অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ের বছরে কিংবদন্তির অবসর
নানা হিসেবনিকেশ আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে শেষের পথে ২০২৩ সাল। এই বছরে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ঘটনার পাশাপাশি ঘটে গেছে অঘটনও। ক্রিকেটে স্টুয়ার্ট ব্রডের ‘বিরামচিহ্ন’ টেনে দেওয়া থেকে শুরু করে কামিন্সের অমরত্বের রথে চড়ে বসা; সবই দেখেছে ঘটনাবহুল এই বছর। নতুন বছরের আগমনী সুবাসের সঙ্গে পুরনোর ঘ্রাণে আরেকবার পেছন ফেরা যাক।
২০২৩ সালটা সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে প্যাট কামিন্সের জন্য। এই বছরের শেষদিকে এসে অমরত্বের সিংহাসনের পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। প্রথমেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। জুনে ভারতকে হারিয়ে ওভালে সাদা পোশাকের রাজত্বের পতাকা ওড়ায় প্যাট কামিন্সের দল। কামিন্সের সামনে সুযোগ আসে অমরত্ব ছুঁয়ে ফেলার।
বছরের শেষে সে অমরত্বের সেই সুযোগ দুই হাত ভরে লুফে নেন অজি দলপতি। এবারও সামনে ভারত এবং আরেকবার ফাইনালের নায়কের নাম ট্রাভিস হেড। সেই সঙ্গে গঙ্গার ঝড় থামিয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার দর্শককে চুপ করিয়ে তাসমান পাড়ে উল্লাসের নৃত্য বইয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। যে নৃত্যের মধ্যমনি কামিন্স। একমাত্র অজি অধিনায়ক হিসেবে যে বিরল কীর্তির ভাগিদার হয়েছেন অজি সমর নায়ক।
রিকি পন্টিং-মাইকেল ক্লার্কদের রাজত্বে একটা সিংহাসন এখন কামিন্সেরও দখল। তবে একটা দিক দিয়ে এই পেসার এগিয়ে। যেখানে তার রাজত্বে তিনিই সম্রাট। টেস্ট ও ওয়ানডের দুই বিশ্ব আসর আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কদের কাতারে কামিন্স ছাড়া আর কেউ নেই।
কামিন্সের এই কীর্তিতে তাসমান পাড় যখন জ্বলজ্বলে, ঠিক তার কয়েক মাস আগেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের রাজ্যে বয়ে গিয়েছিল বিষাদ বাতাসের এক লহমা। ব্যাট-বল রেখে যে অমরত্বের পথে রওয়ানা দিয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে জীবন্ত কিংবদন্তি। ঘরের মাঠেই চিরচেনা ফ্লপি হ্যাটটা উচিয়ে চিরঞ্জীব কীর্তিমানদের আকাশটা ছুঁয়ে ফেলেন ইংলিশ কিংবদন্তি।
অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ সিরিজ। ওল্ড ট্রাফোর্ডে বেরসিক বৃষ্টির হানার পর এজবাস্টন, লর্ডস, হেডিংলি আর ওভালে জমে উঠলো পোড়া ছাইয়ের লড়াই। তাতে কখনো উসমান খাজা, কখনো কামিন্স-নাথান লায়ন, কখনো মার্ক উড হয়ে উঠেছেন নায়ক, আর শেষে গিয়ে রূপকথার বিদায় পেয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড।
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ের বছরে কিংবদন্তির অবসরের মাঝেও বিশ্ব ক্রিকেটে ঘটে গেছে আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বছরের শুরুতেই নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলো অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে ২০১০ সাল থেকে টানা ছ’বার বিশ্বকাপ জিতলো আজিরা। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারায় তারা। বছরের মাঝামাঝি গুজরাট টাইটান্সকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয় চেন্নাই সুপার কিংস।
আগস্টে এশিয়া কাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয় ভারত। আয়োজক দেশ নির্ধারণ সহ নানা ঝামেলার পর ‘এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত এই আসরে বাগড়া দিলো বৃষ্টি। আসরজুড়ে শ্রীলঙ্কার অঝোর বর্ষণের পর ফাইনালে অবশ্য জয় হলো ভারতের। মোহাম্মদ সিরাজের তোপে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলংকা। বাকি কাজটা অনায়াসে সেরে শিরোপা নিজেদের করে নেয় রোহিত শর্মার দল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়া বিশ্বকাপ, শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এবার দেখা গেছে সেটিই। এক সময়ের দাপুটে ক্যারিবীয়দের ছাড়াই হয় বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর। বছরের শেষে এসে অবশ্য নিজেদের পুনর্গঠনের ফাঁদে পড়ে যাওয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ক্যারিবীয়রা জানান দিয়েছে, চাইলে তাদের নিয়ে আবার একটু আশাবাদী হওয়াই যায়। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে উগান্ডা।
বছরের শেষদিকে এসে চমক ছিল অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অধিনায়ক মেগ ল্যানিংয়ের অবসর। নভেম্বরে ৩১ বছর বয়সেই অবসরের ঘোষণা দেন ল্যানিং। মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কিংবদন্তির কাতারে উপরের দিকটাই দখল করে নিয়েছেন ল্যানিং। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি শতক, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি রান, টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে মিলিয়ে অধিনায়ক হিসেবে ৫টি বিশ্বকাপ; সব মিলিয়ে বছরের শেষ সময়ের বিষাদেও সুবাস ছড়িয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গন জুড়ে।
ঢাকা/বিজয়