দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের বিদায় করে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ ওভারে দরকার ছিল ৫ রান। স্ট্রাইকে মার্কো জানসেন, বোলিং প্রান্তে ওবেদ ম্যাকয়। ফুল লেংথের বলটা একদম পায়ের সামনে পেয়েছিলেন জানসেন। অনায়াস ভঙ্গিতে লং অন দিয়ে ভাসিয়ে দিলেন। বল গিয়ে পড়লো সীমানার ওপারে। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের সীমানার বাইরে ছিটকে পড়লো দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটের জয়ে সেমিফাইনালে পৌছে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ সোমবার (২৪ জুন) অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস হেরে রোস্টন চেজের ফিফটিতে ভর করে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টি আইনে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭ ওভারে ১২৩ রান। জবাব দিতে নেমে ৫ বল হাতে রেখেই ১৬.১ ওভারে ১২৪ রান তুলে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই আকেল হোসেনকে তিন চার হাঁকিয়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেন কুইন্টন ডি কক। তবে সতীর্থকে সঙ্গ দিতে পারলেন না রিজা হেনড্রিকস। আন্দ্রে রাসেলের বলে কোনো রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান প্রোটিয়া ওপেনার।
হেনড্রিকসের বিদায়ে ক্রিজে আসেন এইডেন মার্করাম। তবে মার্করামকে নিয়ে জুটি গড়ার আগেই ডি কককে বিদায় করেন শেরফান রাদারফোর্ড। আউট হওয়ার আগে ৭ বলে ৩ চারে ১২ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর শুরু হয় বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টির পর কার্টেল ওভারে গড়ায় ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে নতুন লক্ষ্য দেওয়া হয় ১৭ ওভারে ১২৩ রান। তাতে ৯০ বলে প্রয়োজন দাঁড়ায় ১০৮!
বৃষ্টির পর ক্রিজে আসেন ত্রিস্টান স্টাবস। মার্করাম আর স্টাবস মিলে রান রেট বাড়িয়ে নিতেই শুরু করেন মারদাঙ্গা ব্যাটিং। তাতে রান আসলেও প্রোটিয়া অধিনায়ক বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ১৫ বলে ১৮ রান করে আলজারি জোসেফের বলে মায়ার্সের তালুবন্দি হন মার্করাম।
এরপর স্টাবসের সঙ্গে এসে জুটি বাঁধেন হেনরিখ ক্লাসেন। এসেই সপাটে ব্যাট চালাতে থাকেন ক্লাসেন। গুদাকেশ মোতির এক ওভারেই ৩ চার ও ১ ছক্কায় তুলে নেন ২০ রান। এরপর জোসেফের ওপর চড়াও হতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন প্রোটিয়া ব্যাটার। পুরানের গ্লাভসে বন্দি করে তাকে সাজঘরে পাঠান জোসেফ। আউটের আগে ১০ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ রান করেন ক্লাসেন।
ক্লাসেনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন ডেভিড মিলার। তবে বল নষ্ট করে ১৪ বলে ৪ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর মার্কো জানসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন স্টাবস। দল যখন এই জুটির দিকে তাকিয়ে তখনই চেজকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে প্রোটিয়াদের চাপে ফেলেন স্টাবস। এর আগে ৪টি চারের মারে ২৭ বলে করেন ২৯ রান।
এরপর কেশব মহারাজ এসেও যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। তাকেও জোসেফের ক্যাচ বানিয়ে ফেরত পাঠান চেজ। তাতে তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে বাকি পথে কোনো অঘটন ঘটতে দেননি জানসেন। তার কল্যাণে শেষমেশ সেমিফাইনালে পা রাখে প্রোটিয়ারা। ১৪ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন জানসেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই কোনো রান না করে বিদায় নেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক শাই হোপ। তার বিদায়ে ক্রিজে আসেন নিকোলাস পুরান। জুটি বাঁধেন ব্রেন্ডন কিংয়ের বদলে সুযোগ পাওয়া কাইল মায়ার্সের সঙ্গে।
দলের বিপদে পুরানও টিকতে পারলেন না। তার ইনিংস স্থায়ী হলো স্রেফ তিন বল! এইডেন মার্করামের ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে লং অফে মার্কো জানসেনের হাতে বল তুলে দিয়ে ১ রান করে বিদায় নেন ক্যারিবীয় হার্ডহিটার। পুরানের বিদায়ে ক্রিজে আসেন রোস্টন চেজ।
চেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন মায়ার্স। পাওয়ারপ্লে’র শেষ ওভারে একবার জীবন পেয়ে যান তিনি। ফলে পাওয়ারপ্লে’তে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৭ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যেই দুজন গড়ে ফেলেন পঞ্চাশ রানের জুটি। ১০ ওভারে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেট হারিয়ে ৬৯ রান।
মায়ার্স-চেজ জুটি যখন ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো, ঠিক তখনই আঘাত হানেন স্পিনার তাবারেজ শামসি। উইকেটের সুবিধা একেবারে কড়ায়-গণ্ডায় কাজে লাগিয়ে মায়ার্সকে তুলে নেন এই স্পিনার। অফ স্টাম্পের বল সামনে এগিয়ে হাঁকাতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন মায়ার্স। ডিপ পয়েন্টে সেটা তালুবন্দি করতে কোনো ভুল হয়নি স্টাবসের। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৫ রান করেন মায়ার্স।
এরপর ক্রিজে এসে ২ বল খেলে কেশব মহারাজের বলে স্টাম্পড হন পাওয়েল। টিকতে পারেননি শেরফান রাদারফোর্ডও। তাকে শূন্য রানে বিদায় করেন শামসি। এর মধ্যেই ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন চেজ। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৫২ রানের মাথায় তাকেও বিদায় করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বড় ধাক্কাটা দেন শামসি।
দলের ভঙ্গুর দশার মাঝে রান আউটে কাটা পড়েন রাসেল। ৯ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ঝড়ের ইঙ্গিত থাকলেও সরাসরি থ্রোতে তাকে ফেরান নরকিয়া। একই পথ ধরে ৬ রান করে বিদায় নেন আকেল। শেষদিকে ব্যাট হাতে ছোটখাটো ঝড় তোলেন জোসেফ। তার ৭ বলে ১১ রানের ইনিংসে ভর করে কিছুটা লড়াই করার মতো পুঁজি পায় দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।
ঢাকা/বিজয়