মুর্শিদা-জ্যোতির ব্যাটে চড়ে সেমিতে এক পা বাংলাদেশের
শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর নারী এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল বাংলাদেশের জন্য খানিকটা কঠিন হয়ে ওঠে। সামনে সমীকরণের মারপ্যাঁচ। শেষ ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১১৪ রানের বড় জয়ে সেই প্যাঁচ অর্ধেক ছুটিয়ে সেমির পথে এক পা দিয়ে রাখলো নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। এখন শ্রীলঙ্কার কাছে থাইল্যান্ড হারলেই শেষ চারে পা রাখবে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার (২৪ জুলাই) ডাম্বুলার রনগিরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুর্শিদা খাতুন ও নিগার সুলতানা জ্যোতির জোড়া ফিফটিতে ভর করে ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রানের চূড়ায় পা রেখে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের বোলিং তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৭৭ রান পর্যন্ত যেতে পারে মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে রেকর্ড গড়তে হতো মালয়েশিয়াকে। ব্যাটিংটাও করতে হতো দুর্দান্ত। শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়েই প্রথম ওভারে জাহানারা আলমকে উইকেট বিলিয়ে আসেন মালয়েশিয়ার ওপেনার আইন্না হামিজাহ হাশিম। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকে তারা।
কিন্তু অতিরিক্ত সাবধানী হতে গিয়েই পাওয়ারপ্লের ঠিক আগে বিপদ ডেকে আনেন এলসা হান্টার। নাহিদার বলেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২৩ বলে ২০ রান করা এই ব্যাটার। পাওয়ারপ্লেতে মালয়েশিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান। ১০ ওভারে তাদের রান দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪২।
এরপর রিতু মনির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১১ রান করা ওয়ান জুলিয়া। পরের ওভারেই নাহিদার আঘাত। নাহিদার স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন উইনিফ্রেড দুরাইসিংগাম। মালয়েশিয়া দলীয় ৫০ রান পার করে ১৪তম ওভার শেষে। এরপর আরও দুটি উইকেট হারায় তারা। তাতে ৬০ রানের আগেই হারাতে হয় ৫ উইকেট।
এরপর উইকেট আগলে খেলতে থাকে মালয়েশিয়া। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভার খেলেও জয়ের দেখা পায়নি। একশ রানেরও বেশি ব্যবধানে জিতে যায় টাইগ্রেসরা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন নাহিদা। ১টি করে উইকেট নেন জাহানারা আলম, সাবিকুন নাহার, রাবেয়া খান, ঋতু মনি ও স্বর্ণা আক্তার।
এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচ থেকে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে নিজেদের গ্রুপে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে এগিয়ে থেকে ইতোমধ্যে সেমিফাইনালে চলে গেছে শ্রীলঙ্কা। গ্রুপের অন্য দল হিসেবে সেমির লড়াইয়ে আছে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড।
তাতে সমীকরণ দাঁড়িয়েছে, যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে থাইল্যান্ড হারে তাহলে বাংলাদেশ সরাসরি সেমিফাইনালে। আর থাইল্যান্ড জিতলে রানরেটে টপকাতে হবে বাংলাদেশকে। যেটা খুব কঠিন। ফলে এদিক থেকেও সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। সেমিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে ভারত।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে শুরু করেন দুই ওপেনার দিলারা আক্তার ও মুর্শিদা খাতুন। প্রথম চার ওভার দেখেশুনে খেলে পঞ্চম ওভার থেকেই চড়াও হন দুজন। পঞ্চম ওভার থেকে দুই চার ও ১ ছয়ে ১৫ রান নেন দিলারা। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫১ রান।
দিলারা আউট হন অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে। আউটের আগে ৪ চার ও ১ ছক্কার মারে ২০ বলে ৩৩ রান করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তিনে নামেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। জ্যোতিকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন মুর্শিদা খাতুন। ১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান।
জ্যোতি দেখেশুনে ও মুর্শিদা আক্রমণাত্মক হয়ে খেলতে থাকেন। তাতে বাংলাদেশও পেরিয়ে যায় শতকের ঘর। ১৪তম ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরে ফিফটির দেখা পেয়ে যান মুর্শিদা। ৯টি চারের মারে ৪৭ বলে ফিফটি করেন মুর্শিদা।
মুর্শিদার ফিফটির পর চড়াও হন জ্যোতি। এমন সময় ১৭তম ওভারে বিদায় নেন মুর্শিদা। আউট হওয়ার আগে ৫৯ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৮০ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দিয়ে যান তিনি। বাকি পথটা একাই ঝড় তুলে যান জ্যোতি। খেলেন ৩৭ বলে ৬২ রানের ইনিংস। তার ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ২টি ছক্কার মার।
মুর্শিদা-জ্যোতির জোড়া ফিফটিতে বাংলাদেশ গিয়ে থামে ১৯১ রানের ঘরে। যা এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ ও টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ জ্যোতিদের। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ২৫৫ রান বাংলাদেশ করেছিল ২০১৯ সালে মালদ্বীপ নারী দলের বিপক্ষে।
ঢাকা/বিজয়