ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

অধিনায়কত্বের নবযৌবনে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর শান্ত

ইয়াসিন হাসান, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০২, ২৭ নভেম্বর ২০২৩  
অধিনায়কত্বের নবযৌবনে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর শান্ত

ক্রিকেটের আভিজাত্যের ফরম্যাট, গৌরবের ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটের নবনিযুক্ত অধিনায়ক শান্ত। বাংলাদেশের ত্রয়োদশ টেস্ট অধিনায়ক। দুই বছর আগেও জাতীয় দলে যার জায়গা পাকাপাকি ছিল না, আসা-যাওয়ার ভেতরে ছিলেন…দুই বছরের ব্যবধানে তার পায়ের নিচের জমিন শক্ত। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ইনজুরি এবং সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে তার কাঁধে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব।

এই পজিশনে মেহেদী হাসান মিরাজকেই বেশি ভাবা হচ্ছিল। লাইমলাইটে, আলোচনায় ছিলেন স্পিন অলরাউন্ডার। দলে নিয়মিত হওয়ায় তাকে নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু মিরাজকে টপকে শান্ততেই বেশি আস্থা খুঁজে পেয়েছে বিসিবি। আপাতত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক শান্ত। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের পর শান্ত ভারমুক্ত হবেন কিনা তা সময় বলে দেবে। তবে ভেতরের খবর, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পাকাপাশি দায়িত্ব পেতে পারেন বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। 

বিশ্বকাপে লিটনের পরিবর্তে তাকে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছিল। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল তাকে। এর আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের এক ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে দায়িত্ব সামলানোর পর এবার তার সামনে টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে ভরা মজলিশে শান্ত জানিয়ে এসেছিলেন, অধিনায়কত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত তিনি। সেটা সাদা পোশাকেও কিনা তা নিয়ে খানিকটা সংশয় ছিল।

নিউ জিল্যান্ডকে সিলেটে আতিথেয়তা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে সেই সংশয় দূর করেন তিনি, ‘তখন যেটা বলেছিলাম, অধিনায়ক তো অধিনায়কই। সব সংস্করণের জন্যই। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে যেটা মনে হয় যে, ওই সক্ষমতা আমার আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস।’ 

সাকিব, লিটন, তামিম, তাসকিন, ইবাদতের মতো নিয়মিত ক্রিকেটার এই সিরিজে নেই। সাকিব ও তামিম লম্বা সময় ধরে খেলছেন। তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেমে যাবে খুব অচিরেই। মুশফিকুর রহিম দলে থাকলেও তাকেও লম্বা সময় পাবে না। বলা চলে, পালাবদলের সময় চলছে। শান্তদের মতো উদ্দীপ্ত তরুণরা দায়িত্ব পেয়ে এগিয়ে আসছেন।

পালাবাদলের এই চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে শান্ত, ‘অবশ্যই এটা একটা সময় হবে (সিনিয়ররা থাকবে না)... সাকিব ভাই, তামিম ভাই, রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাই এখনও খেলছেন। একসময় উনারা খেলবেন না। আমি মনে করি, এটা একটা সুযোগ আমাদের, আমরা যারা তরুণ ক্রিকেটার যারা আছি বা নতুন আছি, তাদের জন্য। তাদের এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া উচিত। প্রত্যেকটা খেলোয়াড় সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং সে অনুযায়ী তারা পরিকল্পনা করছে।’

দলের এই অবস্থায় লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব পেলে ঢেলে সাজানোর কথাও বললেন তিনি, ‘যে-ই অধিনায়ক হবে, সে যদি লম্বা সময়ের জন্য হয়, তাহলে তার পরিকল্পনা করাটা সুবিধা হবে। সামনে যে-ই আসবে, আমি মনে করি, ও যদি যথেষ্ট সুযোগ পায়, সে অনেক ভালো কিছু করবে এবং তার পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে।’

এর আগে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ায় কিছুটা হলেও অভিজ্ঞতা হয়েছে শান্তর। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত ঠিক নিয়েছেন। কিছু ভুল। সব কিছুই তার জন্য নতুন। নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার মঞ্চ পেয়েছেন। সামনের টেস্ট অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জও নিতে মুখিয়ে আছেন, ‘নির্দিষ্ট করে কী শিখেছি বলা মুশকিল। কারণ, ওটা ওয়ানডে ছিল, এটা টেস্ট ফরম্যাট। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আরও ভালো কীভাবে করা যেত... সেটা ফিল্ড প্লেসমেন্ট বা বোলিং চেঞ্জ হতে পারে, এসব ছোট ছোট বিষয়।’

