‘সবাই আইপিএলে যেতে চায়, তবে আমার দর্শন ভিন্ন’
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম
গুগলিতে প্রথম বলেই কুপোকাত চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টম ব্রুস। এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিতেই দুই হাত প্রসারিত করে ভোঁ দৌড়! রঙিন বাবরি চুল উড়ছিল বাতাসে, তৈরি হয় মোহনীয় দৃশ্য। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ৪৪ বছর বয়সী ইমরান তাহিরের অভিষেকটা হয় এমন দুর্দান্ত, প্রথম বলে উইকেট নিয়ে। এর আগে আরেকবার বিপিএল খেলতে এসেও মাঠা নামা হয়নি, এবার যেন প্রথম বলে উইকেট নিয়ে সেই আক্ষেপটা মেটালেন।
৪৪ বছর বয়সও তাহিরের বাধা হতে পারেনি। যে বয়সে ক্রিকেটাররা কোচিং কিংবা ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যান, সেই বয়সে এই লেগ স্পিনার এখনো মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসএ টোয়েন্টির পর তাকে দুই ম্যাচের জন্য উড়িয়ে আনে রংপুর রাইডার্স। ঢাকায় প্রথম ম্যাচ খেলে আগামীকাল চট্টগ্রামে খেলবেন শেষ ম্যাচ। চার শতাধিক টি-টোয়েন্টি খেলা এই ক্রিকেটার আইপিএল-বিপিএলসহ নিজের ক্রিকেট দর্শন নিয়ে কথা বলেছেন রাইজিংবিডির সঙ্গে। পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
বিপিএলে প্রথমবার ম্যাচ খেলছেন, কেমন মনে হচ্ছে?
ইমরান তাহির: দেখুন, মাত্র একটা ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু খুবই ভালো অভিজ্ঞতা বলতেই হয়। খুবই পেশাদার দল। লোকজন খুব ভালো। আমি এর মধ্যেই সেটা অনুভব করতে পারছি। আমি এটা ধরতে পারি, কারণ আমি সারা বিশ্বে ক্রিকেট খেলি। কোথাও খেলতে গেলে পরিবেশটা যদি খারাপ লাগে সেটা আমি আগেই বুঝতে পারি। এটা পুরোটাই অভিজ্ঞতা। আমি এখানে গত তিন-চার দিন ধরে আছি। এখানকার লোকজন খুবই পেশাদার। আমি রংপুরকে ধন্যবাদ দিতে চাই সুযোগটা দেওয়ার জন্য।
স্থানীয় ক্রিকেটারদের কেমন দেখছেন?
ইমরান তাহির: স্থানীয় প্রতিভা যারা থাকে, সেটা যে কোন দলেই হোক না কেন, এটা আসলে দারুণ অভিজ্ঞতা। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন, এ কারণেই কিন্তু রংপুর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। কারণ শুধু বিদেশি ক্রিকেটার পারফর্ম করলে দল ভালো করবে না, স্থানীয়দেরও করতে হবে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এখানে এলাম, সেখানে উইকেট ভিন্ন, খেলোয়াড়ও ভিন্ন ছিল। আমার মনে হয়েছে এখানকার খেলা অনেক উঁচু মানের। আমাকে এখানেও সেই মানটা ধরে রাখতে হবে। সব মিলিয়ে ভালো লাগছে। বুঝতে পারছি কেন রংপুর শীর্ষে আছে।
আপনার দেশেও ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টুর্নামেন্ট এসএ টি-টোয়েন্টি হয়ে গেল। আপনার নিজের দেশের টুর্নামেন্ট কোথায় দেখছেন?
ইমরান তাহির: আমার মনে করি আইপিএলের পরে এসএ টোয়েন্টি এর মধ্যেই বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা লিগে পরিনত হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। অনেকটা বিপিএলের মতোই, মাঠ ভরা দর্শক, দর্শকের উন্মাদনা আছে। যে কোন টুর্নামেন্ট সফল হওয়ার জন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। খেলার মান দক্ষিণ আফ্রিকার মতো এখানেও বেশ উঁচুতে।
এখানে উইকেট নিয়ে একটা সমালোচনা হয়ে থাকে। এসএ টোয়েন্টির উইকেট কেমন দেখেছেন?
