যেখানে বিপর্যয় সেখানেই লিটনের সেঞ্চুরি
তীব্র সমালোচনা কম হয়নি। দল থেকে বাদ পড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার কিছু না করে ফিরে আসার নজিরও রয়েছে। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে এমন উত্থান-পতন নিয়মিত ঘটনা। লিটন দাসের ক্যারিয়ারটাও এমন কিছুই ভেতর দিয়েই গেছে লম্বা সময়।
তবে যখনই লিটন ফিরে এসেছেন বড় কিছু করেই নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। ‘অ্যান্ড লিটন দাস ইজ পেইন্টিং আ মোনালিসা হিয়ার!’ তার ব্যাটিং ইয়ান বিশপের চোখে এতোটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল যে মোনালিসা চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য করেছিল। মাধুর্যতা, সৌন্দর্য, গভীরতা মিলিয়ে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি মোনালিসা। ২২ গজে লিটনের ব্যাটিং যেন বিশপকে মনে করিয়ে দিয়েছে সেই সৃষ্টি। লিটন যখন বড় কিছু করেন তখন ভিঞ্চির সেই মোনালিসা সামনে চলে আসে। যেমনটা এলো রাওয়ালপিন্ডির ২২ গজে।
পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে অসাধারণ এক সেঞ্চুরির ছবি আঁকলেন। ক্যারিয়ারের ক্যানভাসে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি। ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ধ্বংস্তুপ থেকে তুলে আনেন অনায়েসে। মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন এই সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পথে। যেখানে মিরাজের অবদান ৭৮।
লিটনের টেস্ট ক্যারিয়ারের চার সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে এমন কঠিন মঞ্চে, বিপর্যয় পরিস্থিতিতে। খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলার সঙ্গে নিজের মাইলফলক পূর্ণ করা রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, চার সেঞ্চুরি তিনটিই লিটন করেছেন দলের স্কোর পঞ্চাশের কম থাকা অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচের নিচে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান আর একজনও নেই। তাতে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এমন কিছু করার কীর্তি গড়লেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
আজকে লিটন যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন দলের রান ২৬। উইকেট নেই ৫টি। তার যোগ দেওয়ার পরপরই সাকিব ফেরেন সাজঘরে। সেখান থেকে মিরাজকে নিয়ে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন। মিরাজ ৭৮ রানে ফিরলেও লিটন ইনিংসটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন। এর আগেও এমন কিছু করেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে ২০২১ সালে যখন প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তখন ৪৯ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৪ উইকেট। লিটন পাঁচে নেমে খেলেন ১১৪ রানের ইনিংস।
পরের বছর মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। সেবার ২৪ রানে বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। ছয়ে নেমে লিটনের ম্যাজিকাল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের মুখরক্ষা হয়। আজও তেমন কিছুই হলো। লিটনের ব্যাট আরও একবার হাসলো। হাসলো বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডও। পাকিস্তানের মাটিতে আরেকটি জয়ের স্বপ্নের ছবি আঁকছে বাংলাদেশ। ম্যাচের এখনো দুদিন বাকি। পাকিস্তানকে চেপে ধরতে পারলে অসম্ভব নয় কিছুই।
ইয়াসিন/আমিনুল