ঢাকা     সোমবার   ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৫ ১৪৩১

রেকর্ডগড়া ‘বিধ্বংসী’ ব্যাটিংয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, কানপুর থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:১৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রেকর্ডগড়া ‘বিধ্বংসী’ ব্যাটিংয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ

গ্রিনপার্কের সবুজ গলিচায় ফুল ফুটিয়ে ফোকাস কেড়ে নিয়েছিলেন মুমিনুল হক। তবে ভারতীয় ব্যাটারদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মুমিনুলের ছন্দময় ব্যাটিং বেলা গড়াতে গড়াতে চাপা পড়ে যায়। দিনশেষে আবারও ব্যাটিংয়ে নামতে হয় তাকে! ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টে রেকর্ডগড়া রানরেটে ব্যাটিং করে ভারতের চোখ জয়ের দিকে, তাতে যেন এলোমেলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

কানপুর গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চতুর্থদিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২৬  রান। ভারতের দেওয়া ৫২ রানের লিড থেকে ২৬ রান পিছিয়ে আছে সফরকারীরা। সাদমান ইসলাম ৭ ও মুমিনুল হক শূন্যরানে অপরাজিত আছেন।

জাকির হাসান ১০ রানে ফিরলে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে আসা হাসান মাহমুদ ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। দুটি উইকেটই নিয়েছেন অশ্বিন।

আরো পড়ুন:

মেহেদি হাসান মিরাজকে ছক্কা মারতে গিয়ে ভারতের নবম উইকেট আকাশ দীপের পতন হতেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ভারতের রান তখন ৯ উইকেটে ২৮৫ রান। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ২৩৩ রানের জবাবের তারা এই রান করে।

মাত্র ৩৪.৪ ওভারে এই রান করে ভারত। ওভার প্রতি তোলে ৮.২২ রান। যা টেস্ট ইতিহাসে ওভার প্রতি সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড। এর আগে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭.৫৩ রান করে নিয়েছিল। 

মাত্র ২৪ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়ে শুরুটা করে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা-যশস্বী জয়সওয়াল। ৫০ রান আসে ১৮ বলে। ৩ ওভারে ৫০ রান টেস্টে এই প্রথম ঘটেছে। ১১ বলে ২৩ রান করে রোহিত ফিরলেও জয়সওয়াল থামেন ফিফটি করে। টি-টোয়েন্টি স্টাইলে খুনে মেজাজে ব্যাটিং করে গেছেন এই তরুণ। তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৭২ রান।

উইকেটের পর যে ব্যাটারই এসেছেন প্রায় সবাই ছিলেন মারমুখি। প্রথম ৭ ব্যাটারের মধ্যে ঋষভ পন্ত-রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাটিং করেছেন একশ স্ট্রাইক রেটের নিচে। রোহিতের স্ট্রাইক ছিল দুইশ’র বেশি। দেড়শ’র বেশি ছিল লোকেশ রাহুলের আর জয়সওয়ালের স্ট্রাইক রেট।

ভারতীয় ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট বলে দিচ্ছে অল্প ওভারে স্কোরবোর্ড ফুলে-ফেঁপে ওঠার কারণ। ৪৩ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেছেন রাহুল। এ ছাড়া শুভমান গিল ৩৬ বলে ৩৯, বিরাট কোহলি ৩৫ বলে ৪৭ ও রোহিত ১১ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন।

সর্বোচ্চ ৩টি ছয় মেরেছেন রোহিত। সব মিলিয়ে ছক্কা হয়েছে ১১টি। পুরো ইনিংস জুড়ে ছিল রেকর্ডের ছড়াছড়ি। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম পঞ্চাশের সঙ্গে দ্রুততম একশ, দ্রুততম দেড়শ ও দ্রুততম দুইশ রানের রেকর্ড গড়ে ভারত। এ ছড়াও বিশ্বের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭ হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখান কোহলি। তবে সবচেয়ে কম ইনিংস খেলে এই রানের কীর্তিতে কোহলি-ই প্রথম!

বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ চার উইকেট করে নেন সাকিব ও মিরাজ। মাত্র ৬ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছেন হাসান মাহমুদ। কমপক্ষে ৫০ রান দেওয়া বোলারদের মধ্যে হাসানই ওভার প্রতি সবচেয়ে বেশি (১১) রান দিয়েছেন। এ ছাড়া খালেদ আহমেদ ৪ ওভারে ৪৩ ও তাইজুল ইসলাম দিয়েছে ৭ ওভারে ৫৪ রান।

এর আগে ৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। মুমিনুল ৪০ ও মুশফিকুর রহিম ৫ রানে দিন শুরু করেছিলেন। দলীয় স্কোরবোর্ডে দিনের শুরুতে মাত্র ৫ রান যোগ হতেই ফেরেন মুশফিক। তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান।  একপ্রান্ত আগলে রেখে মুমিনুল দারুণ ব্যাটিং করতে থাকলেও অন্যপ্রান্তে চলছিল আসা যাওয়ার মিছিল। তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। যা টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ।

১৭২ বলে দেখা পেয়েছিলেন শতকের। শেষ পর্যন্ত ১৯৪ বলে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকেন। চার মেরেছেন ১৭টি আর ছক্কা ১টি। এ ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত ৩১, সাদমান ইসলাম ২৪, মেহেদি হাসান মিরাজ ২০ ও লিটন দাস ১৩ রান করেন।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন জাসপ্রীত বুমরাহ। ২টি করে উইকেট নেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন, মোহাম্মদ সিরাজ ও আকাশ দীপ। ১ উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা। তাতে তিনি ভারতের হয়ে প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে  ৩০০ উইকেটের মাইলফলকে নাম লেখান।

ঢাকা/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়