ব্যাটিং দৈন্যতায় সহজ সুযোগ হাতছাড়া
আগের তিনবারের দেখায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নূন্যতম লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার কিছু করে দেখানোর আশায় ছিল পুরো দল। বোলাররা সেই সুযোগ করেও দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী পারফরম্যান্সে সুযোগ হাতছাড়ার আফসোসে পুড়ছে বাংলাদেশ।
শুরুতে নড়বড়ে বোলিংয়ের পর দারুণভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশি বোলাররা। ইংল্যান্ডকে বেশি দূর যেতে দেননি তারা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে লক্ষ্য নাগালের মধ্যে রাখলেও একাধিক ক্যাচ মিসে আফসোস বেড়েছে।
শারজাহতে বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশের বিপক্ষে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ৭ উইকেটে ১১৮ রান করে। প্রথম ইনিংসে যা ইংল্যান্ডের বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ইংল্যান্ডকে কখনোই টি-টোয়েন্টিতে হারাতে না পারা বাংলাদেশের জন্য আজ ইতিহাস গড়ার দারুণ সুযোগ ছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের দৈন্যতায় বড় পরাজয়কে সঙ্গী করেছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় ৭ উইকেটে ৯৭ রান করে ২১ রানের ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল।
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ১০ বছর পর সেটিই ছিল প্রথম জয়। আজ ছিল জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে হার মানল বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লে দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ৬ ওভারে ইংল্যান্ড বিনা উইকেটে ৪৭ রান তুলে নেয়। মনে হচ্ছিল, তারা আজও বাংলাদেশকে চেপে ধরবে। কিন্তু দারুণ বোলিংয়ে বোলাররা বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরায়।
সপ্তম ওভারে অভিজ্ঞ বোলার রাবেয়া খান ব্রেক থ্রু এনে দেন। ১৮ বলে ২৩ রান করা মাই বুচারকে আউট করেন তিনি। পরের ওভারে ফাহিমা খাতুন তুলে নেন নাট সিভার ব্রান্টের উইকেট। ৫৩ থেকে ৭৩ রানে যেতে কোনো উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড। কিন্তু, এরপর তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে তাদের ব্যাটিং অর্ডার। টপাটপ উইকেট তুলে এবং রান আটকে রেখে ব্যাটসম্যানদের কঠিন চ্যালেঞ্জ দেন বোলাররা।
বল হাতে ২টি করে উইকেট নেন নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন ও রিতু মনি। ১ উইকেট পেয়েছেন রাবেয়া খান। সবার সম্মিলিত আক্রমণেই ইংল্যান্ডকে বেশি দূর যেতে দেয়নি বোলাররা। ইংল্যান্ডের হয়ে চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন ড্যানি হজ। ৪০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। শেষদিকে এমি জোন্সের ১২ রানে ইংল্যান্ড জয়ের পুঁজি পেয়ে যায়।
লক্ষ্য তাড়ায় ১৭ রানে দুই ওপেনারকে হারায় বাংলাদেশ। সাথি রানি ৭ ও দিলারা আক্তার ৬ রান করেন। সেখান থেকে তৃতীয় উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়েন সোবহানা মোস্তারি ও নিগার সুলতানা জ্যোতি। জুটি গড়লেও প্রয়োজনমাফিক রান তারা তুলতে পারেনি। পাওয়ার প্লে’তে বাউন্ডারি আসে মাত্র ১টি। এরপর ডট বলের মিছিলে রান তুলতে বেগ পেতে হচ্ছিল তাদের।
তবুও লক্ষ্য কঠিন ছিল না। ৬০ বলে দরকার ছিল ৭৭ রান। হাতে ৮ উইকেট। দলীয় ৫২ রানে নিগার সুলতানা (১৫) রান আউটে বিদায় নিলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ হতেই স্বর্ণা আক্তার ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন। ভালো করতে পারেননি তাজ নেহারও। তার ব্যাট থেকে আসে ৭ রান।
এক প্রান্ত আগলে সোবহানা চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। আসকিং রান রেট বেশি থাকায় বাউন্ডারির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দলের দাবি মেটাতে পারেননি সোবহানা। তার ৪৮ বলে ৪৪ রানের ইনিংস দলের পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র।
ইংল্যান্ডের হয়ে লিনসে স্মিথ ও চার্লি ডিন ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। ১টি করে উইকেট নেন সারাহ গ্লেন ও নাট সিভার ব্রান্ট।
২০০৯ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড এবং আরো তিনবার খেলেছে ফাইনাল। অভিজ্ঞতায়, শক্তিতে বাংলাদেশের চেয়ে ইংল্যান্ড অনেক এগিয়ে। শারজাহর ২২ গজে সেই রূপটাই দেখাল ইংল্যান্ড। বাগে পেয়েও বাংলাদেশ পারেনি সুযোগ কাজে লাগাতে।
ঢাকা/ইয়াসিন