ছক্কা বৃষ্টিতে শুরু বিশ্বকাপ, যুক্তরাষ্ট্রের জয়
দুই দলের জন্য ম্যাচটা অন্যরকম এক রোমাঞ্চের, উত্তেজনার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রথম ম্যাচ। সঙ্গে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ বলে প্রতিবেশী দুই দলের লড়াই আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছিল।
ডালাসের গ্র্যান্ড পেইরি স্টেডিয়ামে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ল প্রথম ম্যাচেই। যেখানে রান হলো, চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটল। বোলারদের ওপর নেমে এলো দুর্বিষহ সময়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব আবেদন পূরণ করে যুক্তরাষ্ট্র তুলে নিল অসাধারণ এক জয়। কানাডাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপের শুরুটা দারুণ করলো স্বাগতিকরা। যে জয়ের নায়ক আরোন জোন্স ও আন্দ্রিজ গিউজ।
কানাডার দেওয়া ১৯৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে জোন্স নামালেন ছক্কা বৃষ্টি। ১০ ছক্কায় খেললেন ৯৪ রানের ইনিংস। যে ইনিংস সাজাতে খেলেছেন মাত্র ৪০ বল। ৪ মেরেছেন চারটি। কম যাননি আন্দ্রিজ গিউজও। ৪৬ বলে ৬৫ রান করেন ৭ চার ও ৩ ছক্কায়। দুজনের জমাট ব্যাটিংয়ে ৫৮ বলে আসে ১৩১ রান। তাতে জয়ের কাজ করে যায় যুক্তরাষ্ট্রের। সীমানায় ক্যাচ দিয়ে গিউজের ইনিংসটি থেমে গেলেও জোন্স অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
এই তো গত এপ্রিলের কথা। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে কানাডা ৪-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল। বিশ্বকাপের ঠিক আগে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে এমন পরাজয় রীতিমত বড় ধাক্কা কানাডার জন্য। কিন্তু বৈশ্বিক মঞ্চে মাঠে নামতে পুরোনো ব্যর্থতা ঝেড়ে একেবারে নতুন মোড়কে কানাডা। ব্যাটিংয়ে প্রায় দুইশর কাছাকাছি রান করে চ্যালেঞ্জ জানায় স্বাগতিকদের। কিন্তু জোন্স ও গিউজের ব্যাটিং তাণ্ডবে সব ওলটপালট।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ৪২ রান তুলতে দুই ওপেনারকে হারায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে প্রতি আক্রমণে গিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় স্বাগতিকরা। বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে চলে জোন্স ও গিউজের তাণ্ডব। এক মুহূর্তের জন্য তাদের নড়বড়ে মনে হয়নি। বরং যেভাবে ব্যাটিং করেছেন তাতে মনে হয়েছে যত দ্রুত লক্ষ্য ছুঁতে পারে ততই লাভ তাদের। কেন হবে না? পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে থাকতে হলে রান রেটটাও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় ইনিংসের ১৪তম ওভারে। পেসার গর্ডনের করা ওভার থেকে ৩৩ রান আদায় করেন জোন্স ও গিউজ। তাতে ৬৯ থেকে লক্ষ্য নেমে আসে ৩৬ রানে। এরপর বাকি পথ পাড়ি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বেগ পেতে হয়নি।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে কানাডার ব্যাটিং ছিল দুর্দান্ত। উদ্বোধনী জুটিতে অ্যারন জনসন ও নাভনীত দালিওয়াল ৪৩ রানের জুটি গড়েন। এরপর জোড়া উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খেলেও নাভনীতের ব্যাটে রান আসছিল অনায়েসে। বিশ্বকাপের প্রথম ফিফটি আসে তার ব্যাট থেকে। ৩৬ বলে ফিফটি তুলতে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকান। ইনিংসটি বড় করার পথেই ছিলেন। কিন্তু তাকে বেশিদূর যেতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
৬১ রানে নাভনীত ড্রেসিংরুমে ফেরেন কোরি অ্যান্ডারসনের বলে জাসদীপের হাতে ক্যাচ দিয়ে। সেখান থেকে কানাডার শেষের নায়ক নিকোলাস কিরটন ও শ্রেয়াস মুভা। নিকোলাস ৩১ বলে ৫১ রান করেন ৩ চার ও ২ ছক্কায়। শ্রেয়াস ১৬ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩২ রান। ২টি করে চার ও ছক্কা ছিল তার ক্যামিও ইনিংসে। এছাড়া ৫ বলে ১১ রান করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন দিলপ্রীত ভাজা।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বল হাতে ১টি করে উইকেট নেন আলী খান, হারমীন সিং ও কোরি অ্যান্ডারসন। ১০ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখা জোন্স পেয়েছেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার। তার মুখে চওড়া হাসি বলে দিচ্ছিল, এই দিনটি দেখার জন্য কতটা সময় অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়