মিরাজ ‘বিষে’ নীল পাকিস্তান
মেহেদী হাসান মিরাজ অপেক্ষা ফুরালেন ২১ বছরের। ২০০৩ সালে মোহাম্মদ রফিক পাকিস্তানের মাটিতে দুইবার ৫ উইকেট পেয়েছিলেন এরপর বাংলাদেশের আর কোনো বোলারের এই কীর্তি ছিল না। ২০২৪ এ এসে মিরাজ করে দেখালেন এমন কিছু।
নিজের দশম ফাইফারে পাকিস্তানকে স্পিন বিষে নীল করেছেন এই অফস্পিনার। তাতে স্বাগতিকরা রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে অলআউট হয়েছে ২৭৪ রানে। গতকাল শুরু হওয়া টেস্টের প্রথম দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। হিসেবে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের কার্যত ‘প্রথম’ দিন আজ। উইকেটে সবুজের ছোঁয়া। টার্ন নেই। বল উচুঁ নিচুও হয়নি। এমন উইকেটে হাত ঘুরিয়ে ৫ উইকেট পাওয়া বিরাট কিছু।
মিরাজ সেই কাজটা অনায়াসে করে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন। পাকিস্তানকে তিনশও করতে না দিয়ে এই টেস্টের ভাগ্য নির্ধারণ করতে বোলাররা অবদান রাখলেন বেশ। এখন ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ের অপেক্ষা। সেই লড়াইয়ে প্রথম টেস্টের নায়ক মুশফিককে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। ফিল্ডিংয়ের সময় কাঁধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। দিন শেষে ড্রেসিংরুমে তাকে শুয়ে থাকতেই দেখা গেছে।
বোলিংয়ে বাংলাদেশ পুরো দিন যে সুর, তাল, ল য় ধরে আক্রমণ করেছে তা শুরুতে বেঁধে দিয়েছিলেন ১৪ মাস পর টেস্টে ফেরা তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইসলামের চোটে তাকে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামে বাংলাদেশ। নতুন বলে প্রথম ওভারেই ব্রেক থ্রু পায় বাংলাদেশ। শুরুর পাঁচ বল ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিকের থেকে টেনে বাইরে নেন। শেষ বলটি দারুণ সুইংয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে বোল্ড করেন তাসকিন। তার শুরুর আগ্রাসনে স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করেই প্রথম উইকেট হারায় টস হেরে ব্যাটিং করতে নামা পাকিস্তান।
এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলে স্বাগতিকরা। ওপেনার সায়েব আইয়ুব ও অধিনায়ক শান মাসুদ ৯৯ রান তুলে প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন। বাংলাদেশের বোলিং ছিল আঁটসাঁট। তাসকিন, হাসান ও নাহিদের সঙ্গে মিরাজ এবং সাকিব এ সময়ে হাত ঘুরিয়েছেন। উইকেট না পেলেও তাদের বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত।
দ্বিতীয় সেশনেই এই নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ৩০ ওভারে ৮৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট আরো একটি বাড়তে পারত যদি শান মাসুদের ক্যাচ শর্ট লেগে জাকির হাসান জমিয়ে ফেলতে পারতেন। হয়তি তাতে বড় সমস্যাও হয়নি। চা-বিরতির পরপরই স্বাগতিকদের কঠিন চাপে ফেলে তাদের অলআউট করতে সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় সেশনে মিরাজ ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন শানকে (৫৭) ফিরিয়ে। তার ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাইম তাকে এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে স্ট্যাম্পড হন ৫৮ রানে। ছোট ছোট স্পেলে হাত ঘোরানো তাসকিন চতুর্থবার বোলিংয়ে এসে সৌদ শাকিলকে বোল্ড করেন। অফস্টাম্পের বাইরের বল স্কয়ার কাট করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে আসেন শূন্য রানে মিরাজের হাতে জীবন পাওয়া এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় সাফল্যে ভাসিয়েছেন বাবর। বাংলাদেশের ধ্রুবতারা সাকিব পান তার একমাত্র উইকেট। সাকিবের আর্ম বল জোড়া পায়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৩১ রানে।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যের সবচেয়ে উপদান ছিল শৃঙ্খল বোলিং। আজও তেমন কিছুর দেখা মিলেছে। গতির সঙ্গে আগ্রাসন মিলিয়ে নাহিদ রানা দারুণ বল করেছেন। সুযোগ তৈরি করলেও সাফল্য মেলেনি দ্বিতীয় সেশনে। ওই সেশনে ১৫০ এর আশে পাশে দুই তিনটি ডেলিভারী করেছিলেন। সৃষ্টিকর্তাও তাকে নিরাশ করেননি। তার লাফিয়ে ওঠা এক ডেলিভারী থেকে ব্যাট সরাতে পারেননি রিজওয়ান। তাতে পাকিস্তানের বড় স্কোরের আশা শেষ হয়ে যায়। শেষদিকে মিরাজই বাকিদের ড্রেসিংরুমের পথ দেখিয়েছেন।
২২.১ ওভারে ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে মিরাজ দিনের সেরা বোলাররা। এছাড়া লম্বা সময় পর ফিরে তাসকিন ৩ উইকেট নিয়ে রেখেছেন বিরাট অবদান। সাকিব ও নাহিদের ১ উইকেট ছিল দারুণ কিছু। সব মিলিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাদা পোশাকে রঙিন দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ।
দেশের বাইরে এটাই মিরাজের সেরা বোলিং সাফল্য। এর আগে নয় ফাইফারের দুটি ছিল হারারে ও কিংস্টনে। এবার পাকিস্তানের মাটিতে ফাইফার পেয়ে আনন্দটা দ্বিগুন করলেন। আগামীকাল তৃতীয় দিনে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটেই এই টেস্টের চিত্রনাট্য লেখা হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়