ইমরান তাহির: প্রায় সব লিগেই এখন মাঠের সীমানা বেশ ছোট। বোলার হিসেবে এ নিয়ে আমার অভিযোগ আছে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব বেশি স্পিন সহায়ক উইকেট পাই না। সবসময়ই ফ্ল্যাট উইকেট, ছোট বাউন্ডারি। বোলার হিসেবে আপনাকে অনেক বেশি দক্ষ হতে হবে। মানিয়ে নিতে হয়।
চট্টগ্রামের উইকেট স্পিনিং প্রত্যাশা করছেন?
ইমরান তাহির: কোন সম্ভাবনা নেই (হাসি)। আমি এর মধ্যেই উইকেট দেখে এসেছি। এখানে মাঠের বাইরে কমলা ও আপেলই শুধু ঘুরাতে পারব। আর কিছু নয় (হাসি)।
বিশ্বের অন্য লিগগুলোর তুলনায় বিপিএলের অবস্থান কোথায় মনে করেন?
ইমরান তাহির: আমি মনে করি, বিশ্বের যে কোনো জায়গায় খেলতে যাও না কেন, মানুষ আইপিএল নিয়ে বেশি কথা বলবে। এটার বিশালত্ব অনেক বড়, সবাই সেখানে যেতে চায়। দিন শেষে, আমার কাছে বিষয়টা এমন; তারা ওখানে ক্রিকেট খেলছে, আমিও এখানে ক্রিকেট খেলছি। স্থানীয় মানুষের চাহিদাই বলে দেয় লিগটা কত বড়।
আমি ঢাকায় গ্যালারি পুরো দেখেছি, এখন এখানে আসছি। এখানেও ভালো দর্শক প্রত্যাশা করছি। আমি এখানে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেছি, অনেক দর্শক ছিল। আমার কাছে লিগের মান হচ্ছে স্থানীয় ক্রিকেটারদের মেধা (দেখানোর জায়গা)। অনেক বিদেশি ক্রিকেটার এখানে আসে-যায়। যেসব প্লেয়াররা এখানে আসতে চায়, তারা পুরো বিশ্বজুড়ে খেলে। এটা দ্বারাই লিগের মান বোঝা যায়।
কোনো লক্ষ্য নিয়ে বিপিএলে এসেছেন?
ইমরান তাহির: আমার যদি কোনো ব্যক্তিগত লক্ষ্য না থাকতো, আমি এখানে আসতাম না। আমি বাসায় বসে চা খেতাম, খেলা দেখতাম আর বলতাম ভালো করছো তোমরা। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমি এখানে এসেছি লক্ষ্য নিয়ে, সেই লক্ষ্য হলো পারফর্ম করা। দলের চাহিদা অনুষায়ী আমি যেটা করতে পারছি, তাতে আমি খুশি। এই সুযোগটা আমি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি, আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তোমরা জানো, আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারবো, ফল আমাদের হাতে নেই।
বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার আপনার দলে। তার সঙ্গে বিপিএলে আসার আগে কোনো আলাপ হয়েছিল কি না?
ইমরান তাহির: এখনো ব্যক্তিগতভাবে হয়নি। সংসদ সদস্য হওয়ায় আমি তাকে এখনো অভিনন্দন জানাইনি। আগামীকাল তাকে অভিনন্দন জানাতে হবে। অনেক ব্যস্ততা ছিল, দলে এসেছি, খেলেছি। সাকিবের মতো এমন বড় ক্রিকেটার দলে থাকা দারুণ বিষয়, সে বিশ্বমানের একজন অলরাউন্ডার।
৪৪ বছর বয়সেও আপনি মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিভাবে ম্যানেজ করছেন নিজেকে?
ইমরান তাহির: অনেক সময় আপনি দ্রুত (আগে) সুযোগ পাবেন না। যদি আপনি দেরিতে সুযোগ পান, তাহলে এই সুযোগ হারাতে পারেন না, আমি এটাই বিশ্বাস করি। যে কোনো দল আমাকে যে দায়িত্ব দেয় আমি সেটাই পালন করি। যতক্ষণ পর্যন্ত দলগুলো আমাকে দায়িত্ব না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি খেলা ছাড়ার কথা ভাবছি না। আমি বয়স দেখি না, এটাই আমার ব্যক্তিত্ব।
চট্টগ্রাম/রিয়াদ/বিজয়