ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

বাধ্য হয়ে সৌম্যকে দলে নেওয়া, বলছেন বাশার 

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ১ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:৪৫, ১ ডিসেম্বর ২০২৩
বাধ্য হয়ে সৌম্যকে দলে নেওয়া, বলছেন বাশার 

তাহলে কী জাতীয় লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলে সৌম্য সরকার? লাল বলের ক্রিকেটের পারফরম্যান্সে সাদা বলের ক্রিকেটে সৌম্য। ক্রিকেটে এমন কিছু নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু সৌম্য এমন কিছু জাতীয় লিগেও করেননি যে তাকে জাতীয় দলে ফেরাতেই হবে। 

নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটে যা বললেন তাতে দাঁড়ায়, লাল বলের ক্রিকেটের পারফরম্যান্সও বিবেচনায় এনেছেন তারা। সঙ্গে বিবেচনায় ছিল আরো কিছু। সেসব হচ্ছে, একাধিক ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতি ও সৌম্যর অভিজ্ঞতা। 

হাবিবুল বাশারের মতে সৌম্যর অন্তর্ভুক্তি, ‘ফোর্সফুল পরিবর্তন।’ নিউ জিল্যান্ডে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে ১২ ডিসেম্বর দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। সৌম্যকে দুই ফরম্যাটের দলে ফেরানো হয়েছে। অথচ ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি কোনো ফরম্যাটেই সৌম্য বলার মতো, মনে রাখার মতো কোনো পারফরম্যান্স করেননি। তাই তার অনুর্ভূক্তি নিয়ে হচ্ছে কড়া সমালোচনা। 

বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজে দলে ছিলেন সৌম্য। কিন্তু পারফর্ম করতে পারেননি। সেজন্য বিশ্বকাপ দলেও নেওয়া হয়নি। কিন্তু বিশ্বকাপের পর প্রথম সিরিজে তাকে ফেরানো হলো। এ সময়ে কোনো পঞ্চাশ ওভারের প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি সৌম্য।

জাতীয় ক্রিকেট লিগে ৬ ম্যাচে ১১ ইনিংসে ৪৮.৪৪ গড়ে রান করেছেন ৪৩৬। রান পাননি সবশেষ ঢাকা লিগেও। সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪৮ মাস পর। এই সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো কোনো পারফরম্যান্সও ছিল না। টুর্নামেন্টে ১ সেঞ্চুরি ১ ফিফটিতে রান কেবল ২৯৩। গড় মাত্র ২৬.৬৪! পুরো আসরে টপ অর্ডারে খেলা এই ব্যাটসম্যান চার মেরেছেন মাত্র ৩৫টি, আর ছয় ৭টি। 

 ঢাকা লিগের মতো ঘরোয়া আসরে সৌম্যর মতো এমন ব্যাটসম্যানদের রান বলে দেয় তিনি কতটা ফর্মহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া বয়স পারমিট না করলেও আইনের সুযোগ নিয়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল এসিসি ইমার্জিং কাপে। সেখানে ৩ ম্যাচে করেছিলেন ৯৫। রঙিন পোশাকে মেলে ধরার মতো পারফরম্যান্স নেই। তারপরও বারবার সুযোগ পাচ্ছেন। এবারও কোনো প্রক্রিয়ায় না থেকে ফিরলেন স্কোয়াডে। যার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। 

হাবিবুল বাশার সুমন সেই ব্যাখ্যা দিলেন। ‘আসলে আমাদের কিছু ফোর্সফুল পরিবর্তন করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব আল হাসানকে পাওয়া যাচ্ছে না, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সংখ্যা আমাদের কমে গেছে। নিউ জিল্যান্ড সফর আমাদের জন্য সবসময়ই একটু কঠিন হয়। সেখানে আমরা সাধারণত অনেক স্ট্রাগল করি। সেখানে নতুন কাউকে দেখার থেকে আমাদের মনে হয়েছে, এমন কাউকে নেই যে এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে। পাশাপাশি ওর একটু অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে। এই ভাবনা থেকে তাকে নেওয়া হয়েছে। 

