ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে অস্বস্তির দিন

ইয়াসিন হাসান, চট্টগ্রাম থেকে: || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১ এপ্রিল ২০২৪  
প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে অস্বস্তির দিন

আশার আলো হয়ে এসেছিলেন হাসান মাহমুদ। পড়ন্ত বিকেলে উইকেটের দুদিকে সুইং বোলিংয়ে যেভাবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের নাকানি চুবানি খাওয়ালেন তাতে স্টেডিয়ামে আগত একশ দর্শকের করতালি পেয়েছেন। যোগ দিয়েছিলেন খালেদ আহমেদও। ওইটুকু পর্যন্ত ঠিক আছে।

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের খেলাটা রিওয়াইন্ড করা যাক। বিশেষ করে ব্যাটিং। হাতে ৯ উইকেট রেখে ৫৫ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ অলআউট ১৭৮ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে আরো একবার দুইশর নিচে অলআউট বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে সবশেষ পাঁচ ইনিংসে দুইশর ঘরে যেতে পারেনি বাংলাদেশের দলীয় রান। এতে নিজেদের ২০ বছরের পুরোনো দুঃস্মৃতি ফেরায় স্বাগতিকরা।

সবশেষ ২০০৪ সালে ঘরের মাটিতে টানা পাঁচ দলীয় ইনিংসে দুইশর নিচে অলআউট বাংলাদেশ। তবে এর চেয়েও বাজে রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ২০০১-২০০২ সালে দেশে-বিদেশে মিলিয়ে টানা ১১ ইনিংসে দুইশর রানের আগে অলআউট হয় তারা। সবশেষ এমন কিছু হয়েছিল ২০১৮ সালে। যেবার ৮ ইনিংসে দুইশ ছাড়াতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।

জাকির ও তাইজুলের ব্যাটে সাত সকালে লড়াইয়ে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ঘণ্টায় কোনো উইকেট না হারিয়ে চুপচাপ ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান। সাবধানী ব্যাটিংয়ে জাকির তুলে নিয়েছিলেন ফিফটি। অন্যদিকে তাইজুল থিতু হয়ে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু জাকির আটকে যান পঞ্চাশের পরপরই। দুজনের আজকের ১৭ ওভারের জুটি ভাঙেন বিশ্ব ফার্নান্দো। তার ছোবল দেওয়া এক ডেলিভারীতে উইকেট হারান ৫৪ রান করা জাকির।

এরপর শান্ত আসলেন আর ফিরলেন। উইকেটের চারপাশে আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে বলয় তৈরি করেছিল শ্রীলঙ্কা। শান্ত সেই ফাঁদে পা বাড়িয়ে আউট হন শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। অধিনায়কের ইনিংস থেমে যায় ১ রানে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে হারায় তাইজুলকে। বিশ্বর বল তার ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে বল আঘাত করে লেগ স্টাম্পে। ৬১ বল উইকেটে থেকে ২২ রান যোগ করে তাইজুল আরো একবার নিজের ব্যাটিং সামর্থ্য দেখিয়েছেন।

প্রথম সেশনে ৬০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে আরো এলোমেলো। সাকিব ও লিটন একই ওভারে তিন বলের ব্যবধানে আউট হয়ে দলকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেন। আসিথা ফার্নান্দোর বল সাকিবের লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আম্পায়ার আউট দেওয়ায় সাকিবকে থেমে যেতে হয় ৩ রানে। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেয়েও পারেননি এক বছর পর টেস্ট খেলতে নামা সাকিব। দুই বল পর লিটন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন।

এরপর যারা ছিলেন তারা কেবল এলেন আর গেলেন। মিডল অর্ডারে নামা মুমিনুল হক দূর্ভাগা। ৪ হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়া মুমিনুল আসিথার ইয়র্কার লেংথ ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি। আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্তে রিভিউ নেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, 'উইকেট' এর বেলায় এসেছে আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ায় বিদায়ঘণ্টা বাজে ৮৪ বলে ৩৩ রান করা মুমিনুলের। এরপর ১৭৮ রানেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস।

দলে ফিরে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়ে আসিথা শ্রীলঙ্কার সেরা। ফলো-অন করানোর সুযোগ থাকলেও সে পথে হাঁটেনি অতিথিরা। কিন্তু ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে নেমে লড়াই তেমন জমাতে পারেনি। ১৭৯ মিনিট ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ১০২ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে।

পেসার হাসান মাহমুদের দ্যুতি ছড়ানো বোলিংয়ে ৪ উইকেট হারায় তারা। আর ২ উইকেট নেন আরেক পেসার খালেদ। লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে থাকলেও গোধূলী লগ্নে দুই পেসারের বোলিং লড়াইয়ে ফিরিয়েছে বাংলাদেশকে। তবুও বাংলাদেশের মাথায় এখন ৪৫৫ রানের লিডের বোঝা! ভালো বোলিংয়ে অভিষিক্ত হাসান ফাইফারের পুরস্কারের অপেক্ষায় আছে। চতুর্থদিন সেই অপেক্ষা ফুরালে এই টেস্টে বাংলাদেশের ঝুলিতে বলার মতো কিছু যুক্ত হবে।
  
যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, ‘আমি ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারি, প্রত্যেকেই কিছু না কিছুতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু আমি চেষ্টা না করা মেনে নিতে পারি না।’

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ববোধ ওই চেষ্টা না করার প্রতিচ্ছবি। যেখানে লড়াইয়ের কোনো ছাপ নেই। ধৈর্য্য ধারণের কোনো চেষ্টা নেই। মনোযোগ ধরে রাখার প্রয়াস নেই। সর্বোপরি টেস্ট ক্রিকেটের মানসিকতা নেই। অথচ গৌরবের টেস্ট ক্রিকেটে ২৪ বছরের পথ চলার পরও হার-জিতের থেকে মাঠের লড়াইয়ের, টিকে থাকার হাহাকার, আর্তনাদ শোনা যায়। দুঃস্বপ্নের পারফরম্যান্স বারবার তাড়িয়ে বেড়ায়। অথচ পরিবর্তন হয় না কিছুরই। প্রশ্নই কেবল তোলায় যায়, আর কত?

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন/বিজয়

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়