ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

ভুলে ভরা গল্প

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২৩ জুন ২০২৪  
ভুলে ভরা গল্প

২২ গজে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও নেই। নিবেদনে প্রবল ঘাটতি। শ্রেষ্ঠত্বের তাড়না নেই। মাঠের ক্রিকেটে এতদিন এসব চিত্র ফুটে উঠেছে বেশ ভালোভাবেই। বিশ্বকাপের মতো আসরে যে জৌলুস থাকার কথা, যে শরীরী ভাষা থাকার কথা তা একদমই ছিল না। সেজন্য ক্রিকেটারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়।

কিন্তু মাঠের বাইরেও যে পরিকল্পনা সাজাতে হিমশিম খাবে পুরো দল, সেটা কতজন ভাবনায় এনেছিল? স্যার ভিভিয়ান রিচার্ড স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় ম্যাচ। দিনের ম্যাচে টস জেতা মানে ম্যাচ জেতার সমান! কারণ টস জিতলে ব্যাটিং নিয়ে বড় পুঁজি পাওয়া এই মাঠের চিরায়িত রেকর্ড।

ভারতের বিপক্ষে শান্ত টস জিতে চাইলেন ফিল্ডিং। অথচ রোহিত ব্যাটিং করার কথাই বলেছিলেন। টস তো যেন-তেন! দল নির্বাচনে টিম ম্যানেজমেন্ট আরো চমক দেখাল। ভারতের বিপক্ষে তাসকিন কিংবা শরিফুলকে ছাড়াই মাঠে নামল বাংলাদেশ। বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান জাকের আলীকে দলে নিল তাসকিনের জায়গায়! মাত্র পাঁচ বোলার নিয়ে ২০ ওভার করার পরিকল্পনা?

মাঠের লড়াইয়ের শুরুতে আবারো চমক। ভারতের দুই ওপেনার যেখানে বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষে ভুগছিল সেখানে বাংলাদেশ দুই প্রান্ত থেকে দুই স্পিনারকে নিয়ে শুরু করে আক্রমণ। তাতে যা হবার তাই হয়েছে। ভারত এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানের জুটি পায় ওপেনিং থেকে। আর শেষটাও রাঙিয়ে তারা গড়ে বড় পুঁজি। 
আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান করে ভারত। নির্বিষ বোলিংয়ের পর হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৪৬ রানে। বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যায় ৫০ রানে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা নতুন কোনো গল্প নেয়। ম্যাচ খেল, ব্যর্থ হও, ব্যর্থতা ভুলে যাও, আবার ম্যাচ খেল, আবার ব্যর্থ হও, আবার ভুলে যাও…. এসব-ই তো হয়ে আসছে নিয়মিত। কেন ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হচ্ছেন সেই উত্তর নেই কারো কাছেই। অধিনায়ক নিজেও জানেন না দলের সমস্যা কোথাও? প্রতিদিনই ভালো করার আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি হয়ে যায়।

ভারতের বিপক্ষেও চিত্র পাল্টাল না। মন্দের ভালো আজকের ওপেনিং জুটি টিকেছিল ৩৫ রান পর্যন্ত। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু বড় রান তাড়া করতে যে আক্রমণাত্মক শুরুর প্রয়োজন ছিল দুই ওপেনার চাহিদানুযায়ী যোগান দিতে পারেননি। লিটন ১০ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। তানজিদ টিকে ছিলেন ইনিংসের অর্ধেকতম ওভার পর্যন্ত। তার ইনিংসটিও ছিল দৃষ্টিকটু। ৩১ বলে করেন মাত্র ২৯ রান।  তিনে নামা শান্ত কেবল কিছুটা আশা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার ৩২ বলে ৪০ রানের ইনিংসটিও যথেষ্ট ছিল না। বাকিদের ব্যর্থতার গল্প হতাশায় মোড়ানো। শেষ দিকে রিশাদ ১০ বলে ২৪ রান না করলে পরাজয়ের ব্যবধানটা আরো বড় হয়ে যেত।

টানা পঞ্চম জয় পাওয়া ভারতের বোলিংয়ের সেরা ছিলেন কুলদ্বীপ যাদব। ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট পেয়েছেন আর্শর্দ্বীপ ও বুমরাহ। হার্দিকের পকেটে গেছে ১ উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। চার-ছক্কায় ৩.৩ ওভারে ৩৯ রান তুলে নেয় রোহিত ও বিরাট। চতুর্থ ওভারের প্রথম তিন বলের দুটিতেই ছক্কা চার উড়ান রোহিত। সাকিব নিজের চতুর্থ বলে নেন প্রতিশোধ। একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বল উড়াতে গিয়ে ১১ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন ভারতের অধিনায়ক। এই উইকেট নিয়ে সাকিব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন।

সেখান থেকে বিরাট ও পান্তের ব্যাটে এগিয়ে যায় ভারত। কিন্তু তানজিম সাকিব নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে জোড়া আঘাত করে ভারতীয় শিবিরে। বিরাট তার স্লোয়ারে এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে বল মিস করে বোল্ড হন ৩৭ রানে। সূর্যকুমার প্রথম বলে ছক্কা উড়ালেও দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। একটু লাফিয়ে উঠা বল বুঝতে পারেননি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান। ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়ানো রিশাদ এদিন পান্তের ব্যাটে ছক্কা হজম করলেও শেষ হাসিটা তিনিই হেসেছেন। মিড উইকেটে পান্ত তানজিমের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আচে ২৪ বলে ৩৬ রান করেন ৪ চার ও ২ ছক্কায়।

পঞ্চম উইকেটে শিভাম দুবে ও হার্দিক পান্ডিয়া ৬৩ রানের জুটি গড়েন। তাদের জুটির রানই পাল্টে দেয় ভারতের ব্যাটিং চিত্র। হার্দিক আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন। ২৭ বলে ৫০ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। এছাড়া দুবে ২৪ বলে ৩৪ রান করেন ৩ ছক্কায়।  বোলিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন তানজিম ও রিশাদ। মোস্তাফিজ কোনো উইকেট পাননি। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৪৮ রান।

ব্যাট-বলে সমানতালে পারফর্ম করে হার্দিক পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।  এই জয়ে সেমি ফাইনালের লড়াইয়ে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সুপার এইট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। অবশ্য সুপার এইটে উঠাই ছিল এই দলের লক্ষ্য। ফলে সুপার এইটে ফলাফল কি হলো তা খুব একটা বড় ইস্যু নয় তাদের কাছে। কোচ তো বলেই দিয়েছেন, যা পাবে তা-ই বোনাস!

ঢাকা/ইয়াসিন/রিয়াদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়