ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

পনের দিনেই পাল্টে গেল সাইফউদ্দিনের দুনিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৭, ১৪ মে ২০২৪   আপডেট: ২০:৩১, ১৪ মে ২০২৪
পনের দিনেই পাল্টে গেল সাইফউদ্দিনের দুনিয়া

৩৮ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন। শুরুতে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব। গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর জন্য বিশ্বকাপের দল ঘোষণা একেবারেই নতুন এক অভিজ্ঞতা। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। তবে নির্বাচক হিসেবে এবারই প্রথম তিনি সাজিয়েছেন বিশ্বকাপের দল।

লম্বা ব্যাটিংয়ের মতো মঙ্গলবার লম্বা সময় কাটাতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে বেশিরভাগ সময়ই তাকে সামলাতে হয়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নিয়ে বাউন্সার! পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে ছাড়া বিশ্বকাপের ১৫ জনকে বেছে নিয়েছেন গাজী আশরাফ হোসেনের প্যানেল। যেখানে রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক ও হান্নান সরকার। সাইফউদ্দিনকে নিয়ে আলোচনার বড় কারণ, আইসিসির বেঁধে দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যে দল প্রাথমিকভাবে বিসিবি পাঠিয়েছিল, সেখানে ছিল সাইফউদ্দিনের নাম। ছিল না তানজিম হাসান সাকিবের নাম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শেষ নির্বাচকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সাইফউদ্দিনের জায়গায় তানজিমকে পাঠানো হবে। তাতে ১৫ দিনেই পাল্টে গেল সাইফউদ্দিনের দুনিয়া।

বিপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করায় পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে ফেরানো হয়েছিল। লম্বা সময় পর জাতীয় দলে ফিরে দলের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স করেছেন। বল হাতে ৪ ম্যাচে পেয়েছেন ৮ উইকেট। যৌথভাবে যা সিরিজ সেরা তাসকিনের সঙ্গে সর্বোচ্চ। যেখানে তার বোলিং গড় ১৮.৬২। ইকোনমি ৯.৩১। পারফরম্যান্সের বিচারে সাইফউদ্দিন বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার মতো নয়। কিন্তু তার থেকে যেমনটা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তেমনটা দিতে পারেননি বলেই তাকে নেওয়া হয়নি।

আরো পড়ুন:

গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর প্রত্যাশা কেমন ছিল সেটাই জানা যাক তার মুখ থেকে, ‘আমাদের যে জায়গায় নির্দিষ্টভাবে সাইফউদ্দিনকে দরকার হতো, সেই নির্দিষ্ট জায়গায় সে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটাই আমরা পরখ করে দেখেছি। শেষ ম্যাচে আমরা মাত্র ২ জন সিমার খেলিয়েছি। এর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সাইফউদ্দিনকে ৪ ওভার পুরোপুরি বল করতেই হবে। সেই জায়গায় এক-দুইটি ওভার খারাপ হয়ে গেলে অনেক বড় ব্যাপার। সেটা খারাপ হতেই পারে। দিন শেষে আমাদের আস্থা তার উপর থাকবে, যে তার শতভাগ দিচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় মনে হয়েছে সাইফউদ্দিন আরও ভালো করতে পারত। তার শর্ট পিচ বলগুলো আমাদের ভালো লাগেনি, মাথার ওপর দিয়ে গেছে। কিছু কিছু বল পায়ের সামনে পড়েছে। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারকে কেন বাদ দিয়েছি, এত বিশদভাবে বলতে চাই না। সে আমাদের জাতীয় ক্রিকেটার।’

ডেথ ওভারে সাইফউদ্দিনের ইয়র্কারের সামর্থ্য নিয়ে ঘাটতির কথা বলেছেন গাজী আশরাফ। কিন্তু তানজিমকেও তো কখনও তেমন ইয়র্কার ব্যবহার করতে দেখা যায়নি! ২ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন ৬৮ রানে। বোলিং গড় ছিল ৬৮.০০। ইকোনমি ৮.৫০। সেখানে সাইফউদ্দিন চট্টগ্রামে ফেরার ম্যাচে স্রেফ ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট। পরের ম্যাচগুলোতে বোলিংয়ে তেমন ধার ছিল না। শেষ ম্যাচে খরচ করেন ৪ ওভারে ৫৫ রান। কিন্তু সামগ্রিক যে সফলতা তা এড়ানোর সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট কোনো সিরিজের শীর্ষ উইকেট শিকারি পরের সিরিজে নেই এমনটা বাংলাদেশের ক্রিকেটে হয়নি কখনোই।

সাইফউদ্দিনের বেলায় নির্বাচকরা শুধু উইকেটের হিসেবকেই আমলে আনেনি। বড় ক্যানভাসে চিন্তা করা গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, ‘শুধু উইকেটসংখ্যা দেখেই কিন্তু উপসংহার টানা যায় না। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আপনি কখন, কোন অবস্থায় উইকেট পাচ্ছেন, সেটা অনেক গভীরভাবে দেখতে হবে যে, কে কখন বোলিংয়ে আসছে। চট্টগ্রামে দেখবেন, প্রথম দুটি ম্যাচেই ওদের ওপরের সারি ব্যাটসম্যানরা দ্রুত আউট হয়ে গেছে।’

নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের আউট করে সাইফউদ্দিন তেমন বাহবা পাচ্ছেন না। সঙ্গে ডেথ ওভারে ইয়র্কার দিতে না পারার ‘দোষ’ তো আছেই। অন্যদিকে তানজিমের চেষ্টা ও নিবেদন নজর কেড়েছে নির্বাচকদের। যা পক্ষে গেছে তানজিমের।

তাকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত প্রধান নির্বাচক, ‘তানজিম সাকিবকে আমরা শ্রীলঙ্কা সিরিজেও দেখেছি। তার একাগ্রতা, মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা এসব তাকে কিছুটা এগিয়ে রেখেছে। ফিল্ডিংয়েও সে খুব ভালো। আমরা যে কারণে একটু মুখিয়ে ছিলাম, সাইফউদ্দিনের দিকে, তিনি ব্যাটিং করার তেমন সুযোগ পাননি। তার ডেথ ওভারে ইয়র্কার করার যে সামর্থ্যটা ছিল, সেটা অনেক কম পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে আরও অনেক উন্নতি করতে হবে।’

ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের পূর্ণতা নিয়ে সাইফউদ্দিন বিশ্বকাপের দলে ঢুকে গিয়েছিলেন ৩০ এপ্রিলেই। কিন্তু ১৪ মে’র দলে নেই তার নাম। মাত্র পনের দিন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক সিরিজেই শেষ তার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। অথচ কোনো পরীক্ষা না দিয়েই রিজার্ভ হিসেবে যাচ্ছেন হাসান মাহমুদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। পুলে থাকলেও তারা জিম্বাবুয়ে সিরিজে ছিলেন না। সাইফউদ্দিনকে কি রিজার্ভ হিসেবেও নেওয়া যেত না? উত্তরটা ঘুরপাক খাচ্ছে চারিদিকে।

ইয়াসিন/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়