ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব উপস্থিতি না থাকায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০০, ৯ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব উপস্থিতি না থাকায় সাকিবের দুঃখ প্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরব উপস্থিতি না থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। জুলাই-আগস্টে চলা এই আন্দোলনের সময় সাকিব দেশের বাইরে ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত ছিলেন।

কিন্তু এই আন্দোলনের সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এবং বাংলাদেশের পোস্টারবয় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। লম্বা সময় পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে সাকিব নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে কেন রাজনীতিতে জড়িয়েছেন সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।  সাকিব লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে।’

আরো পড়ুন:

‘শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজনহারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।’

‘এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন  হতাম।’

আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা মার্কায় নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাকিব। নিজের জেলা শহর মাগুড়া-১ আসন থেকে নির্বাচন করেন তিনি। তবে তার কোনো রাজনৈতিক অতীত ছিল না। ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি কাছের মানুষ। ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে অনেকবারই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। সাকিবের রাজনীতিতে এসেছেন মূলত ক্রিকেটেরই সূত্রে।

রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেন সাকিব লিখেছেন, ‘আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।’

বাংলাদেশের কোটি কোটি সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে সাকিব যোগ করেন, ‘এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন-আপনারা। আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছেন। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড় -আমাকে শক্তি যুগিয়েছে। আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই।’

সরকার পতনের পর সাকিব এখনও বাংলাদেশে ফেরেননি। এরই মধ্যে তার নামে হত্যা মামলা হয়েছে। পুঁজিবাজারে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেনে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।

ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে বিদায় নিতে চান সাকিব। এমন আকুতি জানিয়ে সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন শর্ত। দেশে যাওয়া এবং আসা; দুটোই যেন স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে, দেশে থাকাকালীন নিরাপদ অনুভব করা এবং দেশে ফিরলে প্রয়োজনে দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা পেলেই টেস্ট সিরিজ খেলতে সাকিব আসবেন বাংলাদেশে।

এ সময়টাতে দর্শকদেরও আগের মতোই পাশে চান সাকিব, ‘আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা।’

‘এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।’

‘আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি –এই বিদায়বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক –আমি নই, আপনারা!’

ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়