ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

বিপিএলে দেশি কোচে বেশি লাভ

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, সিলেট থেকে  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১০:৫৪, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪
বিপিএলে দেশি কোচে বেশি লাভ

সাকিব-মেহেদির সঙ্গে রংপুর কোচ সোহেল ইসলাম।

বাবর আজম নেটে অনুশীলন করছেন, পরখ করছেন সোহেল ইসলাম। জর্জ ব্রাউন-আভিষ্কা ফার্নান্দো কিংবা নাজিবুল্লাহ জাদরানরা খেলছেন তুষার ইমরানের গেমপ্ল্যানে। আরেকদিকে এভিন লুইসের মতো পাওয়ার হিটার, শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক দাসুন শানাকা খেলছেন তালহা জুবায়ের যে পরিকল্পনা দিচ্ছেন সেভাবে। 

সোহেল, তুষার ও তালহা; এই তিনজনই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। সোহেল রংপুর রাইডার্সে, তুষার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে আর তালহা আছেন খুলনা টাইগার্সের দায়িত্বে। সোহেলের এটি দ্বিতীয় আসর হলেও তুষার-তালহার এবারই প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। 

এই তিন জন ছাড়াও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বরাবরের মতো সালাউদ্দিনে ভরসা রেখেছেন, গতবারের মতো এবারও রাজিন সালেহ আছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের আর দুর্দান্ত ঢাকার কোচিংয়ের ভার খালেদ মাহমুদ সুজনের কাঁধে। একমাত্র ব্যতিক্রম ফরচুন বরিশাল, তারা নিয়ে এসেছে বিদেশি নামি কোচ ডেভ হোয়াটমোরকে। তবে এই টিমে আছেন দেশি কোচ মিজানুর রহমান বাবুলও।

আরো পড়ুন:

গাঁটের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে দল চালান ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা। যে কোনো মূল্যে তারা ভালো ফলই প্রত্যাশা করেন দলের কাছে। নামি ক্রিকেটারদের মতো নামি কোচেও ঝোঁক ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ঝোঁক কমেছে। তা না হলে কিভাবে দেশি কোচদের উপর কেন আস্থা রাখা হয়? এটা জানতেই রাইজিংবিডির আলাপ হয় খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুরের কোচের সঙ্গে। 

সিলেট পর্বে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচ শেষে এই তিনটি দলই আছে শীর্ষে। তার মধ্যে একমাত্র দল হিসেবে কোনো ম্যাচে না হেরে তালহার খুলনা আছে শীর্ষে। মাত্র এক ম্যাচ হেরে চট্টগ্রাম আছে দ্বিতীয় স্থানে আর পাঁচ ম্যাচে তিন জয়ে রংপুর আছে তৃতীয় স্থানে।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ তুষার ইমরান (ডানে)। 

প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোচিং করা তুষার বলেন, ‘ক্রিকেট খেলেছি বহুদিন ধরে। মর্ডান ক্রিকেটের সঙ্গে আমি পরিচিত। ফ্র্যাঞ্চাইজি আমার উপর আস্থা রেখেছে। আমার চ্যালেঞ্জটা ছিল বেশি। গতবার এই টিমটা ভালো করতে পারেনি। ফ্র্যাঞ্চাইজির বিশ্বাস ছিল, ক্রিকেটটা আমি বুঝি।’

‘দেশি হোক বিদেশি হোক, আমি যে পরিকল্পনা করছি তারা সেটি মাঠে বাস্তাবায়ন করছে। আমাদের সফলতা আসছে এ কারণে। আমার দলে যারাই আছে তাদের শেখার আগ্রহ আছে। এ কারণে তারা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারছে। আমি খুব উপভোগ করছি’-আরও যোগ করেন তুষার।

রংপুরের কোচ সোহেল বলেন, ‘প্রথমে আমি বলবো দেশি কোচদের উপর ফ্র্যাঞ্চাইজি আস্থা রাখছে এটা একটা ভালো দিক। আমাদের দেশের উইকেট বুঝতে পারা বিদেশি কোচদের জন্য বড় দায়, এটা দেশি কোচরা ভালো পারেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশে কোচিং করায় আমরা বুঝি তাদের (ক্রিকেটার) কোথায় খেলালে ভালো হবে। বিদেশিরা হুট করে সেটি বুঝবে না। আমরাও ভালো কাজ করছি, এতে আমাদের উপর আস্থা বাড়বে।’

বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করার কারণে আরও আস্থা বাড়বে জানিয়ে সোহেল বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ম্যান ম্যানেজমেন্ট একটা বড় বিষয়। এখানে অনেক তারকা ক্রিকেটার খেলে। তাদের সঙ্গে তথ্য, জ্ঞান বিনিময় হয়। এটা আমাদের আরও সমৃদ্ধ করবে।’

এর আগে খুলনার সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা তালহা বলেন, ‘দেশি ক্রিকেটারদের সবাইকেই তো চিনি। কোনো পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। বিদেশি যারা আছেন তাদের মধ্যে এভিন লুইসের সঙ্গে আমার অনেক আগেই পরিচয়। এ ছাড়া ফাহিম আশরাফ, মোহাম্মদ নাওয়াজসহ বিদেশি যারা আছে তারা সবাই কো-অপারেটিভ। কোনো বাধা নেই আমার।’

খুলনা টাইগার্স কোচ তালহা জুবায়ের (ডানে)।

দেশি কোচরা বিভিন্ন পর্যায়ে ভালো করলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আস্থা নেই তাদের উপর। যুব দল হতে শুরু করে, হাইপারফরম্যান্স দল, নারী ক্রিকেট দল, জাতীয় দলের সব বিভাগেই বিদেশি কোচে ভরা। বিপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্টে দেশি কোচদের পারফরম্যান্সে বিসিবির ধারণা পাল্টাবে কি না? 

এমন প্রশ্নে তালহা বলেন, ‘বয়স ভিত্তিক দল পর্যন্ত দেশি কোচরাই থাকেন। যুব দল থেকে বিদেশিদের হাতে দায়িত্ব। কোনো বিদেশি কোচ বলতে পারবে না তারা কোনো খেলোয়াড় তৈরি করে দিয়েছে। বিদেশিরা দায়িত্ব নিয়ে হঠাৎ করে বদলে দিতে পারে না। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। ভালো করছি। দেশি কোচ না বিদেশি কোচ সেটি বিসিবির বিষয়। তবে ধারণা বদলাবে কিছুটা হলেও।’

তালহার মতো এই প্রশ্নে একই সুরে তাল মিলিয়েছে সোহেল-তুষারও। এ ছাড়া সাফল্যও কথা বলছে দেশি কোচদের পক্ষে। বিপিএলের সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লার চার ট্রফি এসেছে সালাউদ্দিনের অধীনে। আর রাজিন সালেহর অধীনে গতবার সিলেট রানার্স আপ হয়েছে। দেশি কোচের উপর আস্থা রাখা নিয়ে রাইজিংবিডির কথা হয় চট্টগ্রামের মালিক দাঁতো কে এম রিফাতুজ্জামানের সঙ্গে। 

রিফাতুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়া হয় কোচ এবং ক্রিকেটারদের মধ্যে। অল্প সময়ে বিদেশি কোচ এসে খুব একটা উন্নতি করতে পারেন না। আমাদের দেশে ভাষার একটা বাধা আছে। বিদেশি কোচদের ভাষাও অনেকে বুঝতে কষ্ট হয়। দেশিদের সেটি হয় না। আমাদের কোচরা দেশি ক্রিকেটারদের ভালো বোঝেন, তারাও বড় ভাই হিসেবে মানে। এখন পর্যন্ত আমি খুশি। টিম ভালো করলে সব ভালো।’

তবে দেশি কোচদের মধ্যে একটা কমতি দেখছেন রিফাতুজ্জামান, ‘দেশি-বিদেশি কোচ সবাই ভালো। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে বিদেশি কোচরা কিছু বিজনেস অ্যানালেটিক্যাল টার্ম (ব্যবসায়িক বিষয়) কোচিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসে। যেটা আমি দেশি কোচদের মধ্যে, যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছে তাদের মধ্যে দেখতে পাইনি।’

সিলেট/রিয়াদ/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়