারই তিনি পরীক্ষিত। হাল ধরেছেন শক্ত হাতে। এবারের আসরেও প্রথম ম্যাচে বসে থাকতে হয় তাকে। সুযোগ পেলেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। দলের বিপর্যয়ে ৮ নম্বরে নেমে খেললেন ৪৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস।
পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে এক ধাপ উপরে উঠিয়ে আনা হয় তাকে, নামেন সাতে। পজিশন বদল হলেও বদলায়নি তার ব্যাটের ধার। খেললেন ৩৬ বলে ৪৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬ নম্বরে পাঠানো হয় তাকে। ব্যাটিংধসের মাঝেও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ১১১ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস খেলে লজ্জাজনক পরাজয়ের হাত থেকে দলকে উদ্ধার করেন ‘সাইলেন্ট কিলার’।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আবার সাতে! পজিশন বদলেই কিনা সুবিধা করে উঠতে পারলেন না, ২০ রানেই শেষ হয় তার গন্তব্য। ধারাবাহিকভাবে ভালো করার জন্যেই কিনা পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচে পাঠানো হয় তাকে। পঞ্চাশের আগে তিন উইকেট হারিয়ে খাদে পড়া দলকে টেনে তুলে ৫৬ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলেন রিয়াদ।
আসরে বাংলাদেশের মলিন চেহারার মাঝে একটুকরো হাসি ফুটিয়ে রেখেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৬ রানের ইনিংসটি দিয়ে একটি বিরল রেকর্ডও করেছেন মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপে টানা ১৭ ম্যাচে ন্যূনতম ২০ রান করেছেন তিনি। এই তালিকায় তার পরে আছে ক্রিকেট বিশ্বের কিংবদন্তি সব নাম।
বিশ্বকাপে টানা ১৩ ম্যাচে ন্যূনতম ২০ রান করে তালিকায় দুইয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন, তিনে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স (টানা ১২ ম্যাচ)। তাদের পরে আছেন লঙ্কান কিংবদন্তি অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অজি গ্রেট রিকি পন্টিং। দুজনই টানা ১১ ম্যাচে করেছেন ন্যূনতম ২০ রান।
সূর্য্যের আলোতে দিনের উদয় হয়। গোধূলির রক্তিম আভায় মিলিয়ে যায় আলোর শেষটুকু। রাতের নিশুতি আসে আঁধারের বেশে। নিস্তব্ধ নগরীর মতো ধ্বংসাবশেষ হয়ে নিশ্চুপ পড়ে থাকে আমাদের ক্রিকেট। গঙ্গার পানির স্রোতে ভেসে যায় সকল আশা-ভরসা। কেবল নিঃসঙ্গ এক নাবিক হয়ে ভাঙা তরীর হাল ধরে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। আরেকটি নতুন দিনের শুরুর আশায়।
ঢাকা/বিজয়