ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

স্লগ ওভারের অভাব মেটাবেন শহীদুল 

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
স্লগ ওভারের অভাব মেটাবেন শহীদুল 

স্লগ ওভারে বোলিং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিভীষিকাময় এক অধ্যায়। যেখানে সাফল্যের থেকে ব্যর্থতা বেশি। জয়ের উদযাপনের থেকে পরাজয়ের গ্লানি বেশি। আনন্দের চেয়ে বেদনা বেশি। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দোর্দণ্ডপ্রতাপে বোলারদের নাকানিচুবানি খাওয়ার নিয়মিত ঘটনা। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ বেরিয়ে গেছে এলোমেলো বোলিংয়ে, নির্বিষ আক্রমণে কিংবা স্নায়ু স্থির রাখতে না পারে। দুশ্চিন্তার জায়গায় ভরসা হয়ে উঠতে পারেন পেসার শহীদুল ইসলাম। যার বোলিং স্লগ ওভারে একেবারে মানানসই। পরিসংখ্যানও যার পক্ষে কথা বলছে।

কেবল একবার নয়, ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় তিনটি ফাইনালে শেষ ওভারে নিজ দলের জয়ের নায়ক হয়েছেন শহীদুল। যার দুটি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে, একটি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। প্রথমবার ২০২০ সালে জেমকন খুলনার হয়ে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ৬ বলে ১৬ রান তাড়ায় দলকে ফাইনাল জেতান ৫ রানে। এক বছর বিরতি দিয়ে পরের বিপিএল ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে শেষ ওভারে ম্যাচ জেতান ১ রানে। সেবার পরিস্থিতি ছিল আরো কঠিন। ফরচুন বরিশালের ৬ বলে প্রয়োজন ছিল ১০ রান। ৮ রান দিয়ে শহীদুল কুমিল্লার নায়ক।

এর আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ফাইনালেও তার এমন কিপটে বোলিংয়ের রেকর্ড আছে। ঢাকা লিগ ফাইনালে আবাহনীর হয়ে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে ১৬ রান পুঁজি করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ৮ রানে। গতকালও মিরপুরে স্লগ ওভারে শহীদুলের কিপটে ও মাথা খাটানো বোলিংয়ের নিদর্শন মিলল। যেখানে পরপর দুই ওভারে তার শিকার তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আব্বাস আফ্রিদি। এবার শুধু স্লগ ওভারেই নয়, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পেসার মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ৪ ওভারে ১৩ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচের কঠিনতম মুহূর্তে ছিল তার উইকেট মেডেন ওভার। পার্থক্য গড়ে দেওয়া বোলিং স্পেলের কারণে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।

স্লগ বোলিং নিয়ে তার মাথা বেশ খোলা। নিজের কাজটাতেই পূর্ণ মনোযোগ। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান তার বিরুদ্ধে সফল হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত নিজের পরিকল্পনাতেই অটল শহীদুল। ব্যাটসম্যান সফল হলে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয় তার পরিকল্পনা। সঙ্গে স্নায়ু স্থির রাখার যে বিশেষ প্রতিভা তার রয়েছে তা তাকে সফলতার পথে এগিয়ে নিচ্ছে বলে বিশ্বাস করেন, ‘স্লগে শেষ দিকে সে-ই জেতে যার মাথা ঠাণ্ডা থাকে। সেটা ব্যাটসম্যান হোক বা বোলার হোক। তার সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমি চেষ্টা করি ঠাণ্ডা মেজাজে যেন নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যেন উনারা (মাহমুদউল্লাহ, শোয়েব মালিক, মুশফিক) জোনে যেন বল না পায়। চেষ্টা করেছি। হয়ে গেছে।’

নিজের সফলতা নিয়ে শহীদুল যোগ করেন, ‘হ্যাঁ। শেষ কয়েক বছরে বিপিএলের পরিসংখ্যান বা টি-টোয়েন্টিতে…শেষের দিকে আমার বোলিং ভালো হচ্ছে। পরিকল্পনায় স্থির থাকি। এজন্য হয়তো সফলতা আসছে। এজন্য ভালো হচ্ছে। ওই সময়ে আমার বেসিক চিন্তা থাকে, আমি যেটা পারি সেটাই আমি করবো। খুব স্বাভাবিক পরিকল্পনা। আগেই তো বললাম মাথা ঠাণ্ডা রেখে যদি কাজ করা যায় তাহলে ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্যুতি ছড়িয়ে শহীদুল জাতীয় দলে ডাকও পেয়েছিলেন। খেলেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে এক টি-টোয়েন্টি। যেখানে তার সাফল্য ছিল মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেট। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে তাকে দলে রাখা হয়েছিল। সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরিতে ছিটকে যান। ফিরে এসে তাকে আফগানিস্তান সিরিজে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু ডোপিং আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তাকে ১০ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি।

চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অসুস্থতার কারণে যে ওষুধ সেবন করেন সেটিতে ছিল ক্লোমিফিন। তাতেই বেঁধে যায় বিপত্তি। আইসিসির চোখে তা বিরাট অপরাধ। এজন্য ১০ মাস নিষিদ্ধ করা হয়। আইসিসি অবশ্য পুরো ব্যাপারটিতে শহীদুলের দিক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ‘অবহেলা বা দোষ’ খুঁজে পায়নি । নিজের পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য তিনি এমন করেননি, এ ব্যাপারেও আইসিসিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন শহীদুল।

২০২৩ সালের ২৮ মার্চ থেকে আবার খেলায় ফেরেন। ঢাকা লিগ দিয়ে মাঠে ফেরার পর জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বিসিএল খেলে এখন বিপিএল খেলছেন। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স তাকে রিটেইন করে বিশ্বাস রেখেছিল। শহীদুল সেই প্রতিদান দিয়ে দলের পঞ্চম জয়ের নায়ক হয়েছেন। সেই রাতে পুরোনো ভুলের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলেন, ‘ওদিকে আর যেতে চাচ্ছি না। এখন চেষ্টা করছি যেন ভালো করে শুরু করতে পারি।’ 

ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়