সূর্যর আলোয় উজ্জ্বল ভারত, পারল না আফগানিস্তান
দুই দলের শেষ মুখোমুখির লড়াইটা ছিল চরম উত্তেজনার। বেঙ্গালুরুতে ডাবল সুপার ওভারের ম্যাচের সাক্ষী হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। আফগানিস্তান শেষ পর্যন্ত স্নায়ু স্থির রেখে ম্যাচটা জিততে পারেনি। তবে তারা যে লড়তে জানে, ভারতকে সেই বার্তা দিয়ে রেখেছিল।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজের পর দুই দলের আবার দেখা বিশ্ব মঞ্চে। সুপার এইটের ম্যাচে বার্বাডোজে। কিন্তু এই ম্যাচে আফগানিস্তানকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। বোলিংয়ে মোটামুটি লড়াই করলেও ব্যাটিংটা হয়েছে নিষ্প্রভ। তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচে ৪৭ রানের জয়ে শুরু করলো ভারত।
আগে ব্যাটিং করে ভারত ৮ উইকেটে ১৮১ রান তোলে। জবাবে আফগানিস্তানের ইনিংস থেমে যায় ১৩৪ রানে।
ভারতের জয়ের নায়ক সূর্যকুমার যাদব। তার দ্রুতগতির ইনিংসে চাপে থাকা ভারত উদ্ধার হয়। পরে অর্জন করে বড় পুঁজি। ২৮ বলে ৫৩ রান করেন টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান। বোলিংয়ে ভারতের হয়ে দ্যুতি ছড়ান জসপ্রীত বুমরাহ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যখনই বোলিংয়ে এসেছেন পেয়েছেন উইকেটের স্বাদ। ৪ ওভারে ১ মেডেনে ৭ রানে তার শিকার ৩ উইকেট।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো ছিল না। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ১৩ বলে ৮ রানে ফেরেন ফজল হক ফারুকির বলে। বাঁহাতি পেসারের কাটার উড়াতে গিয়ে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ দেন রোহিত। সেখান থেকে বিরাটকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটি গড়েন রিশভ পান্ত। মারমুখী ব্যাটিংয়ে দুজনই পাওয়ার প্লে ঠিকঠাক কাজে লাগান।
বিরাট বোলারের মাথার ওপর দিয়ে যে ছক্কাটা হাঁকিয়েছেন, স্মৃতি ফিরিয়ে আনেন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের। পান্তও উইকেটের চারিপাশে ৩ বাউন্ডারি পান দৃষ্টিনন্দন শটে। কিন্তু আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ খান ক্রিজে আসার পর ভারতের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। দ্রুত ৩ উইকেট নেন রশিদ। প্রথমে পান্ত (২০) এলবিডব্লিউ করেন লেগ স্পিনার। পরের ওভারে বিরাট বিরাটকে (২৪) লং অনে তালুবন্দি করান। নতুন ব্যাটসম্যান শিভাব দুবে ১০ রান করে তার বলে এলবিডব্লিউর শিকার।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন সূর্যকুমার যাদব। তাকে সঙ্গ দিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। দুজনের জমাট জুটিতে শুরুতে প্রতিরোধ পায় ভারত। এরপর আক্রমণ চালিয়ে তারা দলের রানকে নিয়ে যান চূঁড়ায়। ৩০ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়েন। সূর্যকুমার মাত্র ২৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় তুলে নেন ৫৩ রান। হার্দিক ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে করেন ৩২ রান।
লক্ষ্য নাগালে রাখতে এই দুইজনকে ফেরানোর দরকার ছিল। আফগানিস্তান সেই কাজটা ঠিকঠাক করলেও শেষ দিকে অক্ষর পাটেলে ১২ রানে ভারত ১৮১ রানের পুঁজি পেয়ে যায়। ফজল হক ফারুকি ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন। রশিদ খান ২৬ রানে পেয়েছেন সমান ৩ উইকেট।
ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নিজেদের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন বোলারদের। সেখান থেকে গুলবাদিন নাইব ও আজমতউল্লাহ ওমারজাই প্রতিরোধ গড়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গেলে যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রয়োজন ছিল তা ছিল না তাদের ব্যাটে।
থিতু হওয়ার পর দুজনই দুয়েকটি বড় শট খেলেছেন। ছক্কাও পেয়েছেন। কিন্তু ইনিংসের মাঝে উইকেট বিলিয়ে আসেন। গুলবাদিন ১৭ রানে কেদার যাদবের বলে হাওয়ায় ক্যাচ তোলেন। আজমতউল্লাহ ২৬ রানে জাদেজার শিকার হন। এরপর আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারেনি কেউ। নবী ১৪, নূর আহমেদ ১২ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমান।
বুমরাহর কিপটেমি বোলিংয়ের সঙ্গে আর্শদ্বীপ সিং ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া কেদার যাদব ২টি এবং অক্ষর ও জাদেজা ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
গ্রুপ পর্বে ভারতের তিন ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন দুই পেসার বুমরাহ (২) ও আর্শদ্বীপ (১)। তিন ম্যাচ পর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউ ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলেন। তাতে বেশ খুশি সূর্যকুমার যাদব।
ভারতের পরের ম্যাচ অ্যান্টিগাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে। আফগানিস্তান সেন্ট লুসিয়ায় খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
ঢাকা/ইয়াসিন