চীপকে টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড কেমন?
২০১৯ সালের পর আবারো ভারত সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে রোববার দুপুরে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম টেস্ট। চীপকের এই স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট। এর আগে হায়দরাবাদ, ইন্দোর ও কলকাতায় টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ।
১৯৩৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে পথ চলা শুরু হয় চীপক স্টেডিয়ামের।ভারত আতিথেয়তা দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। এই মাঠে অতিথি দল হিসেবে তারাই সবচেয়ে বেশি ১১ ম্যাচ খেলেছে। বেশি ম্যাচ খেলার কারণে যেটা হয়েছে, সাফল্যের হার তাদেরই বেশি। যদিও পরাজয়ের সংখ্যাটও কম নয়। ১১ ম্যাচে ইংল্যান্ড এই মাঠে ৪টি জিতেছে, হেরেছে ৬টি। ড্র করেছে ১ ম্যাচ।
ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিচ ৭টি করে ম্যাচ এবং পাকিস্তান ৪ ম্যাচ খেলেছে। এই তিন দলেরই কেবল চীপকে জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে। প্রত্যেকেই জিতেছে ১টি করে ম্যাচ। এছাড়া নিউ জিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা ২টি করে ম্যাচ খেলার পর জিততে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকা ১টি ম্যাচ খেলে জয়ের মুখ দেখেনি।
চীপকের দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার। বলা হয়, চেন্নাইয়ের দর্শকরা ‘স্পোর্টিং বিহেভিয়ের’ এর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। স্বাগতিক দলের জন্য তো তারা গলা ফাঁটায়। অতিথি দলকেও দেয় প্রাপ্য সম্মান। পাকিস্তান ১৯৯৯ সালে যেবার টেন্ডুলকারের দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরির (১৩৬ রান) পরও ম্যাচ জিতেছিল, দর্শকদের জন্য তারা ল্যাপ অব অনার দিয়েছিল।
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে চীপক মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে। মাদ্রাজ ক্রিকেট গ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত ছিল আগে। ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই স্টেডিয়াম। ভারতের অনান্য মাঠের মতো এখানে প্রচুর রান হয়। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হয় বলে স্বাগতিক ও অতিথি, দুই দলই সমান সুযোগ পায়। তবে গত কয়েক বছরে ভারত হোম অ্যাডভানটেজ বেশি ব্যবহার করায় উইকেটের চরিত্রও কিছুটা পাল্টেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা একই সুযোগ নেবে তা বলতে দ্বিধা নেই।
রেকর্ডের দিক থেকে এ স্টেডিয়াম জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমিদের হৃদয়ে। সুনীল গাভাস্কার ১৯৮৩ সালে ৩০তম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড ভেঙেছিলেন এই মাঠে। ২০০৮ সালে বীরেন্দ্রর শেবাগ দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন এই মাঠে। ২৭৮ বলে তিনশ ছোঁয়ার পর ৩১৯ রান করেছিলেন। রাহুল দ্রাবিড় টেস্ট ক্রিকেটে তার দশ হাজার রানের মাইলফলক এই মাঠেই ছুঁয়েছিলেন। শচীন টেন্ডুলকার টেস্টে ভারতের মাঠগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান এখানেই করেছিলেন। নয় টেস্টে ৮৭.৬০ গড়ে ভারতের ব্যাটিং ইশ্বরের রান ছিল ৮৭৬।
বোলারদের জন্যও সমান সুযোগ থাকে। অনিল কুম্বলে এখানে ৮ ম্যাচে ৪৮ উইকেট পেয়েছেন ১৯.৫৬ গড়ে। যেখানে তার ইকোনমি ছিল ২.৬৪। যা ভারতের মাটিতে সর্বনিম্ন। তার চেয়ে ৬ উইকেট কম পেয়েছেন হরভাজন সিং। পেসারদের মধ্যে কপিল দেব ৪০ উইকেট নিয়ে রয়েছেন চল্লিশের ঘরে। খেলা চালিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে এখন ৩০ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে আছে রবীচন্দ্রন অশ্বিন।
৩৬ টেস্ট হওয়া এই মাঠে আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে ১৩টিতে। আগে বোলিং করা দল জিতেছে ১০টি। প্রথম ইনিংসে গড় রান ৩৪৭। ভারত এই মাঠেই নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৭৫৯ রান করেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আবার ইংল্যান্ডের কাছে ৮৩ রানে অলআউটের লজ্জাও তারা পেয়েছে।
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এই মাঠে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। এর আগে ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে আরেকটি ওয়ানডে খেলেছিল ত্রিদেশীয় সিরিজে। চীপকে এবার অভিজাতের ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সাকিব, মুশফিক, শান্ত, তাসকিনদের শুরুটা কেমন হয় সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়