ঝান্ডা এখন বিশের সেই তরুণদের হাতে
সাইফুল ইসলাম রিয়াদ, গোয়ালিয়র থেকে || রাইজিংবিডি.কম
প্রশ্নটা উঠতেই তাওহীদ হৃদয়ের যেন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। অর্থাৎ তাকে বিষয়টা খুব একটা প্রভাবিত করছে না। ঊনিশের একঝাঁক তরুণ ২০২০ সালে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো এনে দিয়েছিল বিশ্বকাপ। সেই দলের নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন হৃদয়। শুধু তাই নয়, বিশে বিশ্বকাপ জেতা দলের আরও ৫ সদস্য এখন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন।
তাই তো গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টির আগের দিন শনিবার (৫ অক্টোবর) হৃদয়ের কাছে প্রশ্ন ছুটে যায়, জাতীয় দলে তাদের নিজেদের বোঝাপড়া নিয়ে। কৌশলী হৃদয় উত্তর দিয়েছেন বৃত্তের বাইরে গিয়ে। নিজেদের মধ্যে বিষয়টিকে না রেখে পুরো দলের কথাই শুধু ভাবছেন তরুণ এই ব্যাটার। তবে স্বপ্ন দেখছেন সেই আগের মতোই।
‘৬ জন আছি দেখেই যে টিমের রিদম ভালো হবে এরকম কিছু না। টিমের ১৫ জনই আমাদের কাছে সমান। হয়তো ৬ জন এখন আছি, অনেকে টেস্ট ফরম্যাট খেলেছে ওডিআই খেলেছে, সবমিলিয়ে ১০-১২ জনের অভিষেক হয়ে গেছে। আমার কাছে মনে হয় যে, অবশ্যই ওটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দেয়।’
তাওহীদ হৃদয় ছাড়া ২০২০ যুব বিশ্বকাপে খেলা টি-টোয়েন্টি দলের বাকি ৫ সদস্য হলেন তানজীদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, তানজীম হাসান সাকিব, রাকিবুল হাসান ও শরিফুল ইসলাম। ইমন ও রাকিবুল ছাড়া বাকি চারজন বিশ্বকাপও খেলেছেন। আসা যাওয়ার মধ্যে আছেন শামীম পাটোয়ারী। টেস্টের ওপেনার হিসেবে নিজের জায়গা পোক্ত করেছেন মাহমুদুল হাসান জয়।
বিশ্ব জয়ের অভিজ্ঞতা কাজের লাগানোর কথা জানিয়ে হৃদয় বলেন, ‘একটা বড় অর্জন ছিল আমাদের জন্য কিন্তু ওদিকে এখন চিন্তা করার সময় নেই। এখন সামনের দিকে আমরা যখন এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের মতো বড় বড় টুর্নামেন্টে ভালো করব, তখন আমাদের ওই অভিজ্ঞতা বা অর্জন বলেন, কাজে লাগবে। আমরা যদি এখানে ভালো করতে না পারি, তাহলে মনে হয় না এটা এখানে কোনো কাজে আসবে।’
দলের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে গিয়েছেন। আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ারও সায়াহ্নে। সবমিলিয়ে এখন দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদেরই। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যত ভাবা হচ্ছে হৃদয়কে। তিন সংস্করণে বল হাতে উজাড় করে দিচ্ছেন শরিফুল। টানা দুই বিশ্বকাপ খেলা তানজীদ তামিমকেও ধরতে হবে হাল। আর নিজেদের জায়গা পোক্ত করার সুযোগ রাকিবুল-ইমনদের সামনে।
সব মিলিয়ে এই তরুণ ক্রিটারদের সামনে আছে দলের মুখ কিংবা সুপারস্টার হওয়ার সুযোগ। তারা কি ভাবছেন? হৃদয়ের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘সুপারস্টার তৈরি হওয়ার বিষয়টা আমি বলতে পারব না। এটা সময়ই বলে দেবে। দিন শেষে পারফর্ম করাটা ম্যাটার করে। পারফর্ম যদি করি, দলের রেজাল্ট যদি ভালো হয়, দেখা যাবে এখান থেকেই ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে আসবে অনেকে; আসার সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম ছাড়া আসলে আলটিমেটলি কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। সবাই পারফর্ম করতে চায় এবং চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে।’
দায়িত্ব নিতেও শিখছেন এই তরুণরা। যেমন হৃদয়ের কথাই বলা যাক। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে প্রিয় পজিশনে খেলতে না পারার বিষয়টি আমলে নেননি। তবে এবার সাকিব না থাকায় সুযোগ আসতে পারেন তার প্রিয় পজিশন চার নাম্বারে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে হৃদয় বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্লেয়ার জাতীয় দলে এসে তার পছন্দের জায়গা পায় না, খেলতে পারে না। এই জায়গাটা ক্রিয়েট করতে হয়, এই জায়গাটা যখন ডিজার্ভ করবো তখন অটোমেটিক চলে আসবে। আমি যদি এরকম টাইম ক্রিয়েট করতে পারি তাহলে আমার জন্য এটা হবে ইনশাল্লাহ।’
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য এখন ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল গোছানো। সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের পরবর্তী যুগে ঝান্ডা এখন এই তরুণদের হাতে। হৃদয় যেমন বলেছেন সময় বলে দেবে কে কী হয়, এই তরুণরা বাংলাদেশের ঝান্ডা ওড়াতে পারেন কী না সেটাও বলে দেবে সময়।
গোয়ালিয়র/রিয়াদ/বিজয়