আফগানিস্তান বিশ্বকাপ জিতলে কেউ অবাক হবেন না
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অগ্রগতির সাক্ষী হতে পারা দুর্দান্ত ব্যাপার। প্রথমবারের মতো তারা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠেছে। বিশ্বকাপে যে দলটা নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলে হারিয়েছে তাদেরকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। ঐক্যবদ্ধ, চাপ সামলে নেওয়ার স্বক্ষমতা এবং ইতিবাচক মানসিকতা তারা প্রদর্শন করেছে।
যদি তারা বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল উতরে ফাইনালে যেতে পারে সেটা শুধু আফগানিস্তানের ক্রিকেটের জন্য গর্ব হবে না, ক্রিকেটের জন্যও হবে দারুণ কিছু। এটি সেইসব দেশে ক্রিকেট খেলাকে প্রচার করতে সাহায্য করবে যেখানে তারা ‘মিনোস’ বলে বিবেচিত হয় না এবং তরুণ ক্রিকেটারদের বড় ও উন্নত জাতির স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করবে।
আফগানিস্তানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আছে যারা এই টুর্নামেন্টে দ্যুতি ছড়িয়েছে এবং সেমি ফাইনালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাদের দলে একাধিক ম্যাচ উইনারও রয়েছে। রশিদ খান যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ভালো রান পাচ্ছে। দুই উদ্বোধক ব্যাটসম্যানই দলের দাবি মেটাচ্ছেন। পেসার যারা আছে তারা দারুণ লাইন ও লেন্থ মেনে বোলিং করে যাচ্ছে, সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিচ্ছে।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং ফজল হক ফারুকি অন্য সবার চেয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে এগিয়ে আছেন। রশিদ খান এবং নাভিন উল হক বল হাতে বৈচিত্র্য দেখিয়েছে।
নিউ জিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারানোর পর বাংলাদেশকে হারিয়ে আফগানিস্তান যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। লো স্কোরি ম্যাচে চরম নাটকীয়তার পর তারা জিতেছে। যেখানে তাদের স্নায়ুর পরীক্ষাও হয়েছে। তারা যদি একই কাজগুলো পুনরায় করতে পারে শিরোপাও জিততে পারবে। আর যদি এটা করে (শিরোপা জেতে) তাহলে অবাক হবেন না।
বড় মঞ্চে চাপ সামলানোর ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়দের অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে হবে এবং একটি একটি ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হবে। এটা অবশ্যই দলগত খেলা কিন্তু একজন খেলোয়াড় যখন পারফর্ম করার দায়িত্ব নেয় তখন দলও সুফল পায়। যে স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে সে গৌরব জিতে নেয়।
আমি ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেমি ফাইনালে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পেরেছি। এখনও আমার মনে আছে। যখনই ওই দিনটির কথা মনে পড়ে আমার মুখে হাসি চলে আসে। এটা এমন একটা স্মৃতি যেখানে আমার পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। একটি হাফ সেঞ্চুরি, সঙ্গে দুই উইকেট চার ওভারে। তাতে আমার দল ফাইনালে উঠেছিল। পরবর্তীতে আমরা শিরোপাও জিতেছিলাম।
এ বছর নতুন একটা ফাইনালিস্টকে পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। আফগানিস্তান নয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমি ফাইনাল যে জিতবে প্রথমবার তারা ফাইনাল খেলবে। বলে দিতে পারি, জীবন পাল্টে যেতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নিজেদের কিছু ম্যাচ উইনার আছে। কুইন্টন ডি ককের বল উড়িয়ে মারার ক্ষমতা দারুণ। কাগিসো রাবাদা ও আনরিক নরকিয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের প্রদর্শনী করেছে।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে তারা কীভাবে খেলবে তা দেখতে আকর্ষণীয় হবে, যেমন ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে অন্য সেমি ফাইনাল হবে।
সত্যি বলতে, সেমি ফাইনালে নতুন দল দেখে খুবই ভালো লাগছে।
এবার ক্রিকেটেরই জয় হবে। আইসিসি ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে টুর্নামেন্টটা আয়োজন করেছে। যা আগামী প্রজন্মের কাছে ক্রিকেট খেলাটিকে পরিবেশন করছে।
তথ্যসূত্র: শহীদ আফ্রিদির কলাম।
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত
ঢাকা/ইয়াসিন