ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

‘মাথা নেই, তাই ব্যথাও নেই’ খালেদ মাহমুদের!

ইয়াসিন হাসান, দিল্লি থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৩ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২২:৪৪, ৩ নভেম্বর ২০২৩
‘মাথা নেই, তাই ব্যথাও নেই’ খালেদ মাহমুদের!

‘বেশি মাথা ঢোকালে বেশি সমস্যা। একটি মাথা কমিয়ে দিলাম আর কী! কোচ আর অধিনায়ক মিলেই সব কিছু করছে।’ – চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রধান করে মাহমুদকে পাঠানো হলেও দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত দেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন। ক্রিকেটারদের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত মাহমুদের জন্য কাজটা কঠিন। কেননা জাতীয় দলের বর্তমান স্কোয়াডের অনেক ক্রিকেটার তার অধীনে খেলেছেন, নয়তো প্রত্যক্ষভাবে তাদের ক্যারিয়ারে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের কাছে থেকে মাহমুদ নানা সময়ে যুৎসই সমর্থন জুগিয়েছেন, পিঠ চাপড়ে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন, প্রেরণা দিয়ে, সাহস জুগিয়ে কাজ আদায় করে নিয়েছেন।

সেখানে বিশ্বকাপের ভরাডুবিতে ক্রিকেটারদের থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন তিনি। কেননা এই দলে ইনপুট দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তিনি দেখছেন না। আবার ইনপুট দেওয়ার জন্য এখতিয়ারও তাকে দেওয়া হয়নি। এজন্য ইচ্ছে করেই নিজের ‘মাথা’ ঢুকাননি মাহমুদ। সেজন্য বিশ্বকাপের ভরাডুবিতে তার তেমন ‘ব্যথা’ও নেই।

ধর্মশালায় প্রধান কোচ, টেকনিক্যাল কনসালেন্ট ও টিম ডিরেক্টরের দায়িত্ব বন্টন নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছে। হাথুরুসিংহে মাহমুদকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘হেড অব মিশন’। স্রেফ এতোটুকুই তার দায়িত্ব। এর বাইরে কিছু নয়। আজ দিল্লিতে মাহমুদের কণ্ঠেও তা-ই উঠে এলো।

‘বিসিবি থেকে যে ভূমিকাটা দেওয়া হয়েছে, সেটিই করার চেষ্টা করছে। এর আগে প্রতি সফরে আমার যে বাড়তি একটা দায়িত্ব থাকতো যে দল নির্বাচনের অংশ থাকতাম, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা থাকতো, এবার তা নেই। যেহেতু আমার ভূমিকা নয় ওই জিনিসগুলো, সুতরাং আমি চিন্তাও করছি না ওসব নিয়ে (দলের সাফল্য)। যদি আমার দায়িত্ব থাকতো, তাহলে চিন্তা করতাম। অবশ্যই আমি দল নিয়ে চিন্তা করছি। কিন্তু আমার তো সিদ্ধান্ত গ্রহণের (ক্ষমতা) নাই। একটা জায়গায় তো আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে যে কতটুকু পারব, কতটুকু পারব না। আগে যেভাবে ভূমিকাগুলো ছিল, আমি সেভাবে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করেছি। এখন আমার সেই ভূমিকা নেই।’

ক্রিকেটে নিবেদিতপ্রাণ মাহমুদ এমন পরিস্থিতি উপভোগ করছেন না তা সাফ জানালেন, ‘আমি উপভোগ করছি কি না… না, অবশ্যই করছি না। একটা সফরে প্রধান হিসেবে আমি থাকব, ঘুরব, অভিভাবক হিসেবে থাকব, যেখানে শুধু শৃঙ্খলা বা অন্য কিছু নিয়ে আমার চিন্তা থাকবে, সেটা তো আমার কাজ নয়। কাজ নয় বলব না… আগেও দেখতাম এসব, তবে ক্রিকেটও দেখতাম।’

আগে জানা থাকলে এমন সফরে আসতেন না তাও জানাতে দ্বিধা করলেন না মাহমুদ, ‘নাহ, আসতাম না।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘…আমি তো এভাবে থাকতেই চাই না। যেহেতু আমার রক্তেই ক্রিকেট, কোচিংও করাই, এটা আমার পেশা… যদিও আমি বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ নই এবং কোচিংয়ের কোনো ভূমিকায় আমি নেই, তারপরও টেকনিক্যাল লোক হিসেবে যে ব্যাপারগুলো… সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে কাজ করেছি বা কথা বলেছি, সেসব থেকে এবার দূরেই আছি। যেহেতু আমার দায়িত্বে তা নেই, আমি চাই না দায়িত্বের বাইরে কিছু করতে, যেহেতু বোর্ড থেকে বলেছে, আমি ওটাই করতে চাই।’

আলোচনার টেবিলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারে একটি মাথা কমিয়ে দিয়েছে বিসিবি। কেবল হেড অব মিশন বানিয়ে মাহমুদকে পাঠিয়েছে। মাথায় সিদ্ধান্তের বোঝাও নেই। তাই দল নিয়ে তার ব্যথাও নেই। তবে বিশ্বকাপের ভরাডুবিতে আপাতত ক্রিকেটারদের সমালোচনা না করে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে রাখলেন দলের টিম ডিরেক্টর।

‘এই মুহূর্তে এসব না বলাই ভালো। সামনে দেখতে পারি। যেটা হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নাই। সামনে দুটি ম্যাচ আছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে সমালোচনা করলে অনেক কিছু নিয়েই করা যাবে। সমালোচনা থাকবেই। অনেক কথাই ঠিক হবে, অনেক কথা ভুল হবে। টানা অনেক ম্যাচ হারলে অনেক সিদ্ধান্তই ভুল হবে। এখন এসবের উর্ধ্বে উঠে কীভাবে পরের দুই ম্যাচে ভালো খেলতে পারি, সেটা ভাবতে হবে।’

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়