হাথুুরুসিংহের বিরুদ্ধে বিসিবির যত অভিযোগ
একটি নয়, দুটি নয়। হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান ফারুক আহমেদের একগাদা অভিযোগ। ছোট-বড় সব অভিযোগ মিলিয়ে রীতিমত অভিযোগনামা বাংলাদেশের সফলতম কোচের বিরুদ্ধে।
মাঠের পারফরম্যান্সে হাথুরুসিংহেকে সফল বলতে দ্বিধা করেন না কেউই। কিন্তু বাইরে এবং মাঠের বাইরে তার আচরণ নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন সবার। সাবেক বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে ‘ম্যানেজ’ করে সবকিছু করতেন শ্রীলঙ্কান কোচ। ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কিন্তু সরকার পতনের পর নাজমুল হাসানরা বোর্ডের দায়িত্ব হারালে সবকিছু পাল্টে যায়। ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই হাথুরুসিংহেকে নিয়ে তার নেতিবাচক ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। কোচ হিসেবে তার বেশিকিছু দেওয়ার নেই সেটাও বলেছিলেন। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর কোচকে জয়ের ক্রেডিটও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে বাদ দেওয়ার ভাবনা বোর্ডের ছিল সেটাও পরিস্কার ছিল ফারুকের কথায়।
ভারতের সিরিজে ব্যর্থতার পর সেই আলোচনা ডালাপালা মেলতে শুরু করে। তবে পারফরম্যান্সের কারণে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করেনি বিসিবি। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ। সেজন্য শোকজ করে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়েছে। বিসিবি প্রধান ফারুক মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের বর্তমান কোচের ব্যাপারে... দু-তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যা আসলে খুব পীড়াদায়ক ছিল আমার জন্য, সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে। দলের জন্যও খুব ভালো ব্যাপার ছিল না আর কী। সেদিক বিবেচনা করে তাকে আমরা শোকজ নোটিশ অ্যান্ড সাসপেনশন ফ্রম ডিউটি অ্যাজ হেড কোচ আজকে সার্ভ করেছি।’
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ফারুক আহমেদ বলেছেন,‘যেদিন থেকে এই ব্যাপারটার মধ্যে ঢুকেছি… আগে তো পত্রিকায় পড়েছি, হালকাভাবে জেনেছি… দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই আমার সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে। তারপর মনে হয়েছে যে, এই ব্যাপারে কিছু (ব্যবস্থা নেওয়া) হলে ভালো হয়। কারণ, বর্ণবাদ, গালাগাল, এগুলো আইসিসি তো এখন শক্তভাবে সামলায় এবং শারীরিক আক্রমণের (অ্যাসল্ট) মতো কিছু হলে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। এটা ওই ছেলেটির জন্য তো খুব একটা ব্যাপার… জাতীয় একজন ক্রিকেটার…।’
‘আমরা মানুষ… কাউকে ডিফেন্ড করছি না, হিট অব দা মোমেন্ট কিছু হতে পারে। তবে শারীরিক আঘাত কোনো পর্যায়ে কোনোভাবেই আপনি করতে পারবেন না একজন জাতীয় ক্রিকেটারকে। এটার শাস্তি এরকমই, যা হয়েছে। এটাই হওয়া উচিত ছিল। আগেই উচিত ছিল। এখন অন্তত আমরা করতে পেরেছি, সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক হিসেবে আমি খুশি।’ - যোগ করেন তিনি।
চুক্তি অনুযায়ী ছুটি না কাটানোর কথা বলতে গিয়ে ফারুক আহমেদ আরো বলেছেন, ‘সে যে সময়টা কাটিয়েছে (ছুটি), এটা অতিরিক্ত… তিন মাসের বেশি সময় সে কাটিয়েছে। ওটাও কিন্তু মিসকন্ডাক্ট-এর অংশ। আপনি বিচ্ছিন্নভাবে জানিয়েছেন একটি-দুটি মেইলে যে… (ছুটিতে) যেতে হবে বা কী… কিন্তু এসব তো তিন মাসের বেশি হওয়ার কথা নয়। সেটা একটি বিরাট ব্যাপার ছিল অসদাচরণের। কারণ, আমাদের সবারই জবাবদিহিতা থাকা উচিত।’
‘বোর্ড প্রধান হিসেবে আমিও দায়বদ্ধ। কিছু নিয়মের বাধ্য তো আমাদের হতে হবে। সেটাও ভঙ্গ করা হয়েছে গুরুতরভাবে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, দুটি ব্যাপার হয়েছে এখানে- মিসকন্ডাক্ট উইথ আ প্লেয়ার ও মিসকন্ডাক্ট অ্যাজ আ এমপ্লয়ি। দুটিই আমরা বিবেচনায় নিয়েছি ও তাকে খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’- যোগ করেন ফারুক।
জানিয়ে রাখা ভালো, বোর্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর হাথুরুসিংহের সঙ্গে ফারুক আহমেদের আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ কিংবা কথাও হয়নি। ফারুক আহমেদ নির্বাচক হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন হাথুুরুসিংহের সঙ্গে তার দূরত্বের কথা শোনা যায়। সেসব তাকে দায়িত্ব থেকে সরাতে কোনো প্রভাব রাখেনি বলে দাবি করেছেন ফারুক আহমেদ।
হাথুরুসিংহের জায়গায় বোর্ড নিয়োগ দিয়েছে ফিল সিমন্সকে। তাকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত ফারুক আহমেদ, ‘তিন-চারজন কোচের সঙ্গে কথা বলেছি, তার মধ্যে যাকে সেরা মনে হয়েছে… অনেক সময় হয় কী, আমি যেটা মনে করি, যখন আপনি কোচ হিসেবে সুপারস্টার, তখন কতটা মনোযোগ থাকে কাজে… তার চেয়ে বরং যারা সত্যিই পরিশ্রমী… তাকে (সিমন্স) আমি দেখেছি, কাজের ধরন… যখন জিম্বাবুয়ে খেলতে এসেছে, ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছি, কখনও আলোচনা করেছি যে, কীভাবে সে চিন্তা করে, কীভাবে অনুপ্রাণিত করে (দলকে), এসব দেখে আমার ভালো লেগেছে।’
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালেই তার ঢাকা পৌঁছে যাওয়ার কথা রয়েছে। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফেব্রুয়ারি-মার্চে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন সিমন্স।
ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়