প্রথম পরীক্ষায় নিউ জিল্যান্ডকে পাওয়া শান্তর জন্য স্বস্তির ঘটনা নয় মোটেও। এই ফরম্যাটে নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশের চেয়ে অভিজ্ঞতায়, পারফরম্যান্সে, নামে-দামে সবকিছুতেই এগিয়ে। শান্তও তাদেরকে সমীহ করছেন। তবে নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখে কিউইদের হারানোর স্বপ্নও দেখছেন, ‘নিউ জিল্যান্ড খুবই ভালো দল। টেস্টে অনেক শক্তিশালী ও চ্যালেঞ্জিং দল। যেহেতু আমাদের দেশের মাটিতে খেলা, আমাদের স্পিনার যদি বলেন বা ব্যাটিং যদি চিন্তা করেন, আমরা অবশ্যই খুব ভালো দল। আমরা যদি পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারি, যে যার ভূমিকা পালন করতে পারি, তাহলে এই দলকে হারানো সম্ভব।’

এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পথচলা অনেকটা দীর্ঘ হলেও ফলের দিক থেকে একেবারেই হতশ্রী। শান্তর আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন প্রত্যেকেই আশা দেখিয়েছেন। নতুন স্বপ্ন সাজিয়েছেন। কিন্তু মুখের কথার সঙ্গে কাজের মিল ছিল না। শান্তও আশা দেখালেন। তবে বড় কিছু নয়। আগে দেশে ভালো খেলে বিদেশ জয়ের কথা ফুটে উঠল তার কণ্ঠে, ‘আমাদের হোমের ম্যাচগুলা আগে জিততে হবে। এটা আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি। কীভাবে আরও ভালো খেলতে পারি, যে কোনো দলের বিপরীতে। দেশের বাইরে গিয়ে কীভাবে আস্তে আস্তে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির বড় কারণ ছিল অযাচিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সহ-অধিনায়ক হয়ে দলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে খুব একটা প্রভাব রাখতে পারেননি। এবার শান্ত অধিনায়ক। তার ভাবনাটাও জানা গেল, ‘টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। ব্যাটিং অর্ডার বা কোন সময় কে বোলিং করবে, সেটা নিয়ে মনে হয় না খুব বেশি অদল-বদল হবে। আমি আশা করব, এই জিনিসগুলা একই রকম থাকবে।’

এই দলের অনেকেই বিশ্বকাপে ছিলেন না। সোহান, জাকির, জয়, সাদমান, মুমিনুল, খালেদরা একেবারেই সতেজ রয়েছেন। বাকিদের খারাপ সময় গেলেও পুরোনো ব্যর্থতা ঝেরে ফেলবে বলেই বিশ্বাস তার। সঙ্গে নিজেদের খেলা শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোয় বাড়তি আত্মবিশ্বাসও পাওয়া যাচ্ছে। অধিনায়কত্বের নবযৌবনে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর শান্ত। তার বিশ্বাস, দলও একই অবস্থা থেকে ২২ গজে সাফল্য সূর্যর খোঁজে থাকবে, ‘যারা বিশ্বকাপে ছিলেন না তাদের বিশ্বকাপের সঙ্গে কোনো মিল নেই। আমাদের (বাকিদের) কথা যদি বলেন, (বিশ্বকাপে) আমাদের অবশ্যই খারাপ সময় গেছে। তবে এটা ওয়ানডে ফরম্যাট ছিল, এটা টেস্ট ফরম্যাট। সর্বশেষ টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন খেলি, ভালো অবস্থানে ছিলাম। ম্যাচটা ভালো ছিল। ঐ আত্মবিশ্বাসটা নিয়েই এই ম্যাচ খেলব।’

মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, লিটন দাশ নিজেদের অধিনায়কত্বের সফরের প্রথম ম্যাচে জিতেছিলেন। সেই তালিকায় শান্ত নাম তুলতে পারেন কিনা দেখার। আত্মবিশ্বাসী শান্তর নজর সেখানেই। বাকিটা মাঠে প্রমাণের পালা।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়