নাসুম কেন চুপ ছিলেন
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল ঘোষণার কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে কেবল। খানিক বাদেই বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট দেন। হাসির ইমোজির সঙ্গে জুড়ে দেন হাততালির ইমোজি। তাইজুলের সঙ্গে স্ট্যাটাসের মিছিলে আরও যোগ দেন এনামুল হক বিজয় ও শেখ মেহেদী হাসান।
মুখ ফুটে তারা কিছু বলেননি, তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দলে জায়গা না পেয়েই তারা এমন স্ট্যাটাস দিয়ে মনের ক্ষোভ ঝেড়েছেন কিংবা ক্রিকেট বোর্ডের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। অথচ ২০২৩ বিশ্বকাপে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কাছে শারীরিকভাবে নিগ্রহের শিকার হওয়ার পর গত এক বছর ধরে জাতীয় দলে ব্রাত্য ছিলেন নাসুম আহমেদ। ছিলেন না ‘এ’ দল, ইমার্জিং দল কিংবা হাইপারফরম্যান্স দলেও।
কিন্তু নাসুম ছিলেন একেবারে নিশ্চুপ। সামাজিক মাধ্যম দূরে থাক, কোনো সংবাদমাধ্যমেও দলে জায়গা না পাওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। উল্টো হাথুরুসিংহের প্রসঙ্গ এলে এড়িয়ে গেছেন। এই সময়টা ভীষণ কষ্টের গেলেও নাসুম নিরবে নিভৃতে তার কাজ করে গেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন, পারফর্ম করেছেন এবং ১ বছর পর ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে।
নাসুম কেন চুপ ছিলেন? এমন প্রশ্নে রাইজিংবিডিকে এই বাঁহাতি স্পিনার বলেন, ‘আমার কাজ করার দরকার সেটা আমি করেছি। আমার হাতে যেটা আছে আমি সেটা করতে পারবো। পরিশ্রম করা আমার হাতে আছে, সেটা আমি করে গেছি। অযথা কথা বলে তো লাভ নেই। আমি খেলার মধ্যে মনোযোগী ছিলাম।’
২০২৩ বিশ্বকাপের পরপরই নাসুম খেলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)। চারদিনের ম্যাচে পেয়েছেন ১০ উইকেট, ওয়ানডেতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট। ধারবাহিকতা ধরে রেখে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিয়েছেন ২৪ উইকেট, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ৮ উইকেট ও চলমান জাতীয় ক্রিকেট লিগে নেন ৩ ইনিংসে ৫ উইকেট।
নাসুম বলেন, ‘আমি খেলার মধ্যে ছিলাম, পারফর্ম করেছি, এগুলো আমার কাজ, আমি এগুলোই করেছি। এর বাইরে আমার কিছু করার নেই, আমি চেষ্টাও করিনি।’
নাসুম সবশেষ টি-টোয়েন্টি খেলছেন ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে। সবশেষ ওয়ানডে খেলেছেন বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, পুনেতে। এর আগে খেলেছেন এশিয়া কাপেও। বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান থাকা সত্ত্বেও টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন নিয়মিত মুখ। হঠাৎ করে নাসুমের কোথাও না থাকাটা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তবে প্রশ্ন তুলেননি নাসুম। আক্ষেপ ছিল? উত্তরে নাসুম বলেন, ‘আক্ষেপ তো থাকে, মানুষের আক্ষেপের কোনো শেষ নেই। আক্ষেপ থেকে লাভ নেই, যদি পেটে ক্ষুধা না থেকে।’
জাতীয় দল যখন ঘোষণা হয় তখন নাসুম বগুড়ায়, ব্যস্ত ছিলেন এনসিএলে। প্রথমে যেন তার বিশ্বাস হচ্ছিল না। রাতের মধ্যে তড়িঘড়ি করে ঢাকার পথ ধরেন। সিলেট থেকে আনান ক্রীড়াসামগ্রী। মাঝে ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ লিখে নিজের মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
কেমন লাগছে দলে ডাক পেয়ে? ‘কেমন লাগবে আর। আমি আমার পরিশ্রমের ফল পেয়েছি। এটা যাতে এখন ধরে রাখতে পারি, দলের নিয়মিত হতে পারি’-এভাবে বলছিলেন নাসুম।
বাঁহাতি স্পিনে সাকিবের বিকল্প হিসেবে দলে জায়গা পেয়েছেন নাসুম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার কাঁধে বড় দায়িত্ব। বছর ঘুরে দলে ফিরে নিজেকে এখন প্রমাণের পালা, নাসুম কি পারবেন? বলে দেবে সময়।
ঢাকা/রিয়াদ/বিজয়