ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

প্রত্যাশিত জয়ের সঙ্গে সাকিবকে ফিরে পাওয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ১৪ জুন ২০২৪   আপডেট: ০২:১২, ১৪ জুন ২০২৪
প্রত্যাশিত জয়ের সঙ্গে সাকিবকে ফিরে পাওয়া

আগের চার মুখোমুখিতে নেদারল্যান্ডস কেবল একবারই হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। তাই বিশ্বকাপ মঞ্চে নেদারল্যান্ডসকে নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে তেমন ভয় ছিল না! একেবারেই ছিল না বললে ভুল হবে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কিন্তু কলকাতায় কমলা শিবিরের উৎসবে ম্লান হয়েছিল বাংলাদেশের হাসি। তাই মনের কোণে খানিকটা সংশয় তো ছিলই। সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স বিরাট ভাবনার।

সব সংশয়, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ দূর করে কিংসটাউনে বাংলাদেশ আরও একবার হারালো নেদারল্যান্ডসকে। ২৫ রানের জয়ে ‘ডি’ গ্রুপ থেকে সুপার এইটে যাওয়ার লড়াইয়ে অনেকটাই এগিয়ে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে আরেকটি প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে পরের রাউন্ডে।

বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের ম্যাচ দিয়ে সেন্ট ভিনসেন্টে অবস্থিত আর্নোস ভ্যালে গ্রাউন্ডে অচলায়তন ভেঙেছে। ১০ বছর পর এই মাঠে ফিরেছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। উইকেট নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকলেও ম্যাচে সবকিছু বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। নেদারল্যান্ডসের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১৫৯ রান করে। জবাবে ডাচরা তীব্র লড়াইয়ে বাংলাদেশকে ভয় দেখালেও শেষ পর্যন্ত থেমে যায় ১৩৪ রানে।

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যে পুঁজি পেয়েছে সেটা ছিল দলের আসল চাওয়া। বিশ্বকাপ শুরুর আগে শান্ত জানিয়েছিলেন, ১৬০ রানের আশেপাশের স্কোর হলে তারা খুশি হবেন। সাকিবের ফিফটির সুবাদে  রান ১৫৯। যদিও এই লড়াকু পুঁজির আভাস শুরু ও মাঝপথে ছিল না। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে রান ৫৪। ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে ৭৬। সেখান থেকে পরের ৫ ওভারে যোগ হয় কেবল ২৯ রান। ১৫ ওভারে ১০৫ থেকে বাংলাদেশ ২০ ওভার শেষ করে ৫৪ রান যোগ করে। যেখানে প্রায় সব রানই এসেছে বাউন্ডারিতে। তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় বাংলাদেশ। 

ব্যাটিংয়ে যাদের ওপর ভরসা ছিল তারা এবারও ফেল! শান্ত রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। লিটন সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেট। দুইজনই থেমেছেন ১ রানে। অন্যদিকে তানজিদ হাসান আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের চাহিদা পূরণ করেছেন। উইকেটের চারিপাশে খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন শট। কয়েকটি শটে আউট হয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোতে ভাগ্য তার পাশেই ছিল।

সাকিব ক্রিজে এসে পাল্টে দেন দৃশ্যপট। ধারাবাহিক রান না পাওয়ায় চাপে ছিলেন। সেসব আজ পেছনে ফেলে ছুটেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তুলেছেন রান। বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। ৩৮ বলে পেয়েছেন টি-টোয়েন্টির ত্রয়োদশ ফিফটি। ২০ ইনিংসে প্রথম এই ফিফটি বলে দেয় ব্যাটিংয়ে কতটা ছন্দহীন ছিলেন।

সাকিব ও তানজিদ জুটি গড়েন ৩২ বলে ৪৮ রানের। তানজিদ ২৬ বলে ৩৫ রান করে হাল ছেড়ে দিলেও সাকিব ব্যাট চালিয়ে যান শেষ পর্যন্ত। যার সুফল পেয়েছে দল। ৪৬ বলে ৬৪ রানের ইনিংস সাজিয়েছেন ৯ বাউন্ডারিতে। ১৪০ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেটে খেলা ইনিংসে বুঝিয়ে দিয়েছেন এখনও ফুরিয়ে যাননি।

