সুযোগ হাতছাড়ায় রান পাহাড়ের চাপে বাংলাদেশ
ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে: || রাইজিংবিডি.কম
‘যাক ক্যাচ তো দেয়নি। রান আউট হয়েছে। ক্যাচ দিলে শ্রীলঙ্কার ইনিংসটা মনে হয় আরো লম্বা হতো!’ – হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন চট্টগ্রাম টেস্টে স্টেডিয়ামে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা!
দুদিন ধরে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের ঘটনায় রীতিমত বিরক্ত সবাই। প্রথম দিন ৪ ক্যাচ মিস। রোববার দ্বিতীয় দিনে একই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি। আজও ৪ ক্যাচ হাতছাড়া। শ্রীলঙ্কার এক ইনিংসে ৮ ক্যাচ মিসের ঘটনায় আতশি কাঁচের নিচে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
একের পর এক সুযোগ হাতছাড়ায় সারাদিন সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে হায় হুতাশের আর্তনাদ শোনা গেল, হাপিত্যেশ অনুশোচনার একেকটি স্তুপে চাপা পড়ে গেল হুট করে পাওয়া সাফল্যে।
ফিল্ডারদের ব্যর্থতার সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা ইনিংস লম্বা করেছেন। কিন্তু কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি নিশ্চয়ই। সবকটি উইকেট হারিয়ে ৫৩১ রানের পুঁজি পেয়ে মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে তাদের। কিন্তু ব্যক্তিগত অর্জনের লক্ষ্যমাত্রায় প্রায় প্রত্যেকেরই যেন রয়ে গেছে আফসোস। সেটা কেমন?
টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। কিন্তু কেউই সেঞ্চুরি পাননি। মাঝে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ভালো কিছু করতে পারেননি। তার পরের তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আবার আসে ফিফটির ইনিংস। নেই কোনো সেঞ্চুরি। অপরাজিত থাকা কামিন্দু মেন্ডিসের সুযোগ ছিল সেঞ্চুরিতে যাওয়ার। ৯২ রানে তার পথ আটকে যায় আর উইকেট না থাকায়।
ফিফটি পাওয়া ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ সেঞ্চুরি না পাওয়ায় একটি ইতিহাস অবশ্য শ্রীলঙ্কার লেখা হয়েছে। সেঞ্চুরি ছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড এখন শ্রীলঙ্কার। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে যা একেবারেই নতুন অর্জন।
শ্রীলঙ্কার এমন অর্জনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশই। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় স্রেফ এলোমেলো লঙ্কানদের স্কোরবোর্ড।
ক্যাচ মিসের মহড়ার শুরুটা মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে যিনি আগের দিন দুই ক্যাচ নিয়ে সাফল্যে ভাসিয়েছিলেন। পেসার খালেদের শর্ট লেন্থের বলে ধনাঞ্জয়া ব্যাট সরাতে পারেননি। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মিরাজের একটু সামনেই বল ড্রপ পড়ে। সামনে ঝাপিয়ে মিরাজ বল তালুবন্দি করতে পারতেন সহজেই। প্রথম সেশনে ওই সুযোগ হাতছাড়া করতে না পারায় সাফল্য পেতে সময় নেয়। বাংলাদেশের ভরসা সাকিবের বলে কট বিহাইন্ড হন চান্দিমাল। আউট হওয়ার আগে ১০৪ বলে ৫৯ রান করেছেন তিনি। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য এই এক উইকেটই।
বিরতি থেকে ফিরে আবার দুই সুযোগ হাতছাড়া। যার একটি স্রেফ অবিশ্বাস্য। আবার খালেদের বলেই ক্যাচ মিস। স্লিপে ক্যাচ দেন প্রবাত জয়াসুরিয়া। নাজমুল হোসেন শান্ত সেই বল হাতে জমাতে পারেননি। ছুটে যাওয়া বল লাফিয়ে যায় শাহাদাত হোসেনের কাছে। তার হাতেও বল জমেনি। সেখান থেকে বল যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো জাকির হাসানের কাছে। অবিশ্বাস্য হলেও তিনিও ক্যাচ নিতে পারেননি। তিন জন মিলে ছাড়লেন এক ক্যাচ!
৬ রানে জীবন পাওয়া প্রবাত আবার ক্যাচ দেন ২৩ রানে। তাইজুলের বল কাট করতে গেলে তার ব্যাটে চুমু খেয়ে যায় উইকেটের পেছনে। কিন্তু ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় সেশনে দুই ক্যাচ মিসের ঘটনা ঘটলেও ২ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। দুইবার জীবন পাওয়া জায়াসুরিয়ার উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।এর আগে খালেদ ধনাঞ্জয়াকে এলবিডব্লিউ করে পান উইকেটের স্বাদ।
শেষ সেশনের শুরুতেই আবার ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। আবার ক্যাচ মিস। কামিন্দু মেন্ডিস ৬০ রানে সীমানায় ক্যাচ দেন। তাইজুলের বল স্লগ সুইপ করে বল পাঠান ডিপ মিড উইকেটে। অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ রানিংয়ে ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি। শেষমেশ ৯২ রানে অপরাজিত থেকে সেঞ্চুরির আক্ষেপ করেছেন। বাংলাদেশ শেষ তিন উইকেটের দুটি পায় রান আউটে। শান্ত সরাসরি থ্রোতে রান আউট করেন বিশ্বকে। তাইজুল আসিথার স্টাম্প ভেঙে সাজঘরের পথ দেখান। মাঝে মিরাজ পান তার একমাত্র উইকেট।
শেষ বিকেলে বাংলাদেশ সোয়া এক ঘণ্টার মতো ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়। দিনের খেলা শেষ হওয়ার অল্প কিছু সময় বাকি থাকতে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। লাহিরু কুমারার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় সেখানেই।
পড়ন্ত বিকেলে আর বিপদে পড়েনি বাংলাদেশ। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুলকে নিয়ে দিনটা শেষ করেন জাকির হাসান। ৫৫ রানে ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ শেষ করেছে দিনের খেলা। জাকির অপরাজিত ২৮ রানে। তাইজুল রানের খাতা খোলার অপেক্ষায়।
দুদিনে সাড়ে পাঁচ সেশন ব্যাটিং করে শ্রীলঙ্কা রানের পাহাড় ছুঁয়েছে। বাংলাদেশের সামনে কঠিন পথ। ফলোঅন এড়ানোর লড়াইয়ে আগে জিততে হবে শান্তদের। এরপর জবাব দেওয়া। লম্বা পথ পাড়ি দিতে ধৈর্য্যের রুদ্রমূর্তি ধারন করতে না পারলে ৮ ক্যাচ মিসের ঘটনায় বড় খেসারত দিতে হবে স্বাগতিকদের।
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/বিজয়