ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

নতুন উদ্যমে জয়ের কলতানের আশা

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ২৭ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৯:৩৭, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে তা খুঁজে বের করতে খুব বেশি ঘাটাঘাটির প্রয়োজন নেই। একটু পরিসংখ্যানে চোখ বুলানোই যথেষ্ট।  ১৩৮ টেস্টে ১০২ হার। জয় ১৮টি, ড্র-ও ১৮টি।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ২৩ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের নামের পাশে হতশ্রী, বিবর্ণ, অস্বস্তিকর শব্দগুলো জড়িয়ে গেছে। লম্বা এই সময়ে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যেখানে ব্যর্থতার স্তুপে ঢাকা পড়েছে হুট করে পাওয়া বেশি কিছু সাফল্য। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডকে হারানো তার মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বেশ কিছু গৌরবের ড্রও রয়েছে।

কিন্তু এই ফরম্যাটে যে ছুটন্ত ট্রেন ধরার কথা ছিল বাংলাদেশের তা মিস করেছে বহু আগেই। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেলগাড়ি এখন ধুঁকছে। সেই রেলগাড়ির চালক হিসেবে মঙ্গলবার অভিষেক হতে যাচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তর। দুই বছর আগেও যার ক্যারিয়ার ছিল পশ্চিমের ডুবন্ত সূর্যর মতো, এখন তার আলোয় দেদীপ্যমান জাতীয় দল।

বাংলাদেশের ত্রয়োদশ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে শান্তর পথচলা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ শুরু করতে যাচ্ছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় সার্কেলের খেলা। প্রথম দুই সার্কেলে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা বাংলাদেশের থেকে বড় কিছুর আশা করা বড় কঠিন। তবে নতুন অধিনায়ক নতুন উদ্যমে হাজির হলেন। তার কণ্ঠে, জয়ের কলতান। এজন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় তার।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থানে নেই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর টেস্ট ক্রিকেটে মাঠে নামা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। কেননা এই ফরম্যাট এখনও বাংলাদেশের অস্বস্তির বড় জায়গা। তবে নতুন অধিনায়ক বড় আশা দেখালেন। শান্ত বলেছেন, ‘অবশ্যই, চ্যালেঞ্জিং। আমি মনে করি, ওইটা ভিন্ন ফরম্যাট, এইটা ভিন্ন ফরম্যাট। আমি মনে করি, আমাদের যে দল আছে বা যে কম্বিনেশন আছে, আমি খুবই আশাবাদী যে আমাদের দল এই দুইটা ম্যাচ খুবই ভালো করবে। আমরা যে পরিকল্পনা করেছি, সেটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, খুবই ভালো করার সম্ভাবনা আছে। আমাদের এখানে যতগুলো খেলোয়াড় আছে, এই ম্যাচটা আমরা কীভাবে জিততে পারি, ওই পরিকল্পনা করেছি। এখানে কেউই নেতিবাচক চিন্তা করছি না। আমরা বিশ্বাস করি, এই দুইটা ম্যাচ আমরা জিততে পারি। জেতার জন্যই খেলব। সবার মধ্যে এই বিশ্বাসটা আছে।’

নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চোটের কারণে দলের বাইরে। ব্যক্তিগত কারণে লিটন দাশ নিয়েছেন ছুটি। শান্তকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। দুই টেস্টের জন্য নেতৃত্ব পেলেও শান্তকে ঘিরে বড় পরিকল্পনা আছে বিসিবির। দলকে এগিয়ে নিতে লম্বা সময়ের অধিনায়কত্বের প্রয়োজন সেই বার্তাও দিয়ে রাখলেন শান্ত, ‘একজন অধিনায়ক যদি লম্বা সময় থাকে, তার জন্য পরিকল্পনা করতে সুবিধা হয়। আমি আশা করি, হয়তো বোর্ডও পরিকল্পনা করেছে লম্বা সময়ের জন্য দেবে।’

এজন্য সতীর্থদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান তার, ‘খেলোয়াড়রা যদি খেলোয়াড়দের দিক থেকে পারফরম্যান্স করে, দল ভালো একটা অবস্থানে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ হলো যে অধিনায়ক হবে, সে তার দায়িত্ব পালন করবে। আর প্রত্যেকটা খেলোয়াড়রা যদি দায়িত্ব পালন করে, দল ভালো অটোমেটিক ভালো অবস্থানে যাবে।’

এখনই বড় আশা না করে শান্ত ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চান। তার কণ্ঠে শুনুন বাকিটা, ‘১৪টা ম্যাচ খেলব আমরা। এই বছর দুইটা, আগামী বছর ১২টা। যে দুই বছরের কথা বললেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের টেস্ট ম্যাচগুলো। বিশেষ করে, যে খেলাগুলো আমাদের দেশের মাটিতে হবে। আমার মনে হয়, এই ম্যাচগুলা আমরা কীভাবে জিততে পারি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দল হিসেবে এটাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য এবং বাইরে গিয়ে কীভাবে আমরা লড়াই করতে পারি, আরও ভালো করতে পারি, ওই লক্ষ্যটা আমাদের সবার মধ্যে আছে। আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের দেশের মাটিতে... আমাদের যে বোলিং আক্রমণ আছে এবং যে রকমের ব্যাটসম্যান আছে, আমরা দেশের মাটিতে জেতার মতো দল। আস্তে আস্তে ওই অভ্যাস তৈরি করা দরকার।’

নিউ জিল্যান্ডও এই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সার্কেলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। প্রথম সার্কেলে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। দ্বিতীয় আসরে ষষ্ঠ। এবারও চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে কিউইরা। ২৪ পয়েন্টে চোখ থাকলেও বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক তারা। কেন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে, টম লাথাম, টিম সাউদি, ড্যারিল মিচেল, কাইল জেমিনসন, রাচীন রবিন্দ্ররা, ইশ শোধীদের নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার। বোলিংয়ে পেসের সঙ্গে স্পিনার। তিন বিভাগেই তারা বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে অতিথিরাও বেশ সতর্ক, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন সার্কেলে মাঠে নামা দারুণ কিছু। বাংলাদেশ নিজেদের কন্ডিশনে বেশ শক্তিশালী। আমরা গত বছর শুরুতে টেস্ট খেলেছিলাম। আমাদের শেষ সার্কেল যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম সেভাবে কাটেনি। প্রথম সার্কেলে যারা আমরা ছিলাম তারা প্রত্যেকেই জানে এটা কতটা স্পেশাল আমাদের জন্য।’

২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে টেস্ট খেলবে নিউ জিল্যান্ড। ১০ বছর আগের সিরিজে ড্র হয়েছিল দুটি ম্যাচই। এবার ফল চায় দুই দলই। তাই সিলেটে শুরুটা দুর্দান্ত করতে চায় দুই শিবির।

নয়নাভিরাম স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শুরু হবে সকাল সাড়ে নয়টায়। এই ম্যাচ দিয়ে পাঁচ বছর পর আবার আন্তর্জাতিক টেস্ট ফিরছে সিলেটে। ২০১৮ সালে হওয়া একমাত্র ম্যাচটিতে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার নতুন উদ্যমে জয়ের কলতানের আশা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

ইয়াসিন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়