সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল ২০২৪
আবারও কি হবে ছাদখোলা বাসে উদযাপন
বাংলা্দেশের ক্রীড়াঙ্গনের কোনো অর্জনে সবশেষ কবে ছাদখোলা বাসে উদযাপন করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে চোখের সামনে ধরা দেবে ট্রফি হাতে সানজিদা আক্তার-কৃষ্ণা রানী সরকারদের উল্লাসের চিত্র। ২০২২ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে মেয়েরা দেশের ফুটবলে সৃষ্টি করেছিলেন ইতিহাস। বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনের পথে সেই আনন্দিক যাত্রার উপলক্ষ্য আরেকবার হাতছানি দিচ্ছে মেয়েদের সামনে। আরেকবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সাবিনা খাতুনের দল। আবারও কি হবে ছাদখোলা বাসে উদযাপন?
এই প্রশ্নের উত্তরে আশার বাণী শুনিয়েছেন সানজিদা আক্তার। তার একটি পোস্টের জের ধরেই আগেরবার ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করেছিল বাফুফে। এবারও আশার কথা শোনালেন সানজিদা। আগের আসরের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির আশা করছেন এই উইঙ্গার।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধেই ফাইনালে লড়বে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে শুরু হবে খেলা। দুই বছর আগে এই মাঠেই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছিল মেয়েরা।
ম্যাচের আগে গতবারের কথা মনে করিয়ে আজ নিজের ফেসবুক পেজে সানজিদা লিখেছেন, ‘২০২২ সালে ছাদখোলা বাসে উদযাপন করার এই দৃশ্য দেখাটা দেশবাসীর জন্য যেমন ছিল প্রথম, আমাদের জন্যও ছিল অসাধারণ এক অনুভূতি। আমাদের আবেগকে সম্মান দেখিয়ে রাতারাতি যে আয়োজন করা হয়েছিল, একই সাথে তপ্তরোদে দেশের ফুটবলপ্রেমী মানুষ রাস্তার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য আমাদের আন্দোলিত করেছে।’
এবারও একই স্মৃতি ধরে রাখার লক্ষ্য বাংলাদেশের, ‘আগেরবার যেটি ছিল প্রথমবার অর্জনের চেষ্টা, সেটিই এবার ধরে রাখার মিশন। দায়িত্ব বেড়েছে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের কাজই এটা। স্বাগতিক প্রতিপক্ষ, সেই প্রতিপক্ষের মাঠ, আবার সেই প্রতিপক্ষের চেনা দর্শকদের সামনে আমরা খেলতে যাচ্ছি। অবশ্যই সেটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। তবে আমরা সদা আত্মবিশ্বাসী ও দেশমাতৃকার নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
সানজিদা আরও একবার সাফ জিততে চাইছেন। ফেসবুকে সেই আশার কথা শুনিয়েছেন তিনি, ‘দেশের সংস্কার ও নতুন জাগ্রত কর্মকাণ্ডের প্রেরণা দিতে আমাদের ভালো করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ট্রফি ধরে রাখার মিশন ও দেশবাসীকে আরেকবার উদযাপনের উপলক্ষ্য দিতে আমরা এটি জিততে চাই। আর সেটি আমরা করে দেখাবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
সানজিদা আশার বাণী শোনালেও কাজটা সহজ হচ্ছে না। ফাইনালের মঞ্চে পা রাখতে দুই দলই সেরাটা দিয়েছে। অপরাজিত থেকেই উঠেছে ফাইনালে উঠেছে দুই দল। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল বাংলাদেশ ও নেপাল। এরপর বাকি পথে দেখিয়েছে দাপট। তবে এক জায়গায় নেপাল এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত গোল হজম করেছে ৪টি। তিন ম্যাচে নেপাল ১৭টি দিয়ে হজম করেছে ১টি।
ট্যাকটিক্যালি ও টেকনিক্যালি হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও নেপালকে ফেলে দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের দলে রয়েছেন এশিয়ার অন্যতম সেরা নারী ফুটবলার সাবিত্রা ভাণ্ডারি। এছাড়াও রক্ষণে আছেন প্রীতি রায়ের মতো ফুটবলার। নিজের দিনে একাই প্রতিপক্ষকে ছিটকে দিতে পারেন সাবিত্রা।
এদিকে বাংলাদেশের আক্রমণভাগেও আছেন তহুরার মতো ফুটবলার। চলতি আসরে পাঁচ গোল করেছেন তহুরা। রক্ষণ সামলে রাখছেন অভিজ্ঞ মাসুরা পারভিন, তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন নবাগত আফিদা খন্দকার। সব মিলিয়ে জমজমাট এক লড়াই হতে যাচ্ছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই।
দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত নেপালের সঙ্গে ১২ ম্যাচ খেলে একটি মাত্র জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। বিপরীতে ৬ হারের সঙ্গে আছে ৫টি ড্র। সর্বশেষ তিন ম্যাচেই ড্র করেছে বাংলাদেশ। আজ ড্রয়ের বৃত্ত থেকে বের হয়ে সাবিনার দল দ্বিতীয় শিরোপায় চুমো খায় নাকি নেপাল প্রথমবার উল্লাসে মাতে সেটাই দেখার।
ঢাকা/বিজয়