ঢাকা     শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ২ ১৪৩১

আফগান রূপকথায় এলোমেলো তাসমানের এপার-ওপার

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২৩ জুন ২০২৪  
আফগান রূপকথায় এলোমেলো তাসমানের এপার-ওপার

তাসমান সাগরের পাড়ের এপার-ওপার। দুই প্রতিবেশী দেশ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড। প্রকৃতিতে, ব্যবহারে, আচরণে, সংস্কৃতিতে ভিন্নতা আছে বেশ। আছে মর্যাদা আর আভিজাত্যের রেশ। ক্রিকেটে এই দুই দল সেয়ানে সেয়ানে লড়তে জানে। জিততে জানে।

কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান রূপকথায় আটকে গেছে এই দুই দেশই। আফগান ঝড়ে এলোমেলো তাসমান পাড়ের এপার-ওপার। বিশ্বকাপে দুই দেশই এমন কিছুর সাক্ষী হলো যা আগে কখনো হয়নি। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে ‘বারোটা বাজিয়েছে।’ এবার সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে আফগানিস্তান।

মৃত্যু উপত্যাকার নাম আফগানিস্তান। বাতাসে বারুদের গন্ধ। তালিবানি জেহাদ বনাম রাষ্ট্রের প্রতিরোধ। রক্তাক্ত কাবুলিওয়ালার দেশ। সেখানে ক্রিকেট স্রেফ বিলাসিতা। তবুও এটাই তাদের জীবনধারণের বড় নিয়ামক।

আরো পড়ুন:

গত ১৮ মে’র ঘটনা। আফগানিস্তান ক্রিকেটের সুপারস্টার রশিদ খান চার বছর পর ফিরেছেন প্রিয় জন্মভূমিতে। সারা বছর বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ান রশিদ খান। পাশাপাশি দেশের জার্সিতেও খেলেন নিয়মিত। কিন্তু ঘরের মাটিতে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু না হওয়ায় দেশে ফিরতে হয় কালেভদ্রে। কারণ, সারা বছর বিদেশেই কাটে তার। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান মিরওয়াইজ আশরাফ। যিনি এক সময়ে রশিদের সতীর্থ ছিলেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগে রশিদ খান দেশে ফেরায় চারিদিকে আলোচনা শুরু হয়। হঠাৎ কেন রশিদ দেশে। গণমাধ্যমে এলো, শুধু রশিদ নন, মোহাম্মদ নবী, রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরানসহ বিশ্বকাপ খেলতে পারে সাম্ভাব্য সব ক্রিকেটারকেই আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড দেশে ডেকেছে। বিশ্বকাপের আগে দলের টিম বন্ডিংয়ে দুয়েকদিন তারা একসঙ্গে কাটাবেন।

যেমন কথা তেমন কাজ। গুরবাজ আইপিএল ফাইনাল খেলায় তিনি বাদে বাকিরা সবাই চলে যান আফগানিস্তান। ক্রিকেট ছেড়ে দুদিন কেবল নিজেদের মতো করে কাটিয়েছেন তারা। শহরের অলিগলি ঘুরেছেন, টিম মিটিং করেছেন। ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গিয়ে টেনিস বলে ক্রিকেটও খেলেছেন।

শোনা যায়, ওই মিটিংয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে তাদের খোলামেলা আলোচনা হয়। যেখানে পুরো দল একবিন্দুতে পৌঁছায়, এবারই সুযোগ বড় কিছু করে দেখানোর। নিয়মিত ভালো ক্রিকেট খেলে আসলেও আফগানিস্তান বড় কিছু করতে পারছিল না। ২০২৩ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় মাটিতে নামিয়ে নিয়েছিল তারা। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরিতে সেদিন মুম্বাইয়ে হাসতে পারেননি তারা। এবার পারবেন তো?

নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে আফগানিস্তান বুঝিয়ে দেয় এবার সত্যিই তারা ক্ষুধার্ত। হারার আগে হারতে জানে না তারা, লড়াইয়ে জান দিয়ে দেয়, সামর্থ্যের শেষবিন্দু পর্যন্ত নিংড়ে দেয়, পরাজয়ের ভয় নেই বরং জয়ের নেশাতেই মত্ত থাকে তারা। এজন্য মাঠে আগ্রাসন, নিবেদন, তাড়না ফুটে উঠে স্পষ্টভাবে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে তাদের হারানোর কিছুই ছিল না। কিন্তু প্রাপ্তির খাতায় অনেক কিছু যোগ হবে এসব সমীকরণ তো কষাই ছিল। বলে রাখা ভালো, ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাদের দিনগুলো খুব কষ্টে কাটছিল। হালাল খাবারের ঘাটতি থাকায় নিজেরা নিজেদের খাবার রান্না করে খেতে হচ্ছে তাদের। ভারত, ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী বোর্ড তারা নয়। চাইলেই দলের সঙ্গে রাখতে পারে না বাবুর্চি। তাই তো নিজেদের চাহিদা নিজেদেরই মেটাতে হয়।

সেন্ট ভিনসেন্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২১ রানে হারিয়ে মাটিতে নামিয়েছে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে এবারই প্রথম যে তারা বড় দলকে হারিয়েছে তেমনটা নয়। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে সবগুলো দলের বিপক্ষেই তাদের জয় আছে।

এমন একটি জয়ের অপেক্ষায় তারা ছিল তা বোঝা গেছে দলের অধিনায়ক রশিদ খানের কণ্ঠে, ‘এটা দল ও দেশের জন্য অনেক বড় একটি জয়। অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর অনুভূতি দারুণ। এটা এমন কিছু, যা আমরা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে করতে পারিনি, এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ বিশ্বকাপেও করতে পারিনি। এটা আমাদের দেশের জন্য এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সমর্থকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জয়। আফগানরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, তারা এমন একটি জয়ের অপেক্ষায় ছিল। খুবই মিস করছিল। তবে এটা আমাদের জন্য মাত্র শুরু। সেমিফাইনালে খেলার সব সুযোগ আমাদের আছে।’

সূচিতে থেকে দ্বিপক্ষীয় বাতিল করা, রি-সিডিউল করা সবকিছুর জবাব দেওয়ার সেরা মঞ্চ বৈশ্বিক ক্রিকেট। আফগানিস্তান সেই জবাবটাই দিয়ে যাচ্ছে বারবার। এখন সাদা বলের ক্রিকেটে তাদের সাফল্য পাওয়া মানে অঘটন নয়। বরং রহমানউল্লাহ, নবী, গুলবাদিন, রশিদ খানরা জ্বলে উঠলে যে কারোর ঘুম কেড়ে নিতে পারে সেই বার্তা পৌঁছে গেছে সবার ঘরে। যেমনটা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আফগান রূপকথায় এলোমেলো তাসমানের এপার-ওপার।

ইয়াসিন/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়