ঢাকা     রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে তাসকিনের ‘বোধোদয়’

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:১৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে তাসকিনের ‘বোধোদয়’

বিপিএলের প্লে’অফে তাসকিন আহমেদ শেষ কবে খেলেছেন মনেও করতে পারলেন না? ‘আমি আসলেও ভুলে গেছি। এতোবার এতো দলে খেলেছি। শেষ কয়েক আসরে তো যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। তাই ভুলে গেছি।’

শেষ কয়েক বছরে তাসকিন আহমেদ নিজের সঙ্গে লড়াই করে নিজের চ্যালেঞ্জে জিতে গেছেন ভালোভাবেই। কিন্তু বিপিএল তার কাছে যেন এক গোলকধাঁধার নাম। বিপিএলে শেষ কয়েক বছরে এমন দলগুলোতে খেলছেন যেখানে খেলার থেকে বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে তাকে। প্রতিবারই তাকে থাকতে হয় পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। হারের একেকটি হতশ্রী অধ্যায় যোগ হয় তার নামের পাশে। যার দায়টা তার নিজের ওপরও চলে আসে।

বারবার তাসকিন একই ভুল করছেন। অন্তত শেষ তিন আসরে। প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগে সরাসরি চুক্তিতে খেলোয়াড় নেওয়ার নিয়ম থাকায় তাকে বেশি পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় তাসকিন সেই প্রস্তাব লুফেও নেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজি গড়পড়তা দল করছে। তাতে তাসকিনের লড়াইটা হয়ে উঠে অন্যরকম। ভালো মানের খেলোয়াড়, সতীর্থ না পাওয়ায় দল পারফর্ম করতে পারে না। ফলে তাসকিনের পারফরম্যান্স থেকে যায় আড়ালে।

বড় দল কিংবা বিপিএলে নিয়মিত শক্তিশালী দল যারা তৈরি করে সেসব দলে খেললে দেখা যায় এক দুই ম্যাচ খারাপ করলেও ফিরে আসার সুযোগ থাকে। সঙ্গে নিজের নিষ্প্রভ দিনে অন্য কেউ দলকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু পিছিয়ে থাকা দলগুলোতে লড়াই করার মতো তেমন খেলোয়াড় থাকে না। প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ মানসিকতাও থাকে না অনেক ক্রিকেটারের। তাতে তারকা মানের ক্রিকেটারদের বাড়তি চাপ নিতে হয়। সেই চাপ নিতে গিয়ে কখনো তারা সফল হন। কখনো ব্যর্থ হন। কিন্তু দলগত খেলার কারণে তাদের পারফরম্যান্স থেকে যায় তলানিতে।  তাই বড় দলে না খেলার আফসোস বেড়ে যায়। তাসকিনও শেষ তিন মৌসুমে এমন কিছু অনুভব করছেন।

‘আমি অনুভব করি এটা। মাঝে মাঝে এই অনুভবটা হয় যে…আমার দল এই নিয়ে তিনটি বছর প্লে অফে যায়নি। রেজাল্টও ভালো করেনি। মাঝে মাঝে খারাপ লাগে। আমি সেদিনও বলেছিলাম, আইকন বা ডিরেক্ট সাইনিং হিসেবে একজনকে নেওয়া যায়। তখন দেখা যায় বেটার বেনিফিটে আমি ডিরেক্ট সাইনে যাই। পরে দল যখন ওভাবে রেজাল্ট করে না তখন খারাপ লাগে। এখন কিছু করার নেই আসলে।’ 

ছয় আসর হলো তাসকিন প্লে’অফ খেলতে পারছেন না।  বিপিএলের গত আসরে ঢাকা ডমিনেটরস তাকে সরাসরি চুক্তিতে দলে নেয়। ১২ ম্যাচে ৩ জয় ও ৯ হারে ষষ্ঠ দল হয়েছিল ঢাকা। তাসকিন ৯ ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। গড় ছিল ২০.৬। ইকোনমি ৬.০২।

