কালো বলে জাকের আলীকে মূল্যায়ন করে না বিসিবি, সালাউদ্দিনের অভিযোগ
ক্রীড়া প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম থেকে || রাইজিংবিডি.কম
দুর্দান্ত এক জয়ের পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন যেন প্রস্তুতি নিয়েই সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন। শিষ্য জাকের আলী অনিকের বঞ্চিত হওয়া নিয়ে নিজেই মুখ খুলবেন। দেশসেরা এই কোচ শুধু মুখই খুললেন না, সংবাদ কর্মীদের প্রশ্নের আগেই নিজ থেকে জাতীয় দল নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডকে এক প্রকার ধুয়ে দিলেন।
তারকা বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশি ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ভর করে দাপট দেখিয়ে চলছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে মিডল অর্ডার উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকেরের দায়িত্বশীল ব্যাটিং নজর কেড়েছে। এই জাকেরকে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজের টি-টোয়েন্টি দলে প্রত্যাশা করেছিলেন সালাউদ্দিন। সুযোগ না পাওয়ায় সালাউদ্দিন মন্তব্য করেন, জাকের কালো বলে তাকে ক্রিকেট বোর্ডও দেখে না!
‘জাকেরের কথাটা সবসময় আপনারা ভুলে যান, আপনারা কেউ কিন্তু আসলে কখনোই জিজ্ঞেস করেন না। ছেলেটার হয়ত চেহারা একটু কালো, এই কারণে আমার মনে হয় বোর্ডও তাকে দেখে না ঠিকমতো। আপনারা ছয় নম্বর, সাত নম্বরে প্লেয়ার খোঁজেন। এই ছেলেটা লাস্ট কয়েকটা ম্যাচ থেকে খুবই ভালো খেলতেছে। তার স্ট্রাইক রেট যদি দেখেন, আর সে প্রতিটা দিনই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রানটা করে দিতেছে এবং সে অনেক সেন্সিবল।’
খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে গতকাল চট্টগ্রামে ৭ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে কুমিল্লা। এ দিন পাঁচে নেমে জাকের ৩১ বলে ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। এ ছাড়াও টুর্নামেন্টে মিডল অর্ডারে কুমিল্লার প্রাণ হয়ে খেলছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে ৬৭ গড়ে ১৪৯ রান করেন জাকের।
সালাউদ্দিনের মতে মিডল অর্ডারে বাংলাদেশ দলের হয়ে ভূমিকা রাখতে পারতেন জাকের। এ সময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের প্রসঙ্গ সামনে এনে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি গতকাল বাংলাদেশ টিম দেখলাম। আপনি ৫ টা ওপেনার রাখছেন, মিডল অর্ডারে ২ টা ব্যাটসম্যান মনে হয়। একটা সুবিধা আছে হয়ত, সবসময় বাংলাদেশ ওপেনিংই করবে, ১৬-১৭ ওভার পর্যন্ত ওপেন করবে, এটা একটা সুবিধা হতে পারে। তবে রাইট জায়গায় রাইট প্লেয়ার পিক করাটা খুব জরুরি।’
‘আমার মনে হয় এই পজিশনের জন্য (মিডল অর্ডারে) সে (জাকের) বাংলাদেশে ওয়ান অব দ্য বেস্ট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরে আমি যদি কোন ছেলেকে দেখি, তাহলে আমার মনে হয় এই ছেলেটা হচ্ছে সেরা। কারণ প্রতিদিনই সে আমাদের বাঁচাচ্ছে, প্রায়ই একটা ভালো জায়গায় নিয়ে আসছে। খুব সেন্সিবল ব্যাটিং করে। এমন নয় যে তার হাতে শট নেই। সে চারদিকেই মারতে পারে। পেসেও ভালো, স্পিনেও ভালো। রেকর্ডও ভালো। এ ধরনের ছেলেকে সুযোগ দেওয়া উচিত’-আরও যোগ করেন সালাউদ্দিন।
জাতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ না পেলেও এশিয়ান গেমসের মাধ্যমে তিনটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন জাকের। তিন টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৮। সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৪। আর ৬১ স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এই ব্যাটার ৭৫৯ রান করেন। আগের তুলনায় বর্তমানে জাকের আরও দায়িত্বশীল। চলমান মৌসুমে তার স্ট্রাইকরেট ও গড় দেখলেই তা স্পষ্ট!
নির্বাচকরা কি বুঝে দলে বানায় সেটা বুঝে আসে না সালাউদ্দিনের। বিপিএলের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে গড়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল। পজিশন বিবেচনায় না এনে যারা রান করেছেন তাদেরই স্কোয়াডে রেখেছে নির্বাচক কমিটি।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কী বুঝে টিম বানায় আমি বুঝি না। আপনি যেটা বললেন সেটাই হতে পারে। হয়তো রান দেখে…ওপর দিকে অনেক রান করেছে। টিমে নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু একটা ছেলে যখন পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে, সে ৫০ করবে না। সে ২০ রান করবে। হয়তো ৫ বলে ২০ রান করবে। দল জিতবে না হয় হারবে। ওইভাবে দলটা করলে ভালো হবে।’
এ দিকে কুমিল্লার রহস্যময় স্পিনার আলিস আল ইসলাম প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। আলিসকে আরেকটু সময় নিয়ে ডাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন সালাউদ্দিন, ‘হয়তো একটা রহস্যময় বোলার খুঁজছে। কিন্তু আরেকটু সময় নিয়ে ডাকলে ভালো হতো। ছেলেটাকে আরেকটু ম্যাচ খেলিয়ে…সে হয়তো নাও খেলতে পারে। পরিকল্পনায় আছে হয়তো তাই রেখেছে। তবে আরেকটু প্রমাণ করে এলে ভালো হতো।’
চট্টগ্রাম/রিয়াদ/বিজয়