সাকিবের জন্মতিথি, আনন্দের ফুলঝুরি
ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশের ক্রিকেটের বরপুত্র, দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মহাতারকা, ধ্রুবতারা, সাকিব আল হাসান। যার ব্যাটে রান ছুটলে আনন্দে ভাসে গোটা বাংলাদেশ। যার উইকেটে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।
সাকিব, শুধু-ই একটি নাম নয়, একটি ব্র্যান্ড। যে ব্র্যান্ড ক্রিকেট বিশ্বে চিনিয়েছে বাংলাদেশকে। লাল-সবুজের পতাকা উঁচু করে যিনি বারবার গর্বে ভাসিয়েছেন কোটি সমর্থককে। তিনিই দেখিয়েছেন বাংলাদেশেরও একজন ব্যাট-বল হাতে হতে পারেন বিশ্ব তারকা।
দীর্ঘ ১৮ বছর বিশ্ব ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো মহাতারকার জন্মদিন আজ। ১৯৮৭ সালের এই দিনে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন তিনি। আজ সাইত্রিশে পা রাখলেন।
শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান।
বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল হলো, ‘বাংলাদেশের জান, বাংলাদেশের প্রাণ, সাকিব আল হাসান’। এখন তা পরিণত হয়েছে স্লোগানে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে শোনা যায় একটাই নাম, সাকিব আল হাসান।
২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে অলরাউন্ডার হিসেবে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন সাকিব। এরপর টেস্টেও সেরা অলরাউন্ডারের আসন দখল করেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হয়ে অনন্য এক নজির স্থাপন করেন।
বাবা মাশরুর রেজা খুলনা বিভাগের হয়ে ফুটবল খেলেছেন। আর এক ফুফাতো ভাই খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলে। এরকম ফুটবল পাগল পরিবারেই বড় হয়েছেন সাকিব । বাবাও চাইতেন পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলে ফুটবল খেলুক। কিন্তু তরুণ বয়স থেকেই ফুটবল থেকে ক্রিকেট ভাল খেলতেন। গ্রামে গ্রামে ভাড়ায় ক্রিকেট খেলতেন সাকিব।
এই রকম এক ভাড়ায় খেলতে যাওয়া ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্সে সাকিব এক আম্পায়ারকে অভিভূত করেছিলেন। পরবর্তীতে ওই আম্পায়ারই সাকিবকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাবের (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। সাকিব তার স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দ্রুতগতির বোলিং অব্যাহত রাখেন, সেই সাথে প্রথমবারের মত স্পিন বোলিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সফল হন। ফলস্বরূপ, ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান এবং ওই ক্লাবে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন।
সেই থেকে শুরু। তারপর লম্বা একটা পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) প্রাক্তন শিক্ষার্থী সাকিব। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২০০৬ সালে জাতীয় দলে ডাক পান। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে সাকিব এখন বাংলাদেশ দলের মূল কাণ্ডারি। বিশ্ব ক্রিকেটের ব্র্যান্ড।
বাংলা সাহিত্যের প্রয়াত মায়েস্ত্রো হুমায়ূন আহমেদ একটি বই উৎসর্গ করেছিলেন। ভীষণ জনপ্রিয় সে আত্মজৈবনিক বইয়ের নাম ‘ফাউন্টেনপেন’। উৎসর্গপত্রে হুমায়ূন লিখেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এই তরুণকে চিনি না, কিন্তু মুগ্ধ হয়ে তার ক্রিকেট খেলা দেখি।’
ক্রিকেটের যশখ্যাতি কাজে লাগিয়ে সাকিব কত কিছুই না করছেন। ব্যবসায়িক পরিচয়কে সামনে এনেছেন বহু আগে। শেয়ার বাজারের মতো জায়গায় চলে তার কারবার। রাজনীতিতেও লিখিয়েছেন নাম। জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়ে সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ক্রিকেটার, রাজনীতির মাঠ সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে একটি বিষয় আজও তার নামের পাশে যুক্ত আছে। বিতর্ক। দুজনের সমান্তরাল অবস্থান। ফিক্সিং কাণ্ডে নিষিদ্ধ হওয়ার পর বেটিং কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতির ময়দানেও জড়িয়েছেন বিতর্কে। সঙ্গে পুরোনো বন্ধু তামিম ইকবালের সম্পর্কে প্রকাশ্যে নানা বিষয়ে কথা বলে সমালোচকদের নজরে আসেন।
সব কিছুকে ছাপিয়ে মাঠে তার পারফরম্যান্স ঠিকই বহমান। কখনো শান্ত নদীর মতো। কখনো তা উত্তাল পদ্মার মতো গর্জন করে। কখনো একেবারেই নিষ্প্রাণ। ঠিক যেন জীবনের মতো। কখনো শীর্ষে উঠবে, কখনো থাকবে তলানিতে।
৬৬ টেস্টে সাকিব রান করেছেন ৪ হাজার ৪৫৪, উইকেট ২৩৩টি। ওয়ানডেতে ২৪৭ ম্যাচে রান ৭ হাজার ৫৭০, উইকেট ৩১৭। টি-টোয়েন্টিতে রান ২৩৮২, উইকেট ১৪০।
ক্রিকেটের এই মহাতারকা ২০১২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তার সুখের পারিবারিক সংসার।
সাঁইত্রিশে পা রাখা সাকিব আর কতদিন ২২ গজে থাকবেন সেটা বিরাট প্রশ্ন। সব সময় মাথা উচুঁ করে থাকা সাকিবকেও একটা সময় থামতে হবে। সেই সময়টা হয়তো সামনেই আসবে। হয়তো চুপিসারে। নয়তো ঘোষণা দিয়ে।
জন্মদিনে ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন সাকিব। ভক্ত, সতীর্থ থেকে শুরু করে সর্বসস্তরের মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার সুন্দর, সুস্থ জীবনের প্রত্যাশায় রাইজিংবিডিও। জন্মতিথির শুভেচ্ছা।
ইয়াসিন/আমিনুল