ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

নিম্ন বেতনের চাকরি ছাড়ছেন গ্রাউন্ডসম্যানরা, ‘টনক নড়ছে’ বিসিবির

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ১ মে ২০২৪   আপডেট: ১৬:১৮, ১ মে ২০২৪
নিম্ন বেতনের চাকরি ছাড়ছেন গ্রাউন্ডসম্যানরা, ‘টনক নড়ছে’ বিসিবির

বিকেএসপিতে ঢাকা লিগে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের খেলা শেষে তামিম ইকবাল হাঁটছিলেন নিজ গাড়ির দিকে। পিছু নেন কয়েকজন গ্রাউন্ডসম্যান। তামিম খেয়াল করেননি, উঠে যান গাড়িতে। ওঠার পর তামিমের নজরে আসে। কাঁচ নামিয়ে কথা বলেন তাদের সঙ্গে। আবদার একটাই, ঈদের আগে ‘কিছু বোনাস’। তামিম আশাহত করেননি।

একই সময়ে সাকিব আল হাসানও গ্রাউন্ডসম্যানদের বোনাস দিয়ে খবরের শিরোনামে আসেন। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক সিরিজ, ঘরোয়া কোনো টুর্নামেন্ট শেষে গ্রাউন্ডসম্যানদের সাকিব-মুশফিক-তামিমদের বোনাস দেওয়া নিয়মিত ঘটনা। স্বল্প বেতনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চাকরি করা গ্রাউন্ডসম্যানদের মাঝে-সাঝে পাওয়া এই অর্থ পাহাড় সমান। তাতে হাসি ফুটে তাদের মুখে। আনন্দের ফুলঝুরি ছড়িয়ে যায়।

আরো পড়ুন:

বিসিবিতে হেড গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কাজ করেন ১২ জন। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা বেতন পেয়ে থাকেন ১৮ থেকে ২৪ হাজার টাকা। স্থায়ীভাবে গ্রাউন্ডসম্যান আছেন ৬০ জন। তারা সর্বনিম্ন ১৪ হাজার, সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পান।

স্থায়ীর তিন গুণ, ১৬৯ জন গ্রাউন্ডসম্যান কাজ করেন মাস্টার রোলে তথা অস্থায়ীভিত্তিতে। অস্থায়ী রোলে কাজ করা গ্রাউন্ডসম্যানরা সর্বনিম্ন বেতন পান ১১ হাজার টাকা আর সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা। অভিজ্ঞতা ও কাজের ভিত্তিতে সর্বনিম্ন-সর্বোচ্চ বেতন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বা তীব্র শীতে দিন-রাত হাড়খাটুনি পরিশ্রম করে খেলার জন্য মাঠ প্রস্তুত রাখেন গ্রাউন্ডসম্যানরা। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকজন দক্ষ গ্রাউন্ডসম্যান স্বল্প বেতনের কারণে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ অন্য পেশায় নিয়োজিত হন একটু ভালো জীবনের আশায়। দক্ষ গ্রাউন্ডসম্যানদের চাকরি ছাড়ার পেছনের বড় কারণ, সুযোগ সুবিধার পর্যাপ্ত অভাব। তাদের ‘হারিয়ে’ টনক নড়েছে বিসিবির গ্রাউন্ডস বিভাগের। তড়িগড়ি বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে তারা। করা হয়েছে নীতিমালাও। এখন চলছে অর্থ বিভাগের যাচাই-বাছাই।

বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম সবশেষ বোর্ড মিটিংয়ে এক প্রেজেন্টেশনে বলেছেন, ‘নিম্ন বেতনের কারণে দক্ষ কিছু গ্রাউন্ডসম্যান বিসিবির চাকরি ছেড়ে চলে যান। দক্ষ গ্রাউন্ডসম্যানদের চাকরি ছাড়ার হার কমানোর জন্য বেতন বাড়ানো উচিৎ।’

মাহবুব আনাম গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। সেই নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, হেড গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন ৭ থেকে ১১ হাজার টাকা, স্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন ২ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা এবং অস্থায়ী ভিতিত্তে চাকরি করা গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন ২ হাজার টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনার পর বোর্ড বিসিবির অর্থ কমিটিকে গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন কাঠামো যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত দেয়। স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে চাকরি করা কয়েকজন গ্রাউন্ডসম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অপারগতা জানান তারা। শুধু একজন মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমাদের বেতন বাড়ানো হবে, আমাদের কাজ মাঠ প্রস্তুত করা, আমরা সেটাই করছি, এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ক্রিকেটাররা যে ১৩ দফা তুলে ধরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন, একটি ছিল মাঠ পরিচর্যার সঙ্গে জড়িয়ে ব্যক্তিদের ন্যায্য বেতন দেওয়া। ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হয়ে আইনজীবি মোস্তাফিজুর রহমান এই দফাটি তুলে ধরার সময় বলেন, বিগত কয়েক মাসে আর্থিক অভাবের কারণে এই পেশা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন ১৬জন গ্রাউন্ডসম্যান।’

গ্রাউন্ডসম্যানদের নিম্ন বেতন এবং বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ সম্পর্কে জানার জন্য মাহবুব আনামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে রাইজিংবিডি। তবে গ্রাউন্ডস বিভাগের চেয়ারম্যান এতে সাড়া দেননি। একইভাবে গ্রাউন্ডস বিভাগের ম্যানেজার আব্দুল বাতেনের সঙ্গে চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনিও এই বিষয়ে কোনো সাড়া দেননি।

ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়