ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

শান্তর বছরে আশার আলো তাওহীদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ০৮:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
শান্তর বছরে আশার আলো তাওহীদ

‘বিশ্বাস হয় যে এই ছেলেটা লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। আমি বিশ্বাস করি, এই ছেলেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিতে পারবে।’ – বিপিএল চলাকালীন নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে কথাগুলো বলেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

বছরের শুরুতে মাশরাফি শান্তর ওপর যে বিশ্বাস রেখেছিলেন, তার ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে জোর গলায় কথা বলেছেন বছর শেষে সেই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠল তার পারফরম্যান্সে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বছর এখনও শেষ হয়নি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি দিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা শেষ হবে। তিন টি-টোয়েন্টি বাদ দিয়ে এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্সের যে খতিয়ান তাতে অন্য সবার চেয়ে ঢের এগিয়ে শান্ত। শীর্ষে থাকা এ ব্যাটসম্যানের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যাটসম্যানের রানের পার্থক্য ৪১৩।

আরো পড়ুন:

তিন ফরম্যাটে ৩৯ ম্যাচে ৪২ ইনিংসে শান্তর রান ১৬১৪। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত এক বছরে পাঁচ সেঞ্চুরি করেননি। শান্ত আগের সব রেকর্ড ভেঙে এবার পাঁচ সেঞ্চুরি করেছেন। সঙ্গে তার নামের পাশে আছে ৯ ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস। তার ব্যাটিং গড়ও চমকপ্রদ। ৪৩.৬২। অফফর্ম, দল থেকে বাদ পড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় চটকদার সব ট্রলের শিকার হয়েছেন শান্ত। এক সময়ে লিটন দাসও এসবের শিকার হয়েছেন। ব্যাট হাতে ২০২২ সালে রান ফোয়ারা ছুটিয়ে লিটন সেসব পেছনে ফেলেছেন।

এ বছর শান্ত আপন আলোয় জ্বলেছেন। হয়েছেন উজ্জ্বল। শক্ত মানসিকতার শান্ত দলের আস্থা অর্জন করে হয়েছেন অধিনায়ক। আপাতত ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও অনেকেই মনে করছেন ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে শান্তই সেরা পছন্দ। নিউ জিল্যান্ডকে ঘরের মাঠে টেস্টে এবং তাদের মাটিতে ওয়ানডে হারানোয়, তার পারফরম্যান্সের পাশাপাশি অধিনায়কত্বও প্রশংসিত হয়েছে। তার অধীনে অনেক কিছুই পাবে দেশের ক্রিকেট এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

শান্তর মেলে ধরার বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধুমকেতু হয়ে এসে ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন তাওহীদ হৃদয়। বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে ডাক পেয়েছিলেন তাওহীদ হৃদয়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ১৩ ম্যাচে ১২ ইনিংসে ৩৬.৬৩ গড়ে ও ১৪০.৪১ স্ট্রাইক রেটে ৪০৩ রান করেছেন, যা বিপিএলে এবার তৃতীয় সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে খেলানো হয়নি। সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রেখে আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য প্রস্তুত করা হয়। অভিষেকেই বাজিমাত করেন তরুণ তুর্কী।

ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন। হাতছানি দিচ্ছিল বিশ্বরেকর্ড। অভিষেকে পাঁচে নেমে কোনো ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি ছিল না। অভিষেকে সর্বোচ্চ ছিল স্বপ্নীল প্রকাশ পাটিলের ৯৯ রান। মাত্র ৮ রানের জন্য তাওহীদ বিশ্বরেকর্ড গড়তে পারেননি। বোল্ড হয়ে ফেরেন ৯২ রানে। ৮টি চার ও দুটি ছয়ে পাঁচে নেমে এই রান করেন তিনি। সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে তাকে ব্যাটিং অর্ডারে অযথা নাড়াচড়া করিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে নাড়িয়ে দেয়। তাতে বছর শেষের পারফরম্যান্সের বিবেচনায় তাকে খুব একটা পিছিয়ে রাখা যাবে না। ৩৫ ম্যাচে ৩০ ইনিংসে ৮৮৩ রান করেছেন। গড় রান ৩২.৭০। ফিফটি আছে ৬টি।

পারফরম্যান্সের বিচারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক যথাক্রমে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। মুশফিক ৩৩ ম্যাচে ৩৪ ইনিংসে ১২০১ এবং লিটন ৩৯ ম্যাচে ৪০ ইনিংসে ১০৭৪ রান করেছেন। শান্ত, মুশফিক ও লিটন; এই তিন ব্যাটসম্যানই এ বছর ১ হাজারের বেশি রান করেছেন।

লিটন টানা তৃতীয় বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১ হাজারের বেশি রান করলেও এবারের পারফরম্যান্সের সূচক নিম্নগামী। গত বছর ১৯২১ রান করেছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৩ সেঞ্চুরির সঙ্গে ১৩ ফিফটি তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল। এবার লিটন ৩৯ ম্যাচে ১০৭৪ রান করেছেন। গত বছর যেখানে তার গড় রান ছিল ৪০.০২। এবার তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৮৩। কোনো সেঞ্চুরি নেই। ফিফটি কেবল ৮টি। বরাবরের মতো এবারও ভালো শুরুর পর কয়েকটি ইনিংসে বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। বড় রানের ক্ষুধা তার ব্যাটে এবার দেখাই যায়নি।

মুশফিকুর রহিম ২০২১ সালের পর আবার এ বছর ১ হাজারের বেশি রান করেছেন। ৩৩ ম্যাচে ৩৪ ইনিংসে মুশফিক ১২০১ রান করেছেন। ২ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৮ ফিফটি। মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষ ৬০ বলে সেঞ্চুরি করেছেন। যা দেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।

এছাড়া সাকিব আল হাসান ৯৬১, মেহেদী হাসান মিরাজ ৭৬৬ রান করেছেন। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে এসেছে ৪৬৯ রান। এই দুই ব্যাটসম্যানের ওয়ানডেতে একটি করে সেঞ্চুরি আছে। উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সের ভেতরে সৌম্য সরকারের কিছুদিন আগে করা ১৬৯ রানের স্মৃতি এখনও তরতাজা।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে কিছুটা আশার আলো থাকলেও দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স একেবারেই বাজে। পুরো বছরই ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগেছেন। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ তো বটেই, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ মঞ্চেও ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ভুগিয়েছে দলকে।

/ইয়াসিন/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়