অফ ফর্মে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা, নির্বাচকরা উদ্বিগ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবার তারকা মানের বিদেশি খেলোয়াড় খুব একটা আসেনি। যারা এসেছেন তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের তুলনা চলে এক পাল্লায়। আলাদা করার মতো তেমন কিছু নেই। কিন্তু উদ্বেগ্নজনক বিষয়, বিপিএলে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স। যারা নিয়মিত টি-টোয়েন্টি খেলে আসছেন তারা যেন পারফর্ম করাই ভুলে গেছেন।
ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান নেই। বোলারদের নেই উইকেট। এছাড়া ফিল্ডিংটাও রয়ে গেছে আড়ালে। ব্যবধান গড়ে দেওয়ার পারফরম্যান্সের ঘাটতি, ম্যাচ পাল্টে দেওয়ার মতো ছোট-বড় ইনিংস নেই, বোলিংয়ে এক-দুই ওভারের দুর্দান্ত স্পেল নজরেই আসেনি। অথচ টি-টোয়েন্টি বছরে বিপিএল আর্শীবাদ হয়ে এসেছে ক্রিকেটারদের কাছে। জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা যেমন আড়ালে, প্রতিশ্রুতিশীল কেউ-ই নজর কাড়তে পারছেন না। ফলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স রীতিমত হতাশার।
জাতীয় দলের দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। লিটন ৪ ম্যাচে রান করেছেন ৩৫। শান্ত ৫ ম্যাচে ৬৯। দুজনের আউটের নেই কোনো ব্যাখ্যা। বোলারকে উইকেট উপহার দিয়ে আসছেন প্রতিবারই।
আরেক ওপেনার রনি তালুকদার রংপুর রাইডার্সের শেষ ম্যাচে জায়গা হারিয়েছেন। ৪ ম্যাচে রনি করেছেন কেবল ৩৭। গত বিপিএল দিয়ে লাইমলাইটে আসা তাওহীদ হৃদয় ৪ ম্যাচে করেছেন ৯৫ রান। শেষ ম্যাচে কুমিল্লাকে জেতাতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভুল সময়ে আউট হয়ে দলকে ডুবিয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের থেকে এখনো যুৎসই পারফরম্যান্স না আসায় হতাশ স্থানীয় কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ‘শান্ত, লিটন, তাওহীদের থেকে এখনো পারফরম্যান্স না আসা উদ্বেগজনক। একাধিক ম্যাচ তারা খেলে ফেলেছেন। এক দুইটা ইনিংস, পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো ইনিংস তাদের থেকে অবশ্যই আসা উচিত ছিল। এখন বাকিদের দিকে নজর দিতে হবে।’
জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররাও যে খুব ভালো করছেন তা বলার উপায় নেই। তানজিদ তামিম ৫ ম্যাচে ১৩২ রান। এনামুল হক বিজয় দুটি ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলার পরও রান ৪ ম্যাচে ১৩০। জাকির হাসান ৫ ম্যাচে ১৮৯ রান করলেও তার দল এখনও জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ।
তাদের নিয়ে নাজমুল আবেদীন বলেছেন, ‘এনামুল জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার ভেতরে আছে। দল ভালো করছে। নিজের আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। বাকিদেরও নিজেদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।’
তবে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা ঠিকই পারফরম্যান্সের পাখা মেলে ধরেছেন। মুশফিকুর রহিম ৫ ম্যাচে ২০২ রান করেছেন। মাহমুদউল্লাহ ৫ ম্যাচে ১০৪ রান করেছেন। যেখানে শেষ দিকে নেমে নিয়মিত ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলছেন। দলের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।
বোলিংয়ে বিবর্ণ বোলাররা। পেসারদের বোলিংয়ে নেই বিষ। স্পিন একেবারেই এলোমেলো। তাসকিন আহমেদ এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৪ উইকেট। হ্যাটট্রিক দিয়ে বিপিএল শুরু করে শরিফুলের শিকার ৬ উইকেট। সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ। শেখ মেহেদী। নাজমুল আবেদীন যোগ করেছেন, ‘উইকেটের মান অধারাবাহিক। ঢাকায় আমরা দেখেছি দিনের ম্যাচে ও রাতের ম্যাচে তারতম্য ছিল। ঢাকা থেকে সিলেটের উইকেট ভালো ছিল। আমি পারফরম্যান্স না পাওয়ার জন্য ক্রিকেটারদের কাঠগড়ায় দাড় করাবো। এখানে উইকেট খুব একটা বড় বিষয় নয়।’
ক্রিকেটোরদের পারফরম্যান্স আরও ভালো না হওয়ার পেছনে মানসিকতার ঘাটতি দেখছেন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক, ‘এখন পারফরম্যান্স করাটা মানসিকতার বিষয়। কে কিভাবে নিজের খেলাটাকে দেখছে। আপনি যদি একটা পর্যায়ে গিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যান তাহলে আপনার আর উন্নতি হচ্ছে না। আর যদি আপনার ওই ক্ষুধাটা থাকে আপনি আরও আরও আরও ভালো করবেন তাহলে আপনি পারবেন আপনাকে ছাড়িয়ে যেতে। ওই বিশ্বাসটা তৈরি হয়নি সম্ভবত এখনো। খেলোয়াড়দের মধ্যেও এটা হচ্ছে না। কিংবা ম্যানজেমেন্ট বা কোচ যারা আছেন তারাও ওই আত্মবিশ্বাসটা ওদেরকে দিতে পারছেন না।’
বিপিএলের সামনের ম্যাচগুলো ক্রিকেটারদের জন্য খুব কঠিন হবে বলে বিশ্বাস করেন রাজ্জাক, ‘বিপিএল এতোদিন একটা পর্যায়ে ছিল। এখন প্লে অফের লড়াই শুরু হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠের উত্তেজনা, লড়াইটা বেশি হবে বলে আশা করছি। আশা রাখছি, এখন ক্রিকেটাররা ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে আসবেন এবং পারফর্ম করবেন। সামনে তাদের পারফরম্যান্স গভীরভাবে দেখা হবে। নতুন কাউকেও আমরা নজরে রাখবো। যদি কেউ ভালো করে কেন তাহলে আমরা তাকে সুযোগ দেব না।’
ইয়াসিন/আমিনুল