রায়না-কাইফসহ কানপুরের যে হোস্টেলে জড়িয়ে আছেন কোহলিও
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, কানপুর থেকে || রাইজিংবিডি.কম
নিজের পরিচয়টা দিলেন এভাবে, ‘আমি নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম, একটা হোটেলে থেকে খেলেছিলাম, হোটেলের নামটি মনে নেই।’ কথাগুলো বলা ভারতীয় জাতীয় সুইমিং দলের সাবেক সদস্য রাজ নারায়ণ সিং এখন উত্তর প্রদেশ সরকারের ডেপুটি স্পোর্টস ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন।
কানপুর গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামে রাজ নারায়ণের অফিস। পদবি থেকে স্পষ্ট তার অধীনে চলে কানপুরসহ উত্তর প্রদেশের ক্রীড়া বিভাগ। কানপুর গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামের পেছনে রয়েছে ৪৯ বছর বয়সী একটি হোস্টেল। এখানে যেটি কানপুর ক্রিকেট হোস্টেল নামে পরিচিত।
যে হোটেলে থেকে বেড়ে উঠেছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার সুরেশ রায়না, বিশ্বসেরা ফিল্ডারদের একজন মোহাম্মদ কাইফ প্রমুখ। এই হোস্টেলের খোঁজ নিতে গিয়েই রাজ নারায়ণের সঙ্গে দেখা।
২ তলা বিশিষ্ট পুরোনো ধাঁচের বিল্ডিং। সামনে বসে আছেন কয়েকজন। সন্ধ্যায় কোনো কাজ নেই। হোস্টেল ইনচার্জ অমিত পালকে দেখে কয়েকজন এসে কদমবুসি করে গেলেন। হোস্টেলে অবস্থান ২৫ জন ক্রিকেটারের। কেউ ব্যাটার, কেউ স্পিনার আবার কেউ পেসার। একসঙ্গে থেকে কানপুর গ্রিনপার্কে অনুশীলন-কোচিং করে তারা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।
প্রতি বছর এখানে ১৫ বছরের কমবয়সী ২৫জন ছাত্র ভর্তি হয়। তারা কানপুরের বিভিন্ন স্পোর্টস স্কুল/কলেজে পড়াশোনা করেন। তিন বছর এখানে থেকে কোচিংয়ের সুযোগ পান। জেলা-রাজ্য বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে তবে এখানে সুযোগ পেতে হয়, ‘আমি রাজ্য ও জেলা লেভেলে অনেকের সঙ্গে ট্রায়াল দিয়ে এই হোস্টেলে ভর্তি হতে পেরেছি। সেখান থেকে আমরা ২৫ জন নির্বাচিত হই’-বলছিলেন পাঠক কুমার।
পুরোনো-জরাজীর্ণ এই হোস্টেলে উঠতি ক্রিকেটাররা বেড়ে ওঠেন ধরা-বাধা নিয়মে। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় কার্যক্রম, চলে সন্ধ্যা অব্দি। হোস্টেলের সামনে থাকা মাঠ-নেটসহ গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামটিও এই ক্রিকেটারদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
‘আমাদের সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠতে হয়। এরপর সবাই মিলে অ্যাসেম্বলি করি। তারপর শুরু হয় অনুশীলনের কার্যক্রম। আমাদের কোচরা আমাদের হাতে-কলমে সবকিছু শেখান। সবমিলিয়ে এখানে আমরা দারুণভাবে বেড়ে উঠছি-বলছিলেন লেগ স্পিনার নিখলিশ প্রতাপ সিং।
হোস্টেলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিখলিশ ও পাঠক (ডানে)
হোস্টেলের নিচতলায় অবস্থিত ডাইনিং। রান্না-বান্নার জন্য আলাদা বাবুর্চি। দেয়ালে টাঙানো আছে খাবারের তালিকা। এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্কুলের খরচ, চিকিৎসা ছাড়াও উত্তর প্রদেশ সরকার প্রতিদিন প্রতি ছাত্রের খাবারের জন্য বরাদ্ধ রেখেছে ৩৭৫ রুপি!
রাজ নারায়ণ বলেন, ‘১৯৭৫ সালে কানপুরের এই হোস্টেল স্থাপিত হয়। তখন এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। এখন সবকিছু আধুনিক করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশ সরকার তাদের স্কুলের বেতন-ভাতা, চিকিৎসা ছাড়াও খাবারের জন্য প্রতিদিন ৩৭৫ রুপি বরাদ্ধ রেখেছে।’
শুধু কানপুরে না, পুরো উত্তর প্রদেশজুড়ে এমন ৩৫টি হোস্টেল রয়েছে। হোস্টেলভেদে ছাত্রের সংখ্যাও বাড়ে-কমে। কানপুরের ক্রিকেটের জন্য নির্ধারিত হলেও ফুটবল-হকিসহ নানা খেলার উঠতি খেলোয়াড়দের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। যেখানে তারা কোচসহ পেয়ে থাকেন সবধরণের আধুনিক সুবিধা।
‘আমরা জেলা পর্যায় থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করি। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা ভর্তি নেই। সবমিলিয়ে উত্তর প্রদেশে ২৫০ বাচ্চাকে সরকার হোস্টেলে রেখে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়’-বলছিলেন রাজ নারায়ণ।
পুরোনো এই হোস্টেলের পাশে দেখা যায় একটা নির্মাণাধীন ভবন। হোস্টেল ইনচার্জ অমিত জানান, এটিও হোস্টেল হবে। এখানে ৮০জন ছাত্রের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। পুরোনো হোস্টেলটি শুধু ক্রিকেটের জন্য বরাদ্ধ হলেও নতুনটি হবে সবধরণের ক্রীড়ার জন্য।
রায়না-কাইফ ছাড়াও এই হোস্টেল থেকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন রুদ্র প্রতাপ সিং ও গোপাল শর্মা প্রমুখ। এখানে থাকা ক্রিকেটাররাও স্বপ্ন দেখছেন তাদের মতো একদিন ভারতের জার্সি গায়ে নামবেন। স্বপ্নটা আরও বড় হয়েছে কানপুর বিরাট কোহলিকে কাছে পেয়ে। সব ছাত্র ছবি তুলেছেন তার সঙ্গে। কানপুরের এই হোস্টেলে জড়িয়ে আছেন কোহলিও। তার কোচ রাজকুমার শর্মা যে এই হোস্টেলেও কোচিং করিয়েছেন!
কানপুর/রিয়াদ/বিজয়