ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

খেলোয়াড় থেকে কোচ: এক দ্রাবিড়, অনন্য দ্রাবিড়

ইয়াসিন হাসান, আহমেদাবাদ থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৯:২৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
খেলোয়াড় থেকে কোচ: এক দ্রাবিড়, অনন্য দ্রাবিড়

সময়টা ছিল ২০০৩ সাল। রাহুল দ্রাবিড় ও তার সতীর্থরা ওয়ান্ডার্স স্টেডিয়ামে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। দুই দশক পর ভারত বিশ্বকাপ জিতবে, সবার ধারণা ছিল। কেননা টানা আট ম্যাচ জিতে ভারতও তখন উড়ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার একচেটিয়ে দাপটে ভারত স্রেফ উড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। 

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্মের আগে পন্টিংয়ের সেই ১২১ বলে ১৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস ছিল বিধ্বংসী। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক যখন সেই ম্যাচে একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছিলেন, দ্রাবিড় দাঁড়িয়েছিলেন উইকেটের পিছনে। চার বছর পর আবার বিশ্বকাপ মঞ্চে ভারত। এবার রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বেই বিশ্বকাপে ভারত। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে বিব্রতকর হার। ধরা হচ্ছিল ওই সময়ে ভারতের চেয়ে শক্তিশালী দল ছিল না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু প্রথম পর্বেই শেষ ভারতের বিশ্বকাপ। ভেঙে যায় দ্রাবিড়ের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। 

২০ বছর পর ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত দ্রাবিড়ের জীবনে আবার ফিরে এসেছে বিশ্বকাপ। এবার ক্রিকেটার হিসেবে নয়, দ্রাবিড় বিশ্বকাপে জড়িয়ে আছেন কোচ হিসেবে। বৈশ্বিক মঞ্চে ভারতের যে জয়রথ ছুটছে তার কৃতিত্ব তো এই দ্রাবিড়কেই দিচ্ছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। দলের সাফল্যের পেছনের কারিগর দ্রাবিড়। প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বদলে ফেলেছেন দলের মানসিকতা। তাতে সাফল্যও আসছে ধারাবাহিকভাবে। এই দারুণ অগ্রযাত্রায় যার অবদান, সেই দ্রাবিড়ের জন্য ট্রফি জিততে চান রোহিত শর্মা, ‘তিনি এই বড় উপলক্ষ্যের অংশ হতে চান এবং তার জন্য শিরোপা জেতা আমাদের দায়িত্ব।’

খেলোয়াড়ী জীবনে দ্রাবিড় ছিলেন ক্রিকেট ব্যাকরণের সেরা ছাত্র। টাইমিং মিলিয়ে যত তার শট। শরীরের শক্তির চেয়ে ব্যাটের জোরই তার কাছে সবকিছু । অথচ তার শিষ্যরাই এখন ওয়ানডেতে চারশ রান করে ফেলছেন অনায়াসে। বোলারদের কোনো সম্মানও দেখাচ্ছেন না। বল দেখছেন আর পেটাচ্ছেন। যা দ্রাবিড়ের পুরো উল্টো রূপ। রোহিত মনে করিয়ে দিলেন এখানেই অনন্য দ্রাবিড়।

খেলোয়াড়দের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে তাদের থেকে সেরাটা বের করে আনার দায়িত্বটা যে কোচের তা বুঝিয়েছেন ভালোভাবেই, ‘ওর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। স্বচ্ছতা রয়েছে, যার কথা আমি বারবার উল্লেখ করি। কিন্তু হয়তো ধরুন, আমি কিছু একটা ভাবছি, কিন্তু কোচ তাতে রাজি হচ্ছেন না। আপনারা জানেন, দ্রাবিড় ভাই কীভাবে ক্রিকেট খেলেছেন এবং আমি কীভাবে খেলি। অবশ্যই পুরো বিষয়টা ভিন্ন মেরুর। অথচ এই পরিস্থিতিতেও উনি আমাদের যে স্বাধীনতাটা দিয়েছেন বা বলা ভাল আমরা যেভাবে খেলতে চাই সেভাবে খেলার স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেটাই ওর সম্বন্ধে অনেক কিছু বলে দেয়।’

সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘যেভাবে দ্রাবিড় ভাই কঠিন সময়ে ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। যে টুর্নামেন্টে আমরা ভালো খেলেও সেমিফাইনালে হেরে যাই। সেই সময় উনি নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বা খেলোয়াড়দের সব কিছু জানাতেন তা ভীষণ সাহায্য করেছে।’

ব্যাটিংয়ে ‘দ্য ওয়াল’, কোচিংয়ে ‘দ্য শ্যাডো’। রোহিত শর্মা রাহুল দ্রাবিড়কে যেভাবে ব্যাখ্যা করলেন তাতে এই দাঁড়ায়। ছায়ার মতো যেভাবে আগলে রেখেছেন দলের ক্রিকেটারদের, গোটা দলকে এক করে সঞ্জীবনী আবহ ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে বড় প্রশংসার প্রাপ্য ভারতের সাবেক অধিনায়ক। এখন কেবল একটি শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারকে দিতে পারে পূর্ণতা। যার অপেক্ষায় তিনি ছিলেন দীর্ঘকাল। অনন্তকালের সেই অপেক্ষা আজই দূর হয় কিনা দেখার। 

আহমেদাবাদ/ইয়াসিন/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়