ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

ঘূর্ণি ছাপিয়ে গতিতে সোনালী দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১০:১৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩
ঘূর্ণি ছাপিয়ে গতিতে সোনালী দিন

‘পেসারদের কাজ বল পুরোনো করে দেওয়া।’- লোকে মুখে এমন দায়িত্বের কথা শোনা গেছে হরহামেশা। দ্রুত গতিতে যারা বল ছুটতে আসেন সরাসরি স্বীকার না করলেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যে এটা-ই তা কথায় বুঝিয়ে দিতেন। খুব বেশি দিন আগের কথাও নয়। বছর দুয়েক!

অথচ সময়ের কি আশ্চর্য খেল। বছর দুয়েকের ভেতরে পেসাররা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ত্রাণকর্তা, ভরসাস্থল, সাফল্যের রূপকার। নতুন বলে তারা হুমকির নাম।  

২০২২ এর মতো ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটে পেসাররা দারুণ দাপট দেখিয়েছে। স্পিন ঘূর্ণি ছাপিয়ে গতিতে মিলেছে সোনালী দিন। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুই গতি তারকা শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। নতুন বলের দুই বোলিং জুটির সাফল্য ছুট স্রেফ মুগ্ধ করেছে।

আরো পড়ুন:

শরিফুল এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচে ৩১ ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫০ উইকেট পেয়েছেন। তাসকিন ২৭ ম্যাচে ২৭ ইনিংসে পেয়েছেন ৪৬ উইকেট। ইনজুরির কারণে বেশ কিছু ম্যাচ দুজনই মিস করেছেন। নয় তো তাদের সাফল্যের খাতায় যোগ আরো অনেক উইকেট।

দুই পেসারের পরপরই রয়েছেন তিন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম। স্পিন ত্রয়ীর উইকেট যথাক্রমে ৪১, ৩৭ ও ৩৬। এছাড়া বলার মতো সাফল্য আছে মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদের। মোস্তাফিজ ২৯ ও হাসান ২৭ উইকেট পেয়েছেন। বছরের শেষের চার মাস ইনজুরিতে বিপর্যস্ত ইবাদত হোসেন ১০ ম্যাচে পেয়েছেন ২১ উইকেট।

তাসকিন আহমেদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের পেস ব্রিগেডের যে কেউই এখন অধরা সাফল্যে ভাসাতে পারেন। হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলামরা এখন ভরসার আয়না। বড্ড বাড়াবাড়ি নয়, অতিরঞ্জিতও নয়, বাংলাদেশের এই বোলিং আক্রমণ এখন বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে তুলনীয়। পরিসংখ্যান তো তা-ই বলছে। এ বছরে ৪৯ ম্যাচে বাংলাদেশের বোলারদের বোলিং গড় ২৮.২৩। যা শীর্ষে থাকা ভারতের (২৩.৭৫) পরপরই।

আর উইকেট বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচে। ২৯২ ইনিংসে বাংলাদেশের বোলাররা ১৯৯২.৫ ওভারে পেয়েছেন ৩৪৮ উইকেট। বাংলাদেশের পরে রয়েছে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশও। এছাড়া ইকোনমিতেও বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচে। ৪.৯৩ ইকোনমিতে বছর শেষের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।

পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের কোনো পেসার বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়ার কীর্তি গড়েছেন। শরিফুলের ৫০ উইকেটের আগে ২০১৮ সালে মোস্তাফিজ ৩৫ ম্যাচে ৫৭ উইকেট পেয়েছিলেন। ওই বছরই মিরাজ ৩৩ ম্যাচে ৬১ উইকেট পেয়েছিলেন, যা এখনো শীর্ষে অবস্থান করছে।

এছাড়া পেস ও স্পিন দুই বিভাগ মিলিয়ে সাফল্যে এ বছরকে গোনায় ধরতে হবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৪৪ ম্যাচে ৩৬৭ উইকেট পেয়েছিল। যা এখনো শীর্ষে। গত বছর ৪৬ ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৩৫৭ উইকেট। এবার ৪৮ ম্যাচে ৩৪৮ উইকেট।  

২২ গজে সোনালী দিন কাটানো এই পেসাররা এখন অকুতোভয়। তাসকিন পায়ের নিজের জমিন শক্ত করেছেন অজস্র ঘাম ঝরিয়ে। বাড়িয়েছেন গতি। হয়েছেন নিয়ন্ত্রিত, ক্ষুরধার। তারুণ্যের প্রতীক হয়ে আসা হাসান মাহমুদ ও শরিফুল ইসলাম হচ্ছেন ‘চেরি অন দ্য টপ’। শুধু বোলিংয়ে তারা মুগ্ধ করছেন না। নিজেদের পরিপক্বতা, কথার সৌন্দর্য, ভাবনার গভীরতা, প্রতিপক্ষকে মূল্যায়ন, নিজেদের যত্ন, কাজের পরিধি নির্ণয়, আগ্রাসী মনোভাব, হারার আগে না হারার মানসিকতায় অনন্য হয়ে উঠেছেন।

ক্রিকেটের গালিচায় লড়াইয়ের ময়দানে বোলাররা হয়ে উঠেছেন ম্যাচ উইনার। দলীয় সাফল্যের বিবেচনায় এ বছরকে পিছিয়ে রাখতে হবে। তবে ব্যক্তিগত অর্জনে বোলাররা নিজেদের ফুটিয়েছেন ভালোভাবেই। এক সময়ে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ বলতেই কেবল স্পিনারদের কথা মাথায় আসত। এখন এক্সপ্রেস গতি আর ঝাঁঝালো বাউন্সারের চিত্র আঁকা হয়ে। তাদের হুংকার শোনা যায় গোটা বিশ্বে।

ইয়াসিন/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়