এর আগে অষ্টম আসরে সিলেট সানরাইজার্সের হয়ে কেবল ৪ ম্যাচ খেলেছিলেন। ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ৩৫ লাখ টাকার পারিশ্রমিকে তাসকিনকে দলে নেয় সিলেট। চট্টগ্রাম পর্ব চলাকালীন জানা যায়, পারিশ্রমিকের পুরো টাকা না পেলে খেলবেন না তাসকিন। যদিও বিসিবি জানায়, নিয়ম অনুযায়ী টুর্নামেন্ট চলাকালীন তাসকিনকে ৭০ শতাংশ পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি। পরে তাসকিন ও সিলেট কর্তৃপক্ষ উভয়েই জানায়, পারিশ্রমিকের টাকা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। তা নিরসনও হয়ে গেছে। কিন্তু কাঁধের ইনজুরিতে ৪ ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি। সেবার সিলেট ১০ ম্যাচে মাত্র ১ জয় পেয়েছিল। ৮ দলের বিপিএলে তারা হয়েছিল শেষ দল।

সপ্তম আসরে তার দল ছিল রংপুর রেঞ্জার্স। প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে তাকে নিয়েছিল রংপুর। দলটাও ভালো ছিল। কিন্তু ১২ ম্যাচে ৫টির বেশি জয় পায়নি। তাসকিন ৮ ম্যাচে ২১.৬৩ গড় ও ৯.১৫ ইকোনমিতে ১১ উইকেট পেয়েছিলেন।

বিপিএলের ষষ্ঠ আসর ছিল তাসকিনের। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে আয়োজিত হওয়া আসরে তাসকিন স্রেফ মুগ্ধ করেন। ১২ ম্যাচে পেয়েছিলেন ২২ উইকেট। বোলিং গড় ছিল ১৪.৪৫। ইকোনমি ৮.৫৫। সেবার ওয়ার্নারের নেতৃত্বে খেলে তাসকিন ছিলেন নির্ভার। পারফরম্যান্সও ছিল দ্যুতিময়। কিন্তু তার দল হয়েছিল ষষ্ঠ। পায়ের চোটের কারণে বিপিএল শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে বিশ্বকাপের আগে ফিট হলেও তখন আর যেতে পারেননি।

চতুর্থ ও পঞ্চম আসরে তাসকিন খেলেন চিটাগং ভাইকিংসে। চতুর্থ আসরে তাসকিনরা খেলেছিল কোয়ালিফায়ার। পঞ্চম আসরে আট দলে হয়েছিল সপ্তম। তাসকিনের পারফরম্যান্স আহামরি ভালো ছিল না। চতুর্থ আসরে ১১ ম্যাচে ১৫ উইকেট। পঞ্চম আসরে ১৪ উইকেট।

দলগত ব্যর্থতা যে পারফরম্যান্স বের করে আনতে পারে না তা বোঝা গেল তাসকিনের কথায়, ‘এটা তো টিম গেম। দুজন-চারজন কোনো না কোনো জায়গায় খারাপ খেলেই ফেলছে। নাম নিব না। কারণ এটা টিম গেম। আজ এ খারাপ করেছে, কাল ও। একদিন আমি। এভাবে আমরা খারাপ করেছি। জেতা জেতা ম্যাচগুলো দুর্বলতার কারণে হেরে গেছি। এটা অবশ্যই ভালো অনুভূতি নয়। আমাদেরও পরিবার আছে। তারাও জিজ্ঞেস করে, জিততে পারছ না কেন? ব্যাটিং বা বোলিং কোন জায়গায় হেরেই যাচ্ছে।’

পেছনের কথা ভুলে তাসকিন এখন কেবল সামনে তাকিয়ে, ‘ছন্দ…এখন ভালোর পথে। শতভাগ দিয়ে সবকিছুতে চেষ্টা করছি। প্রক্রিয়া মেনে চলছি। হাতে শুধু এটাই আছে। ভালো করার চেষ্টা করা সর্বোচ্চটা দিয়ে। আমার বিশ্বাস আমি যদি সৎ পথে থাকি, সঠিক পথে থাকি অবশ্যই সফলতা আবার আসা শুরু হবে।’

ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়