দলের ভরসা হয়ে উঠা তাওহীদের ব্যাট এদিন হাসেনি। ১৫ বলে ৯ রান করে প্রিঙ্গেলের বলে বোল্ড হন। মাহমুদউল্লাহ ২টি করে চার ও ছক্কায় ২১ বলে ২৫ রানের বেশি করতে পারেননি। জাকের শেষ দিকে রাখেন অবদান। ৭ বলে ১৪ রান করেন ৩ বাউন্ডারিতে।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩২ রানে ২ উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস। তৃতীয় উইকেট জুটি থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ডাচরা। যে শুরুটা করেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বিক্রমজিৎ সিং। সাকিবকে দুই ছক্কার পর রিশাদকেও বিশাল ছক্কা হাঁকান বিক্রমজিৎ। এছাড়া এঙ্গেলব্রেখট উইকেটের চারিপাশে সিঙ্গেল ও ডাবলসের সঙ্গে এগিয়ে যান। তাতে রান রেট দ্রুত কমিয়ে আনেন তারা। ২৩ বলে তাদের জুটিতে আসে ৩৭ রান।

বিপদজ্জনক হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙেন পার্ট টাইমার মাহমুদউল্লাহ। অফস্পিনারের বল এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে স্টাম্পড হন বিক্রমজিৎ। ১৬ বলে ২৬ রানে থেমে যায় তার ইনিংস। তার বিদায়ের পরও নেদারল্যান্ডসের স্কোরবোর্ড খারাপ ছিল না। ১০ ওভারে ৩ উইকেটে তাদের রান ৭৪। শেষ ১০ ওভারে দরকার ৮৬ রান।

ম্যাচ তখন পেণ্ডুলামে ঝুলছিল। পরের কয়েক ওভারে ডাচরা নিজেদের দিকেই ম্যাচ টেনে নেন। এঙ্গেলব্রেখট ও অ্যাডওয়ার্ডস দ্রুত রান তুলে ব্যবধান নামিয়ে আনছিলেন। বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে তখন পরাজয়ের শঙ্কার আনাগোনা তানজিদ, রিশাদ, তাসকিন, সাকিব পরের চার ওভারে হাত ঘুরালেও সাফল্য এনে দিতে পারেননি। তাদের জুটিতে ৩১ বলে আসে ৪২ রান।

মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বাংলাদেশের হাত থেকে ফঁসকে যাচ্ছে। সেখানে রিশাদ দলের ত্রাতা হয়ে আসেন। ১৫তম ওভারে জোড়া উইকেটে নেদারল্যান্ডসকে ধাক্কা দেন এই লেগ স্পিনার। পরে ফিরে আবার প্রথম বলেই নেন উইকেট। চার বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট নিয়ে রিশাদ বাংলাদেশকে শুধু ম্যাচেই ফেরাননি। ম্যাচের এপিটাফ লিখে দেন।

শেষ দিকে নেদারল্যান্ডস আর পেরে ওঠেনি। রিশাদের দ্রুত ৩ উইকেট আর মোস্তাফিজের কিপটেমিতে ডাচরা এলোমেলো হয়ে যায়। মোস্তাফিজ ডেথ ওভারে দুই ওভারে মাত্র ৪ রান দেন। তাসকিনও ফিরে আসেন ভালোভাবে। তাতে শেষ ৬ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ এখন দুই নম্বরে। শ্রীলঙ্কার বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। নেদারল্যান্ডস সেরা আটের লড়াইয়ের থাকলেও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে। সুপার এইটে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশ যাবে তা মোটামুটি নিশ্চিত। যেখানে বাংলাদেশের অপেক্ষায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান। পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা থাকলে সেখানেও জয়ের প্রত্যাশা করা যায়।

ইয়াসিন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়