মিরাজের ক্যানভাস এখন অনেক বড়
নাজমুল আবেদীন ফাহিম কেবল দুটি শব্দই বললেন মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে, ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি।’ রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে মিরাজের পারফরম্যান্স এমনই ছিল যে তাকে প্রশংসায় না ভাসিয়ে পারেননি বিসিবির নবনিযুক্ত বোর্ড পরিচালক। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৪ উইকেট তো পেয়েছেনই। সঙ্গে প্রথম ইনিংসে দলের লিড বড় করতে শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেছেন মহাগুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রানের ইনিংস। তাতে অলরাউন্ড এক পারফরম্যান্সে উদ্ভাসিত হন মিরাজ।
২৬ পেরুনো মিরাজ ব্যাট-বলের এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ছিল শুরু থেকেই। এখন দলের অতি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিয়মিত রাখছেন অবদান। সাকিব আল হাসানের পর তাকেই সাকিবের বিকল্প অলরাউন্ডার হিসেব ভাবা হচ্ছিল। সেই বিশ্বাসের প্রতিদান মিরাজ দিনকে দিয়ে দিয়ে আসছে বলেই মনে করছেন নাজমুল, ‘একজন অলরাউন্ডার হিসেবে সে গড়ে উঠছে। যেটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
লম্বা ব্যাটিং লাইনআপে মিরাজের পজিশন আট নম্বরে। ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব উইকেটে তার জায়গা নিশ্চিত থাকে। কিন্তু বিদেশের মাটিতে কন্ডিশন ও উইকেট বিবেচনায় অনেক সময় মিরাজ অটোমেটিক চয়েজ হন না। বাড়তি পেসার খেলাতে হলে টিম কম্বিনেশন পাল্টে যায়। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট বরাবরই তাকে লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ বিবেচনায় তার ওপর আস্থা রাখে। সঙ্গে অফস্পিনটা বেশ ভালো করতে পারেন বলে মিরাজ একাদশে টিকে যান। রাওয়ালপিন্ডিতে একই অবস্থার তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তান চার পেসার নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ৪৮ ঘণ্টা আগে। বাংলাদেশ একাদশ সাজায় তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে।
উইকেটে কিছু আছে এই বিশ্বাসে সাকিবের সঙ্গে মিরাজকেও দলে নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। যা আদতে কাজে এসেছে। বোলিং ও ব্যাটিং দুই বিভাগেই সমান্তরালে পারফর্ম করেছেন। মিরাজের ব্যাটিং ইনিংসের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করতে গিয়ে নাজমুল যে বিষয়টি সামনে এনেছেন, ‘প্রতিপক্ষ যখন মনে করে ৬ উইকেট পরে যাওয়ার পর বাকিটা এমনেই নিয়ে নেওয়া যাবে তখন সাতে (আসলে আটে) মিরাজ আসে। তখন হয়তো ধরেই নেয় এই উইকেটগুলো হয়তো সামনের ২-৩ ওভারে নিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু সেটা যখন যায় না এবং ওখান থেকে বিশাল কন্ট্রিবিউশন আসে। সেটা কিন্তু প্রতিপক্ষের জন্য ডিসকারেজিং। আমরা সব সময় দেখে এসেছি মিরাজ কোয়ালিটি ব্যাটসম্যান। আমার ধারনা ওর সেরাটা এখনও দেখিনি।’
অফস্পিনে মিরাজ বেশ বড় বড় টার্ন পেয়েছেন। উইকেট থেকে বাউন্স আদায় করেছেন। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের কারণেই মিরাজ সফল বলে মনে করেন নাজমুল, ‘উইকেটে কিছুটা সাহায্য ছিল অফস্পিনারের জন্য। ডানহাতি ব্যাটসম্যান যখন ব্যাটিংয়ে ছিল তখন অফস্পিনে কিছুটা প্যাচ ছিল। সেটা সে কাজে লাগিয়েছে। ব্রিলিয়ান্ট।’
৪৪ টেস্টে ১৬৯ উইকেট পাওয়া মিরাজ বোলিংয়ে বেশ তেজদ্বীপ্ত। ব্যাটিংয়ে ২১.৭৮ গড়ে ১৫৪৭ রান করে রাখছেন অবদান। তার ক্যানভাস এখন বিশাল বড়। সেই ক্যানভাসে কেবল অলরাউন্ডারের তুলির আচড় ছড়াবে।
ইয়াসিন/আমিনুল