আর এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খুব ভালো পারফর্ম যে করেছে, তা  নয়। তবে ৪৮ গড় খুব খারাপ নয়, যদিও এর কাছ থেকে আরও বেশি কিছু আশা করার থাকে। চিন্তা করা হয়েছে যে, যেহেতু এই কন্ডিশনে আগে খেলেছে ও পারফর্ম করেছে, অলরাউন্ড সামর্থ্যও আছে, সব মিলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ 

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রিয় ছাত্র হিসেবে সৌম্যর বেশ খ্যাতি। হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর তাকে ফিরিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাকে নেওয়া হয়েছিল। তার বিশ্বকাপ ভাবনাতেও ছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু সিরিজে ভালো না করায় বিশ্বকাপের বিমানে ওঠা হয়নি সৌম্যর। কিন্তু বিশ্বকাপের পর নিউ জিল্যান্ড সফরে তাকে নিয়েই উড়াল দিচ্ছেন হাথুরুসিংহে। 

তবে শুধুমাত্র কোচের ইচ্ছাতেই সৌম্য দলে ঢুকেছেন এমন দাবি উড়িয়ে দিলেন হাবিবুল, ‘আমার মনে হয়, কোচের ইনপুট নিয়ে খুব বেশি আলাপ হওয়া উচিত নয়। দল যখন হয়, সবার ইনপুট নিয়েই করা হয়। সবাই একমত যখন হয়, তখনই দলটা গড়া হয়। আমাদেরও কিছু পছন্দ থাকে, কোচেরও থাকে। এমন নয় যে একজন ক্রিকেটার শুধু একজনের পছন্দেই দলে আসে।’ 

তবে কিছু না করে সৌম্যর সুযোগ পাওয়ায় অন্যদেরকে খারাপ বার্তা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়েও চলছে আলোচনা। হাবিবুল বাশার সেসবে আলোচনায় না গিয়ে বাস্তবতা তুলে ধরলেন, ‘যদি কেউ পারফর্ম করে, তাহলে তাকে কিন্তু দলে নেওয়া হয়। তবে আমরা যখন দল করি, কিছু ব্যাপার বিবেচনায় আনি অবশ্যই। শুধু পারফরম্যান্স নয়, পারিপার্শ্বিকতা দেখতে হয় আমাদের, অতীত ও ভবিষ্যৎ ভাবতে হয়। সেক্ষেত্রে যারা একটু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, তারা মোটামুটি পারফর্ম করলে অন্যদের সুযোগ বেশি থাকে। কারণ আমাদের কাছে মনে হয়, একদম নতুন কাউক নেওয়ার চেয়ে… সৌম্য একদমই খারাপ ফর্মে নেই।

 এবার প্রথম শ্রেণিতে ভালোই ব্যাটিং করেছে।’ সৌম্যর নিউ জিল্যান্ডের পারফরম্যান্সে চোখ বোলানো যাক। ১৫১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সৌম্য নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে খেলেছেন ১৮ ম্যাচ। ৩ টেস্ট, ৮ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডেতে রান ১৩৭, গড় ১৭.১২। টি-টোয়েন্টিতে ১৭০, গড় ২৪.২৮। টেস্টে রান ৩২০, গড় ৫৩.৩৩। একমাত্র সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন টেস্টেই। 

সৌম্যর নামের পাশে যে পরিসংখ্যান তা দলে আসার মতো যথেষ্ট নয়। তবুও তাকে রাখা হয়েছে স্কোয়াডে। বাধ্য হয়েই এমন কিছু তা স্বীকার করতে চাইলেন না হাবিবুল, ‘যেটা বললাম, কিছু ফোর্সফুল পরিবর্তন আমাদের করতে হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ নেই, সাকিব নেই। দুজন সিনিয়র ক্রিকেটার নেই। অন্য কোনো বিকল্পে তাকাতে হলে আমাদের নতুন কাউকে দেখতে হতো, যে ওই কন্ডিশনে কখনও খেলেনি।’ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সৌম্য নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। পায়ে পাওয়া সুযোগ ঠেলে বিদায় করেছেন। এবার আরেকটি পেলেন। নিশ্চিতভাবেই ম্যাচ খেলবেন। এবার কি অন্তত কিছু করে দেখাতে পারবেন? নিজের জন্য, দলের জন্য। 

সিলেট/ইয়াসিন/রিয়াদ 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়