ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫ ||  বৈশাখ ৯ ১৪৩২

সেমিফাইনালের সুযোগ হাতছাড়ায় বিরক্ত সাবেক ক্রিকেটাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ২৬ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৮:২২, ২৬ জুন ২০২৪
সেমিফাইনালের সুযোগ হাতছাড়ায় বিরক্ত সাবেক ক্রিকেটাররা

আফতাব আহমেদ, যার ব্যাটে ঝড় উঠলে একটা সময়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের নাকানিচুবানি খাওয়া লাগতো। আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই ছিল যার ব্র্যান্ড। কার্ডিফে জেসন গিলেস্পিকে মারা সেই ছক্কা মনে নেই? কিংবা ডাউন দ্য উইকেটে এসে জহির খানকে উড়ানো! প্রতিপক্ষের বোলারদের শক্তির জায়গায় কিভাবে আঘাত করতে হয় তার থেকে ভালো আর কে জানতেন? অথচ এখন প্রিয় দলের খেলা দেখতে বসলে ধরেই নেন, ‘ম্যাচটা মনে হয় নিরাপদ ক্রিকেটই খেলবে বাংলাদেশ।’  

যেমনটা খেললো আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে। সেমিফাইনাল যাওয়ার সূবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার পর ম্যাচও হেরে আসে বাংলাদেশ। ১২.১ ওভারে আফগানিস্তানের দেওয়া ১১৬ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলতে পারলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানকে টপকে যেতো সেমিফাইনালে। ওই লক্ষ্য তো ছুঁতেই পারেনি। পরে বৃষ্টি আইনে ম্যাচ হেরেছে ৮ রানে। 

তানজিদ, সৌম্য, সাকিব, লিটন, মাহমুদউল্লাহ, শান্তদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে সেমিফাইনাল খেলার কোনো তাড়না ছিল না। এমন ক্রিকেট নিয়ে আফতাবের মূল্যায়ন হলো, ‘সেলফিস ক্রিকেট।’

আরো পড়ুন:

পুরো দলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আফতাবের প্রশ্ন, ‘এই ম্যাচে সেমিফাইনাল বাদে আপনার আর কি চিন্তা করতে হবে? এই ম্যাচ শুধু জিততে কেন হবে? শুনলাম শান্ত নাকি বলেছে, ৩ উইকেটের পর দল সেমিফাইনালের আশা ছেড়ে দিয়েছিল। শুধু জয়ের চিন্তা করেছিল? এই ম্যাচ জিতে বাড়তি কি যোগ করবে? পুরো টুর্নামেন্টে তিনটার জায়গায় চারটা জয় হবে। তাই তো। তাহলেও লাভ কি? সেমিফাইনাল খেলার এমন সুযোগ আবার কবে পাবে বাংলাদেশ?’

আফতাবের মতোই নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের মনে, ‘১২.১ ওভারে আমরা ১১৬ রান চেজ করিনি এটাই সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক। এই সুযোগটি কেন খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট, ওখানে যারা ছিল…সত্যিই খুব হতাশাজনক। আমরা যারা ক্রিকেট খেলি, আমাদের জীবনে এই ধরনের সুযোগ খুব কমই আসে। বাংলাদেশের একটা সুযোগ ছিল সেমিফাইনালে খেলার। সুপার এইটে উঠে আমরা দুটি ম্যাচ বাজেভাবে হেরেছি। এরপরও আল্লাহ আমাদের একটা সুযোগ দিয়েছিলেন। আমরা যদি ১২.১ ওভারে ওই রান তাড়া করতে গিয়ে হেরেও যেতাম তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। এখনও তো হেরেছি। এ ধরণের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা করে খেলার কোনো মানে নেই। সমস্যাটা কোথায়? খুবই হতাশাজনক। আমরা সেমিফাইনালের জন্য চেষ্টা করে হেরে যেতাম, কেউ প্রশ্ন তুলতো না। বলতো, আমরা চেষ্টা অন্তত করেছি। ইনটেন্ট দেখিয়েছি।’

আশরাফুল বলতে থাকেন, ‘আমাদের এই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ছিল তাওহীদ হৃদয়। দেখলাম সে প্যাডআপ করে বসে আছে। কিন্তু হাথুরুসিংহে বলেন, অধিনায়ক বলেন বা বাকিরা, আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে যে একটা জিনিস ডুকেছে, ডানহাতি-বামহাতি, যে চিন্তা থেকে শান্ত তিন নম্বরে এসেছে সেটাই অবাক করেছে। গতকালের পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই শান্ত তিন নাম্বরে আসার মতো নয়। তাওহীদকে বিপিএলে দেখেছি ৩ নম্বরে কতটা ডেঞ্জারাস। ম্যাচ শেষ করে আসার নজিরও আছে। আপনি তাকে নামাচ্ছেন ছয় নম্বরে।’ 

‘প্রথম তিন-চারটা উইকেটে লাইসেন্স দেওয়া উচিৎ ছিল। তারা নিজেদের মতো করে রান করে আসবে। পাওয়ারপ্লে’তে ৬০-৭০ রান করার চেষ্টার দরকার ছিল। হাথুরুসিংহকে আমরা এতো বড় কোচ বলছি, অথচ কাল কোচ কার হাতে জিম্মি ছিল আল্লাহই ভালো বলতে পারবেন। মাহমুদউল্লাহ এতো বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন, ওই সময়টায় ছয় বল খেলে মাত্র ১টা বাউন্ডারি মেরেছেন। কোনো ইনটেন্ট ছিল না। মনে হচ্ছিল আমরা জাস্ট জেতার জন্য খেলছি। ১২ ওভারের চিন্তাই মাথায় ছিল না। লিটন একটা ফিফটি করেছে। অথচ এই ফিফটির কোনো ভ্যালু নেই। এতো বছর ধরে ক্রিকেট খেলছেন অথচ বুঝতে পারছেন না এইটা ওই উইকেট না যে শেষ ওভারের জন্য চেজ জমিয়ে রাখবেন। সব মিলিয়ে হতাশাজনক। দলটার ম্যাচ নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ছিল না সেটা স্পষ্ট বোঝা গেছে।’   

সেমিফাইনাল খেলার কোনো তাড়না দল না দেখানোয় চরম হতাশ সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ ভয়ডরহীন খেলার যে ধারাটা শুরু করেছিল তা হয়েছিল মাশরাফির হাত ধরেই। হারার আগে হার না মানা মানসিকতা দেখানো শুরু করেছিলেন মাশরাফিই। অথচ লম্বা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও গোটা দল ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ লুফে না নেওয়ায় হতাশ মাশরাফি। তার কণ্ঠে হাহাকার, ‘আজকের হিসাবটা ছিলো শুধুই ১২.১।এর বাইরে কিছুই ভাবার সুযোগ ছিলো না।তাতে যদি ৫০ রানেও দল অল আউট হতো অন্তত সবাই সেটা সহজভাবে নিতো। আর যদি এই ম্যাচ জিততাম, তাও বিবেকের কাছে হেরে যেতাম। এ ম্যাচ আর দশটা ম্যাচের মতো ছিলোনা আমাদের জন্য, এটা ছিলো ইতিহাস গড়ার সমান।’

ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়