ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

চাকিংয়ের সঙ্গে লড়াই করে রহস্যময়ী আলিসের স্বপ্নময় প্রত্যাবর্তন

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১১:৩৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪
চাকিংয়ের সঙ্গে লড়াই করে রহস্যময়ী আলিসের স্বপ্নময় প্রত্যাবর্তন

চার বছর ধরে আড়ালে। বলা যায় এক প্রকার অচেনা। প্রেজেন্টার পর্যন্ত ভুল করে বসেন পরিচয় দিতে গিয়ে। দর্শকরাও ভুলতে বসেছেন। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সের ছাদে দাঁড়িয়ে একজন তো বলেই ফেললেন, ‘কোন দেশের বোলার!’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) হ্যাট্রিক দিয়ে শুরু করা রহস্যময়ী এই আলিস আল ইসলামের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে স্বপ্নের মতো। মাত্র ১৩০ রান করেও সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৫২ রানে হারিয়ে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সিলেটের হারের অন্যতম কারণ আলিস রহস্যের ধাঁধা ভাঙতে না পারা। মাত্র ১৭ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে একাই সিলেটকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।

২০২০ সালে শেষবার বিপিএল খেলেছেন, এরপর কেটে গেছে চার বছর। চাকিংয়ের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গেছেন, হাল ছাড়েননি মুহূর্তের জন্য, মাথার ওপর ছাতা ধরে সঙ্গে ছিলেন গুরু সালাউদ্দিন। ম্যাচ শেষে চাকিংয়ের সঙ্গে লড়াই করা আলিসের গল্প শুনিয়েছেন দেশ সেরা এই কোচ।

আরো পড়ুন:

‘আমাদের দেশে আসলে রহস্য বোলার খুব কম। ছেলেটা অনেক আগে শুরু করেছিল, অনেক ভালো করছিল। এর মাঝে চাকিংয়ের কারণে অনেক দূরে ছিল। তারপর ওর ফেরাটা খুব কঠিন ছিল। আমরা ওর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। ও আমার কাছে অনুশীলন করায় হয়তো আমাদের জন্য একটা সুবিধা ছিল (বিশ্বাস রাখতে)। কারণ ওকে কাছ থেকে দেখার সুযোগটা হয়েছে। ওর বলে অনেক বৈচিত্র্য আছে। এই ধরনের বোলার আমরা অনেক দিন ধরেই খুঁজছি।’

‘ইনজুরির কারণে অনেক দিন ভুগেছে। হাঁটুতে সমস্যা ছিল। তার আগে চাকিংয়ের সমস্যা ছিল। এই ধরনের ছেলেদের আমি সহায়তা করি। কারণ তারা কখনও খেলাটা যাতে ছেড়ে না দেয়। একটা ছেলে যদি চেষ্টা করে, তাহলে আমি যত বড় কোচই হই না কেন, ওই ছেলেকে সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। ছেলেটা মনে প্রাণে চেষ্টা করছে। সারাটা বছর চেষ্টা করছে। তার উন্নতি আমি দেখছি। তাকে সাহায্য করা আমার নৈতিক দায়িত্ব।’

চাকিং থেকে আব্দুর রাজ্জাককে ফিরিয়েছিলেন সালাউদ্দিন। নতুন রূপে রাজ্জাক ফেরেন আরও ক্ষুরধার হয়ে। আলিসের ক্ষেত্রেও শুরুটা যেন তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ২০১৯ বিপিএলে খেলেন ছয় ম্যাচ। পরের বিপিএলে মাত্র ১ ম্যাচ। এরপর শুরু হয় ইনজুরি আর চাকিং থেকে ফেরার লড়াই। সব মিলিয়ে বিপিএলে ৮ ম্যাচ খেলে এই স্পিনার নেন ১১ উইকেট।

নিজের সঙ্গে ফেরার লড়াই করা এমন একজনকে কেন দলে নেওয়া? এমন প্রশ্নে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আলিসের সঙ্গে কাজ করার কারণেই তাকে চেনাটা খুব সহজ হয়েছে। আমি আসলে ড্রাফটের সময় ক্রিকেটার ডাকিনি। তবে আমি মনে রেখেছিলাম যে, আলিসকে নেব। আমি অপেক্ষা করছিলাম যে সুনিল (নারাইন) কখন আসবে। কারণ সুনিলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সুনিল আসেনি। তখন মনে হলো আমাদের একজন রহস্য বোলার দরকার। যে মাঝের সময়ে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা শুরুতে উইকেট নিয়ে দেবে। এখন সুনিল এলে আমরা অবশ্যই আরেকটু শক্তিশালী হবো।’

‘যেহেতু আমি একটা ক্রিকেটার নেইনি... সে আমাদের সঙ্গে অনুশীলন করেছে, ম্যাচ খেলেছে। আমাদের দলের ক্রিকেটাররাই আমাকে বলেছে, স্যার, একে নেন! এটা ওদের কাছ থেকে শোনা আসলে অনেক ভালো। কারণ আমি কাউকে হঠাৎ করে নিয়ে এলে যে কেউ বলতে পারে, স্যার তো মনে হয় সুবিধা দিয়ে নিয়ে এসেছে। আমি এগুলো চাই না। আমার কাছে মনে হয়েছে, সে যদি আমাদের সঙ্গে অনুশীলন করে তাহলে অনেক ক্রিকেটারই হয়তো বলবে, স্যার ওকে নেন। আমার মনে হয়, সে ওই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে এবং ভালো করেছে। এমনকি লিটন, ইমরুলসহ সবাই বলছে, ওকে নেন। যেহেতু অধিনায়ক এবং সিনিয়র ক্রিকেটার বলেছে, তখন তো আমারও একটা সাহস হয় যে, ঠিক আছে।’

সিলেট/রিয়াদ/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়