মোস্তাফিজের আঁটসাঁট বোলিংয়ের পরও চেন্নাইয়ের হার
জসপ্রিত বুমরাহ ও হার্শাল পাটেলের সঙ্গে ১৪ উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। বুধবার বাংলাদেশের তারকা পেসারের সুযোগ ছিল সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। এবারের আসরে নিজের শেষ ম্যাচে পার্পেল ক্যাপ পাওয়ারও সুযোগ ছিল।
কিন্তু চেন্নাইয়ের চিদম্বরম স্টেডিয়ামে মোস্তাফিজ এদিন ছিলেন উইকেটশূন্য। পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে আঁটসাঁট বোলিংয়ে নিজের মান রাখলেও কোনো উইকেট পাননি। ৪ ওভারে ১ মেডেনে ২২ রান দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার। ভালো করেনি তার দল। ১৬২ রানের পুঁজি নিয়ে তেমন লড়াই করতে পারেনি চেন্নাই। ১৩ বল আগে ৭ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে পাঞ্জাব।
মোস্তাফিজের বোলিংয়ের শুরুটা ভালো ছিল। পাওয়ার প্লে’তে দুই ওভার হাত ঘুরান। প্রথম ওভারে ৩ রানের বেশি দেননি। দ্বিতীয় ওভারে দেন ১০ রান। উইকেট না পেলেও চাপে রেখেছিলেন ব্যাটসম্যানদের। ২ বাউন্ডারি হজমের পরও প্রথম স্পেলে রান দিয়েছেন ১৩।
মোস্তাফিজকে আবার বোলিংয়ে ফেরানো হয় ম্যাচের ১৫তম ওভারে। ততক্ষণে চেন্নাইয়ের হাত থেকে ম্যাচ অনেকটাই বেরিয়ে গেছে। রাইলি রুশোর ২৩ বলে ৪৩ ও জনি বেয়ারস্টোর ৩০ বলে ৪৬ রানে পাঞ্জাব ম্যাচে এগিয়ে যায়। ৩৬ বলে পাঞ্জাবের প্রয়োজন কেবল ২৮ রান।
বাঁহাতি পেসার বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় ওভারে ব্যাটসম্যানকে কোনো সুযোগই দেননি। মেডেন ওভারে মোস্তাফিজ সমীকরণ নামিয়ে আনেন ৩০ বলে ২৮ রানে। ডানহাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান শাশাঙ্ক সিং ছিলেন ব্যাটিংয়ে। অফস্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার ও কাটারে ব্যাটসম্যানকে পরাস্ত করেন মোস্তাফিজ। রান নেওয়ার কোনো সুযোগই পাননি শাশাঙ্ক।
তার দারুণ বোলিং অবশ্য কাজে লাগেনি। পরের ওভারে শাশাঙ্ক বিশাল ছক্কায় ব্যবধান আরো কমিয়ে আনেন। নিজের শেষ ওভারে মোস্তাফিজ কোনো বাউন্ডারি হজম করেননি। কিন্তু ৪ ওয়াইড দিয়ে ওভার লম্বা করেছেন। তারপরও ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে মোস্তাফিজ ছিলেন আঁটসাঁট।
১০ ম্যাচে ৬.৪০ ইকোনমিতে বুমরাহর উইকেট ১৪টি। হার্শাল পাটেলও ১০ ম্যাচে ১০.১৮ ইকোনমিতে পেয়েছেন সমান ১৪ উইকেট। মোস্তাফিজ ১৪ উইকেট পেতে খেলেছেন ৯ ম্যাচ। যেখানে তার ইকোনমি ৯.২৬।
আইপিএলে নিজের প্রথম আসরে সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতেছিলেন মোস্তাফিজ। সেবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৬ ম্যাচে পেয়েছিলেন ১৭ উইকেট। আইপিএলে এখন পর্যন্ত এটাই তার সেরা সাফল্য। এবার যেভাবে বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন পুরো মৌসুম খেলতে পারলে নিশ্চিতভাবেই আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু জাতীয় দলের সিরিজ থাকায় তাকে ফেরত আনছে বিসিবি। বৃহস্পতিবারই তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
পাঞ্জাবের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে চেন্নাইয়ের শুরুটা খারাপ ছিল না। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আজিঙ্কা রাহানে ও রিতুরাজ গাইগোড়ার ৮.২ ওভারে ৬৪ রান জমা করেন। এরপর হঠাৎ ছন্দপতন তাদের শিবিরে। ৬৪ থেকে ৭০ রানে যেতে ৩ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে। রাহানে ২৪ বলে ২৯ রানে আউট হওয়ার পর শিভাম দুবে শূন্যতেই ফিরে যান। বিশ্বকাপ দলে ডাক পাওয়ার পর প্রথম ইনিংসেই গোল্ডেন ডাককে সঙ্গী করেছেন। চারে নামা রবীন্দ্রর জাদেজা ৪ বলে ২ রান করে আউট হন।
উইকেটে টিকে থাকা চেন্নাইয়ের অধিনায়ক গাইগোয়াড় তুলে নেন আরেকটি ফিফটি। তার ব্যাটেই এগোতে থাকে চেন্নাই। কিন্তু বড় রানের জন্য যে ঝড় দরকার ছিল তা পায়নি। আর্শদ্বীপের বলে বোল্ড হওয়ার আগে গাইড়োয়াড় ৪৮ বলে ৬২ রান করেন ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
সেখান থেকে সামির রিজভীর ২১, মঈন আলীর ১৫ ও ধোনির ১৪ রানে লড়াকু পুঁজি পায় চেন্নাই। শেষ বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন ধোনি। এবারের আইপিএলে এবারই প্রথম আউট হন আইপিএলের চারবারের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক।
৪ উইকেট নিয়ে চেন্নাইয়ের জার্সিতে পথ চলা শুরু হয়েছিল মোস্তাফিজের। এরপর উঠা-নামা থাকলেও ভালো বোলিংয়ে শেষটায় নিজের ছাপ রেখেছেন। তাতে মুখে হাসি থাকার কথা তার।
ঢাকা/ইয়াসিন