ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

মিরাজের মৌমাছি বিড়ম্বনা ও কানপুরের কেচ্ছা

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, কানপুর থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১০:৫৯, ১ অক্টোবর ২০২৪
মিরাজের মৌমাছি বিড়ম্বনা ও কানপুরের কেচ্ছা

চেন্নাই থেকে ফ্লাইটে কানপুর। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নিচে আসতেই পাওয়া গেলো রোদের উত্তাপ। হোটেল পর্যন্ত ফিরতে ফিরতে শোনা গেল কানপুর স্টেডিয়াম ঘিরে ‘অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার’ বিক্ষোভের কথা। এই তো সবে শুরু।

তিন বছর পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ পেয়েছে কানপুর গ্রিনপার্ক স্টেডিয়াম। ১৯৪৫ সাল তথা ব্রিটিশ আমলে তৈরি ঐতিহ্যবাহী এই স্টেডিয়াম নিয়ে ছিল অনেক উচ্চাশা। কিন্তু একের পর এক কাণ্ডে প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে গ্রিনপার্ক আসছে খবরের শিরোনামে।

যার সবশেষ সংযুক্তি বাংলাদেশ অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের প্যান্টের ভেতর মৌমাছি ঢুকে যাওয়া। চতুর্থ দিন প্রথম ইনিংস। ব্যাটিং করছিলেন মিরাজ। হঠাৎ করে বসে কাতরাতে দেখা যায় তাকে। হ্যামস্ট্রিং হয়েছিল কী না এমন প্রশ্নও উঠেছিল তখন। পরে জানা গেলো অদ্ভুত বিষয়। প্যান্টের ভেতর ঢুকে যায় মৌমাছি। 

আরো পড়ুন:

সংবাদ সম্মেলনে এক ভারতীয় সংবাদকর্মী প্রশ্ন তোলেন মৌমাছি নিয়ে। হাসতে হাসতে মিরাজের উত্তর, ‘মৌমাছির ব্যাপারটা আমি জানতাম না আসলে ঢুকে গিয়েছিল। পরে কামড় দিয়েছে, আমি ব্যথা পেয়েছি।’

চারদিকে সবুজে ঘেরা গ্রিনপার্কে আছে বানরের উৎপাতও। তবে বানর না দেখা গেলেও মৌমাছির আক্রমণ ঠিকই হয়েছে। কানপুর প্রতিদিনই দিয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনো ঘটনার জন্ম। বিশেষ করে তৃতীয় দিন যা হয়েছে সেটি ক্রিকেট বিশ্বে অনন্য নজির হয়ে থাকবে। সারাদিন জুড়ে কোনো বৃষ্টি হয়নি। তবুও  মাঠে গড়ায়নি একটি বল। সকাল থেকে দফায় দফায় পর্যবেক্ষণ শেষে দুপুরে কলড অফ ঘোষণা করা হয়।

কেন খেলা হয়নি এটা নিয়েও আছে দুইরকম বক্তব্য। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) জানিয়েছে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে তৃতীয় দিন খেলা হয়নি। কিন্তু এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কিউরেটর শিব কুমার বলছেন, পিচ-গ্রাউন্ড সব ঠিকই ছিল।

‘ম্যাচ অফিসিয়ালরা আমাদের আলো বাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে বলছিল। আলো থাকলে খেলা শুরু করা যাবে। পিচ এবং মাঠ ভালো ছিল। কিছু অংশ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও খেলা শুরু করা যেতো।’

এইতো গেলো মাঠের কথা। স্টেডিয়ামের অবকাঠামোও ভঙ্গুর অবস্থায়। গ্যালারির একটি অংশে দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এমন ব্যবস্থা। তিন দিকে খোলা প্রেসবক্সে বসে কাজ করার উপায় নেই। খসে পড়ছে পলেস্তারা। বৃষ্টি হলে টুপটুপ করে পড়ে পানি। গরমের কারণে বসাই দায়। বড় কুলার ফ্যানের ব্যবস্থা আছে, তবে প্রচণ্ড আওয়াজে কাজে ঘটে ব্যাঘাত। পাশের জনের কথা শুনতেও কানের কাছে গিয়ে চিৎকার করতে হয়।

মাঠের নানা সমস্যা তো আছেই। খেলার বাইরের বিষয়েও কানপুর প্রথম স্থানেই থাকবে। এ জন্য অবশ্য দায়টা বাংলাদেশের আইকনিক ফ্যান টাইগার রবির। ভারতীয় দর্শকদের হাতে মারধরের শিকারের মিথ্যা অভিযোগ করে শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরতে হয়েছে দেশে। লম্বা সময়ের জন্য তাকে ভারতে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলেও খবর রয়েছে।

সিরিজের সূচি ঘোষণার পর থেকে আলোচনায় আছে কানপুর। হিন্দু মহাসভার বিক্ষোভকে ঘিরে যার শুরু। কড়া নিরাপত্তায় তাদের বিক্ষোভ ধোপে টিকেনি। কিন্তু কানপুর প্রতিদিনই মুখোমুখি করছে কোনো না কোনো অদ্ভুত ঘটনার।

শেষ করি প্রেসবক্সের ছোট একটা বিষয় নিয়ে। কাজের মাঝে চেয়ার ছেড়ে নিচে গিয়েছিলাম একটু সময়ের জন্য। এসে দেখা গেলো চেয়ারটি নেই। আশে-পাশে পেছনে থাকা কেউই স্বীকার করে না। প্রেস বক্সের এক স্টাফকে খুঁজে অভিযোগ দিতেই বলে উঠলো, ‘কানপুর মে অ্যায়সা হোতা-রাহতা হ্যায়।’ অর্থাৎ কানপুরে এসব হয়, এটাই স্বাভাবিক। এমনকি মিরাজের মৌমাছির কামড় খাওয়াও!

ঢাকা/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়