ঢাকা     মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ৬ ১৪৩১

তিনশ’র আনন্দের সঙ্গে রাবাদার উইকেট নিয়ে বিস্ময়

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২১ অক্টোবর ২০২৪  
তিনশ’র আনন্দের সঙ্গে রাবাদার উইকেট নিয়ে বিস্ময়

ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার মুশফিকুর রহিম এমন আউট হয়েছেন। ভেতরে ঢোকানো বলে তার ব্যাট-প্যাডের ফাঁকে বিশাল গ্যাপ দিয়ে। বল তড়িৎ গতিতে ঢুকেই ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসু রাবাদা সেই সুযোগটিই নিলেন। সফলও হলেন। 
রাবাদার জন্য মিরপুরের ২২ গজ অতি পরিচিত। ২০১৫ সালে এখানেই হয়েছিল তার ওয়ানডে অভিষেক। লম্বা সময় পর এই মাঠে ফিরলেন রাবাদা। এমন এক সময়ে ফিরলেন যখন তার সামনে টেস্ট ক্রিকেটে তিন’শ উইকেটের মাইলফলকের হাতছানি। নিজেকে অপেক্ষায় রাখলেন না। মুশফিকের উইকেট নিয়ে রাবাদা ছুঁয়ে ফেলেন সেই মাইলফলক। এরপর আরও দুই উইকেট।

দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, ডেইল স্টেইনরা যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই পথেই হাঁটছেন রাবাদা। ২৯ বছর বয়সী পেসার ষষ্ঠ প্রোটিয়া ক্রিকেটার হিসেব পেয়েছেন তিন’শ উইকেটের স্বাদ। অনন্য অর্জনে খুশি না হয়ে আর উপায় আছে।

দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের উচ্ছ্বাস দেখালেন এভাবে, ‘আজ সকালে যখন আমি বোলিং করতে এসেছি, আমি সত্যিই সেই চূড়ান্ত উইকেটের কথা ভাবছিলাম না। আমি এই টেস্টে কীভাবে জিততে যাচ্ছি, বিশেষ করে টস হেরে প্রথমে বোলিং করার পর আমি বেশি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু যখন এটি ঘটেছে, এটি কেবল একটি স্বস্তি ছিল। সবাই মাইলফলকের জন্য খেলে, তবে এটি একটি স্বস্তি ছিল। আমার সতীর্থরা যেভাবে আমাকে সমর্থন করে, আমরা একে অপরকে সমর্থন করি এবং এটি সত্যিই ভাল লেগেছিল। এটা একটা বিশেষ মুহূর্ত। রেকর্ড হিসাবে, আমি এটি সম্পর্কে জানতাম না, তবে আমি অনুমান করি এটি আমাকে আরও ভাল করতে অনুপ্রাণিত করবে।’

আরো পড়ুন:

রাবাদা নিজেকে কোথায় নিয়ে যাবেন সেটা পরের বিষয়। আপাতত তার সব ভাবনা মিরপুর টেস্টকে ঘিরে। যেখানে প্রথম দিন ১৬ উইকেট পড়েছে। স্বাগতিকদের ১০ উইকেটের পর অতিথিরা হারিয়েছে ৬ উইকেট। বোলারদের এমন উইকেটানন্দর দিনে রাবাদার মুখেও চওড়া হাসি। তবে মিরপুরের ২২ গজ নিয়ে রীতিমত বিস্মিত এ পেসার। শুধু তিনি একা নন। গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা দলই উইকেট নিয়ে অবাক। তার মুখে শুনুন বাকিটা, ‘উইকেট যেভাবে আচরণ করেছে তা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। আমরা ভেবেছিলাম এখানে ঘূর্ণি থাকবে, নতুন বলে কোনো নিপ (ভেতরে ঢোকা) হবে না। কিন্তু নতুন বলে মুভমেন্ট ছিল। বড় কোনো সুইং ছিল না। কিন্তু অফ দ্য উইকেটে যতটুকু আদায় করা গেছে ততটাই মুভমেন্ট করেছে।’

‘এরকমটা আমরা নেটে পেয়েছিলাম। সচরাচর এমনই হয়। আপনি নেটে যেটা পাবেন সেটাই ম্যাচে পাবেন। স্পিনারদের জন্যও টার্ন থাকছে। আবার পেসারদের জন্যও সিম মুভমেন্ট আছে। আমরা বেশ অবাক হয়েছিলাম। পিচগুলি প্রস্তুত করি না, তবে এটিই প্রস্তুত করা হয়েছিল।’ - যোগ করেন দ্রুতগতির এই বোলাররা।

উপ-মহাদেশের দলগুলো সচরাচর উপ-মহাদেশের বাইরের দলগুলোকে স্পিন উইকেট অফার করে। পেসবান্ধব উইকেট পাওয়া যায় না হরহামেশা। এবার একটু হলেও ব্যতিক্রম হয়েছে। স্পিনারদের সঙ্গে পেসাররাও জ্বলে উঠেছে দারুণভাবে। বাংলাদেশের একটি মাত্র উইকেট হাসান মাহমুদ পেলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা ও মুল্ডার ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন।

টেস্ট ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ করে তুলতে ব্যাট-বলের ভারসাম্য লড়াই এবং স্পিন ও পেস বোলারদের জন্য সমবান্ধব উইকেট চাইলেন রাবাদা, ‘আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে ভারসাম্য থাকা দরকার। যদি আপনি ব্যাট এবং বলের মধ্যে একটি সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান। আপনি যে ধরনের উইকেট চান…আপনি যুক্তি দিতে পারেন যে বোলিং ইউনিট ভাল বোলিং করেনি বা একটি ব্যাটিং ইউনিট পারফর্ম করেনি এবং এটি সেই ভারসাম্য যা আপনি সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রথম দিনে ১৬ উইকেট নিয়ে, আমি বলব এটা বোলারদের দিকে ঝুঁকছে। টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট এবং বলের মধ্যে একটি সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত, যেখানে বোলাররা ভালো বোলিং করলে কিছু পায় এবং ব্যাটাররা নিজেদের প্রয়োগ করলে রান করতে পারে।’

হাতে কেবল ৪ উইকেট রেখে প্রথম ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৩৪ রানের লিড পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কত রান নিরাপদ হতে পারে এমন প্রশ্ন করা হলে রাবাদা বলেছেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব রান করার চেষ্টা করবো। আমরা এখন ৩৪ রানের লিড পেয়েছি। যদি এক’শ রানের লিড পাই সেটা দারুণ কিছু হবে। আশা করছি নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।’

ইয়াসিন/আমিনুল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়