ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৯ ১৪৩১

ক্যান্সারকে পরাজিত করে মাঠে ফিরতে চান জাফরুল এহসান

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৫:০১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪
ক্যান্সারকে পরাজিত করে মাঠে ফিরতে চান জাফরুল এহসান

‘কাজ করতে করতে এরকম হয়েছে তো, তাই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। গত ১০ বছরে আমার ৫০ টাকার ওধুষও কিনে খেতে হয়নি। সুস্থ ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আমার ডায়বেটিস, প্রেশার, অর্গ্যানে কোনো সমস্যা ছিল না। সেজন্য টিকে আছি এখন পর্যন্ত। ডাক্তাররাও এজন্য আশা দেখাচ্ছেন।’

মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে কান্নাভেজা কণ্ঠে জাফরুল এহসান প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কোচের শরীরে মরণম্যাধি ব্ল্যাড ক্যান্সার এএমএল ধরা পড়েছে। এরই মধ্যে ৪৬টি কেমো নিয়ে শরীর দূর্বল হয়ে পড়েছে তার। সামনে তার আরো কঠিন পথ। কিভাবে সেই পথ পাড়ি দেবেন উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না নিজেও।   

‘২০২২ সালের নভেম্বরে ক্যান্সার ধরে পড়েছিল। কোনো সিনড্রোম ছিল না। আমি কেবল ব্লাড টেস্ট করেছিলাম। শারীরিকভাবে আমার কোনো অসুবিধা ছিল না। ইউনাইটেড হাসপাতালে চার মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যান্সারও চলে গিয়েছিল। আমি কাজে ফিরে বোর্ডের কাজেও বাইরে গিয়েছি।’ 

আরো পড়ুন:

ভারী কণ্ঠে জাফরুল এহসান বলতে থাকেন, ‘খুব খারাপ অবস্থায় আছি এখন। আবার শরীরে (ক্যান্সার) ফিরে এসেছে। এখন শক্তিশালী চিকিৎসা হচ্ছে। আমার স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে। কষ্টের মধ্যেই আছি। শারীরিকভাবে বেশ দূর্বল হয়ে গেছি।’ 

গত সেপ্টেম্বর থেকে পুরোপুরি কাজের বাইরে তিনি। চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন ভারতের চেন্নাইয়েও। সেখানে নানা জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় দুই মাস পর ফিরে আসেন। এখন ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে তার দ্বিতীয় কেমোর প্রক্রিয়া।

নিজের কথা অনর্গল বলতে থাকেন জাফরুল এহসান, ‘আজ থেকে হাই কেমো শুরু হচ্ছে। ঘণ্টাখানেকের ভেতরেই শুরু হবে। এটা খুব শক্তিশালী কেমো। এটাকে সেভেন প্লাস থ্রি বলে। সাত দিন ধারাবাহিকভাবে দেবে। এর মধ্যে তিনটি দেবে খুব বিষাক্ত কেমো। প্রথম যেবার কেমো দিয়েছিলাম আমার ১২ কেজি ওজন কমে গিয়েছিল। এখন যদি আগের মতো হয় তাহলে আমার কিছু থাকবে না। আমি শারীরিকভাবে খুব স্ট্রং না এখন। এটাকে সহ্য করতে হবে।’

বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্ল্যান্টই তার শেষ ভরসা। এজন্য কেমোগুলো ঠিকঠাক মতো শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। সেই শক্তি শরীরে থাকবে বলে আশাবাদ তার, ‘এটা যদি নিতে পারি যদি ক্যান্সার জিরো আসে তখন তারা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশান করবে। মাস তিনেক সময় লাগবে। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশান করতে হবে। এটা ছাড়া উপায় নেই।’ 

ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার খরচ যোগাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। বুকে চাঁপা কষ্ট নিয়ে স্থানীয় এই কোচ বলতে থাকেন, ‘মুখে কিছু বলার থাকে না। নিজের পরিবার… চাকরি করেছি, সৎভাবে পয়সা উপার্জন করেছি। টাকা পয়সা তো ওরকম থাকে না। খুব চেষ্টা করছি। কোনো দিকে কাউকে কিছু বলছি না। চেষ্টা করে যাচ্ছি আর কি। বিসিবি সাহায্য করেছে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে অঙ্কটা আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।’ 

মাঠের মানুষ স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাস আর ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ খুব মিস করছেন। জাতীয় লিগ, বিসিএল, বিপিএল, বাংলা টাইগার্স ও এইচপির ক্যাম্পে নিয়মিত কাজ করে আসা এই কোচ সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে চান। কাজ করতে চান প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়দের নিয়ে। বিছানায় রাতদিন কাটিয়ে দেওয়া জাফরুল এহসান স্বপ্ন দেখেন, ‘এখন তো উঠতে পারছি না। সুস্থ হয়ে ফিরতে চাই ক্রিকেট মাঠে। ওরা (ক্রিকেটাররা) তো আমাকে বলেছে আমাকে মিস করছে। আমিও চাই ওদের সঙ্গে আরো কিছু সময় কাটাতে।’

ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়