ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৮ ১৪৩১

টনি ক্রুস: মাদ্রিদের গালিচায় জার্মান স্নাইপার

আরিফুল হক বিজয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ২ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৬, ২ জুন ২০২৪
টনি ক্রুস: মাদ্রিদের গালিচায় জার্মান স্নাইপার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল স্নাইপার। দূর থেকে নির্ভুল নিশানায় একের পর এক লক্ষ্যভেদে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন চৌকস স্নাইপাররা। সে সময় গত হয়েছে প্রায় আট দশক। ৭৯ বছর আগের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ‘স্নাইপার’ শব্দটি যখন হারিয়ে যাওয়ার পথে, ঠিক তখনই স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের সবুজ গালিচায় ‘জার্মান স্নাইপার’ রূপে আবির্ভাব হলেন টনি ক্রুস।

জার্মান ফুটবলের আক্রমণের নিয়ম একটাই, হিট অ্যান্ড অ্যাটাক। কোনো ছন্দ-সুর-তাল-লয়ের ভেতরে আবদ্ধ থাকেনি জার্মানরা। গতিময় ফুটবলের জন্য তাদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এমন ফুটবলের সঙ্গে তাল মেলাতে মাঝমাঠ থেকে যে সুরটা বেঁধে দিতে হয়, সেটাই করে আসছেন ক্রুস। বলের সঙ্গে লেপ্টে থাকা, ছন্দের তালে এগিয়ে যাওয়া, ক্ষিপ্র গতি এবং নির্ভুল নিশানা; ক্রুস ছিলেন প্রতিপক্ষের জন্য স্বাক্ষাৎ স্নাইপার। 

জার্মান ফুটবল থেকে স্পেনের টিকিটাকার রাজত্বে আগমন ঠিক এক দশক আগে। ২০১৪ সালে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখ থেকে রিয়ালে তার আগমন। এরপর এই ১০ বছর কোথাও যাওয়ার কথা ভাবেননি ক্রুস। মাদ্রিদের সবুজ গালিচার ঠিক মাঝ থেকে যে সুরটা তুলতেন, সেটা অসংখ্যবার শেষ হয়েছে প্রতিপক্ষের জালের কম্পন আর রিয়ালের দর্শকের গর্জনের সমান্তরালে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু বুক পেতে স্বেচ্ছায় তাকে লিখে দিয়েছে কিংবদন্তির আসন।

আরো পড়ুন:

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম ক্রুসের কাছে এক স্মৃতিময় তীর্থ। ২০১৩ সালে ঐতিহ্যবাহী এই মাঠেই ক্যারিয়ারে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। সেদিনও প্রতিপক্ষ ছিল বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ক্রুস ছিলেন বায়ার্নের। ভাগ্যের কী খেলা, ১১ বছর পর একই মাঠে, একই দলের বিপক্ষে আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জিতে ট্রফির ছোঁয়া পেলেন জার্মান জাদুকর। থেমে গেল তার পথচলাও। বেজে উঠলো করুণ বিউগলের সুর। সমাপ্তি ঘটলো বর্ণাঢ্য ক্লাব ক্যারিয়ারের।

১০ বছরে রিয়ালের অনেক সাফল্যের নায়ক ক্রুস। বছরের পর বছর এই ক্লাবের হয়ে মধ্যমাঠ থেকে জাল বিছিয়ে দিয়েছেন সতীর্থদের দিকে। ডিফেন্স-চেরা পাস, রিমোটের মতো খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করা, ছন্দ আর সুরের বাঁধনে গোটা দলকে চালানো, সৃষ্টিশীলতা-উদ্ভাবনী ক্ষমতার অপূর্ব সমন্বয়ের সে কি ঝলক! রিয়ালের সাফল্যের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ক্রুসের পাসের সঠিক নিশানা ৯২ শতাংশের নিচে কখনো নামেনি। যার ফল রিয়ালের শোকেসে ২৩টি ট্রফি। 

বিদায়ের সুর যখন করুণতা ছড়াচ্ছে, ক্রুস তখন আরেকবার নিজের কারুকার্য দেখালেন। প্রথমার্ধে বিবর্ণ রিয়াল বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ায় মূলত ক্রুসের একটি কর্নার এবং সেটি থেকে দারুণ হেডে দানি কারভাহালের গোলে। বিদায়ের ক্ষণ আসন্ন, ৮৫তম মিনিটে ক্রুসকে তুলে নেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। বের হতে হতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে প্রথম দুই হাত অভিবাদনের জবাব দিলেন, পরক্ষণেই বুকে আঙুল দিয়ে দেখালেন, ‘রিয়াল সর্বদাই হৃদমাঝারে বহমান...’

ইউরোপের সফলতম ক্লাবটির হয়ে ৪৬৫ ম্যাচ খেলে ২৩টি ট্রফি জিতে থামলো ক্রুসের পথচলা। এই লম্বা পথচলায় তিনি পাস দিয়েছেন ৩৪ হজার ৯১টি। সুযোগ তৈরি করেছেন ৯৭৪টি। নামের পাশে অ্যাসিস্ট ৯৩টি, গোল ২৮টি। বল পায়ে তার সৃষ্টিশীলতার পুরোটা যদিও শুধু সংখ্যায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। পাবলো পিকাসো কত রং ছড়িয়েছেন তার হিসেব কেউ কি রাখতে পেরেছে?

চারটি লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ, পাঁচটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, তিনটি উয়েফা সুপার কাপ তিনবার ও একটি কোপা দেল রে। জার্মানির হয়ে জিতেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ। কখনও ইউরো জয়ের স্বাদ অবশ্য পাননি তিনি। ঘরের মাঠে আসছে আসরে সেই আক্ষেপ ঘোচাতে পারলে ক্রুসের প্রতিটি লক্ষ্যই পূরণ হবে। সেটা না হলেও ক্রুস থাকছেন জার্মান স্নাইপারের মতো চিরঞ্জীব, রিয়ালের রাজকীয় উৎসবের মতো চিরভাস্বর।

ঢাকা/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়