ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৬ ১৪৩১

শারজায় জয় দেখল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:০২, ১০ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ০০:১২, ১০ নভেম্বর ২০২৪
শারজায় জয় দেখল বাংলাদেশ

হারলেই সিরিজ হাতছাড়া। সমীকরণ যখন এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছিল, দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গিয়েছিল…তখনই সেরা পারফরম্যান্স বেরিয়ে এলো। 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হতশ্রী পরাজয়ের পর নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল বাংলাদেশের। ২৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানে ম্যাচ হেরেছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কিছু করে দেখানোর জেদ নিশ্চিতভাবেই চেপে ধরেছিল। সেই জেদ থেকে আসল প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স। উচ্ছ্বসিত জয়। সঙ্গে শারজাতেও জয়ের খাতা খুলল বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে টিকে রইল বাংলাদেশ। ১৯৯০ সালে শারজা স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। এরপর আরো পাঁচ ওয়ানডে খেললেও কোনো জয় ছিল না। ৩৪ বছর পর শারজাতে আফগানিস্তানকে হারিয়ে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন:

এদিন আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৫২ রান করে। জবাব দিতে নেমে আফগানিস্তান ভালো অবস্থানে থাকার পরও ১৮৪ রানে গুটিয়ে যায়।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ইনিংসের শুরু ও শেষটা করেছে প্রায় একই ছন্দে। শুরুতে তানজিদ হাসান দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি বাউন্ডারিতে রান বাড়িয়েছেন। শেষ দিকে জাকের আলী ও নাসুম আহমেদের আক্রমণে রান হয়েছে তরতরিয়ে। শেষ ৬ ওভারে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬০ রান। শুরুর পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে রান ছিল ৫৯। 

অভিষিক্ত জাকের শেষ দিকে ২৭ বলে ৩৭ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ১ চার ও ৩ ছক্কায়। তিনটিই ছক্কা হাঁকিয়েছেন পেসার ফজল হক ফারুকিকে। অন্যদিকে নাসুম ২৪ বলে ২৫ রান করে দলের দাবি মিটিয়েছেন। এর আগে টপ অর্ডারে ভালো শুরুর পর পথ ভুলেছেন, তানজিদ (২২), সৌম্য (৩৫)। শান্ত দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন ৬ চার ও ১ ছক্কায়। তার ৬৩.৮৬ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসটি ছিল ১১৯ বলে। ধীর গতির এই ইনিংসের কারণেই বাংলাদেশের ইনিংসের মাঝপথে রান তোলা কঠিন হয়ে যায়। শান্তর মতো মিরাজও ভুগেছেন। ৩৩ বলে করেন ২২ রান। 

মিডল অর্ডারে হতাশ করেছেন তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাওহীদ ১৬ বলে ১১ ও মাহমুদউল্লাহ ৯ বলে ৩ রান করেন। শেষ চার ওয়ানডে ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ চরমভাবে হতাশ করছেন। যেখানে তার রান, ০, ১, ২ ও ৩। 

আফগানিস্তানের স্পিন চতুষ্টয় ৫০ ওভারের ৩৮ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন। সাত উইকেট তুলেছেন ১৪৪ রানের খরচায়। বাঁহাতি স্পিনার কারোটে তাদের মধ্যে সেরা। ২৮ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফার। 

ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ের জন্য শুরুতেই প্রয়োজন হয় উইকেটের। তাসকিন আহমেদ নিজের দ্বিতীয় ওভারে কাজটা করে দেন। রহমানউল্লাহ গুরবাজকে নিজের পছন্দের শিকার বানানো তাসকিন আরেকবার তার উইকেট পেয়েছেন। সুইং করা ডেলিভারীতে স্লিপে ক্যাচ গেন গুরবাজ। সেখান থেকে সাদিকুল্লাহ অটল ও রহমত শাহ দলকে টেনে নেন ৭০ রান পর্যন্ত। এ জুটি ভাঙতে উঠে পড়ে লাগা শান্ত স্পিনার নাসুমকে এনে সাফল্য পান। নাসুম নিজের প্রথম ডেলিভারী করেছিলেন অটলের লেগ সাইডে। সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে মিরাজের দৃষ্টিনন্দন ক্যাচে পরিণত হন অটল। 

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহীদি ও রহমত শাহ আবার জুটি গড়েন। আবারও বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায়। কিন্তু মোস্তাফিজ ব্রেক থ্রু দেওয়ার পর যা হলো তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। ৬ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। মোস্তাফিজের শর্ট বলে সীমানায় ক্যাচ দেন শাহীদি। এরপর নাসুম ফিরে এসে গোল্ডেন ডাক উপহার দেন আজমতউল্লাহকে। দুই বল পর গুলবাদিন নাইব ও রহমত শাহর ভুলবোঝাবুঝিতে ফিফটি পাওয়া রহমত শাহ সাজঘরে। 

দ্রুত ৩ উইকেট তুলে বাংলাদেশ দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে। বোলিংয়ে তাসকিন, শরিফুল সেই চাপ ধরে রাখেন। তাতে বল ও রানের ব্যবধান বাড়তে থাকে। নবী ও গুলবাদিন থিতু হওয়ার পর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা চালান। তাতে সফলতাও মেলে। কিন্তু বাড়তি ঝুঁকি নিতে গিয়ে উইকেট হারান। শরিফুলের পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার হাঁকানোর পর এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দেন গুলবাদিন (২৬)। সেখানে ভেঙে যায় তাদের ৪১ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ওভারে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে নবী প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। 

জোড়া সাফল্যে ম্যাচ আবারও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। শেষ দিকে নামা কারোটেকে টিকতে দেননি মিরাজ। স্ট্যাম্পড করে দ্রুত আউট করেন। কিন্তু আফগান তারকা রশিদ খান যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত ভয় ছিল। সেই ভয়-ও মোস্তাফিজ কাটিয়ে দেন। বাঁহাতি পেসারের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে রশিদ ক্যাচ দিলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। নাসুম পরের ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেন।

দলে ফিরে ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নাসুম সেরা বোলার হয়েছেন। ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ ও মোস্তাফিজ। শরিফুল ও তাসকিনের পকেটে গেছে ১টি করে উইকেট। 

বাংলাদেশের জয়ের নায়ক হয়েছেন অধিনায়ক শান্ত। ব্যাটিংয়ে তার ৭৬ রানের অবদানে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ৪৭ ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ম্যাচ সেরা হলেন তিনি। 

সিরিজে এখন ১-১ সমতা। ১১ নভেম্বর হবে সিরিজের ফয়সালা। দুই দল একটি করে জয় পাওয়ায় শেষ ম্যাচটায় বাড়তি উত্তাপ ছড়াবে তা বোঝাই যাচ্ছে। 

ঢাকা/ইয়াসিন 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়